ঢাকা থেকে চীনের দুটি শহরে এই প্রথম বিমানের ফ্লাইট চালু

কামরান রেজা চৌধুরী
2022.07.26
ঢাকা
ঢাকা থেকে চীনের দুটি শহরে এই প্রথম বিমানের ফ্লাইট চালু ঢাকার হযরত শাহ্‌জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দররে নিজস্ব উড়োজাহাজের সামনে ব্যস্ত বাংলাদেশ বিমানের তিন কর্মী। ১৯ জুলাই ২০২২
শরীফ খিয়াম/বেনারনিউজ

দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চীনের কোনও শহরে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ সেবা চালু করতে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস।

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও যাহিদ হোসেন মঙ্গলবার বেনারকে বলেন, সুনির্দিষ্ট তারিখ ঠিক না হলেও খুব সহসাই ঢাকা থেকে চীনের গুয়াংজু এবং কুনমিং শহরে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করবে বিমান।

গত সোমবার ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এক পোস্টের মাধ্যমে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ বিমানকে ঢাকা-গুয়াংজু এবং ঢাকা-কুনমিং শহরের মধ্যে ফ্লাইট পরিচালনা করতে সম্প্রতি অনুমতি প্রদান করেছে চীনের বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।

চালু হলে বেসরকারি কোম্পানি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের পর বিমানই হবে ঢাকা থেকে সরাসরি চীনা কোনও শহরে ফ্লাইট পরিচালনা করা দ্বিতীয় অপারেটর।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান সময়ে এবং যে পদ্ধতিতে বিমান যাত্রীবাহী সেবা চালু করতে যাচ্ছে, সেটি অর্থনৈতিক দিক থেকে লাভজনক হবে না এবং সংস্থাটি লোকসানের মুখে পড়তে পারে।

বিমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, এর আগে বিমান চীনে কখনও যাত্রীবাহী বিমান পরিচালনা করেনি। চীনা কর্তৃপক্ষ আমাদের ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে। তবে আমরা এখনও তাদের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাইনি।”

তিনি বলেন, “ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বিমান প্রস্তুত আছে। চিঠি পেলেই তাদের সাথে আলোচনা করে ফ্লাইট শুরুর তারিখ ও সময়সূচী ঠিক করা হবে।”

যাহিদ হোসেন বলেন, “এই রুট দুটিতে বড় উড়োজাহাজ পরিচালনা করা হবে। এই রুটে কার্গোও আসবে। আমরা মনে করি বিমানের এসব রুট লাভজনক হবে।”

চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক দেশ। চীন থেকে বাংলাদেশের প্রায় সকল শিল্পকারখানার কাঁচামাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরণের তৈরি পণ্য আমদানি হয়। সেকারণে প্রতি বছরই হাজার হাজার ব্যবসায়ী চীনের বিভিন্ন শহর ভ্রমণ করে থাকেন।

তবে দুই দেশের মধ্যে এতোদিন সরাসরি বিমান সেবা ছিল না।

২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশি বেসরকারি কোম্পানি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ঢাকা-গুয়াংজু সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে। মঙ্গলবার বেনারকে এ কথা জানান ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ)কামরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, করোনা মহামারির আগে সপ্তাহে সাত দিনই ঢাকা-গুয়াংজু সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করতো ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। এই রুট খুবই লাভজনক ছিল। বর্তমানে ঢাকা ও গুয়াংজুর মধ্যে সপ্তাহে একটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স।

এ ছাড়াও, চীনা কোম্পানি চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্স ঢাকা থেকে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। গুয়াংজু থেকে পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও বিভিন্ন দেশে যাত্রী পরিবহন করে থাকে চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্স।

ভিভিড হলিডে ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর এর স্বত্ত্বাধিকারী কামরুল ইসলাম মঙ্গলবার বেনারকে বলেন, “বর্তমানে ঢাকা-গুয়াংজু রুটে টিকেটের চাহিদা ব্যাপক। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করলেও আমরা ট্রাভেল এজেন্টরা টিকিট বিক্রি করতে পারি না। এই টিকেট বিক্রির পুরো বিষয়টি ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাস থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। মূলত চীনা নাগরিকদের চলাচলের জন্য এই রুটের টিকেট নিয়ন্ত্রণ করে দূতাবাস।”

তিনি বলেন, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা নিয়মিত চীনে যাতায়াত করেন। আবার বাংলাদেশ থেকে প্রচুর সংখ্যক শিক্ষার্থী চীনের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করেন। এদের অনেকেই বৃত্তি নিয়ে লেখাপড়া করতে যান।

এছাড়া বাংলাদেশ থেকে চীনে পর্যটক যাওয়ার সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে বলেও জানান কামরুল ইসলাম।

‘লোকসানে পড়বে বিমান’

এভিয়েশন বিষয়ক একটি ম্যাগাজিনের সম্পাদক ওয়াহিদুল ইসলাম মঙ্গলবার বেনারকে বলেন, চীনারা তাদের বিভিন্ন শহরকে বিমান চলাচলের হাব করতে চাচ্ছে। সেকারণে তারা ঢাকা থেকে গুয়াংজু এবং কুনমিংয়ের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করতে আগ্রহী।

তিনি বলেন, “ঢাকা থেকে যাঁরা চীনের বিভিন্ন শহর, হংকং, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণ করবেন তাঁদের জন্য ব্যাংকক, কুয়ালালামপুর এবং সিঙ্গাপুর ছাড়া আর কোনও বিমানবন্দর ব্যবহার করার সুযোগ নেই। তবে ঢাকা থেকে গুয়াংজু এবং কুনমিং ফ্লাইট চালু হলে বাংলাদেশি যাত্রীরা আরেকটি রুট হয়ে ভ্রমণ করতে পারবেন।”

ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, “প্রকৃত অর্থে চীনা বিমান অপারেটররা বাংলাদেশের যাত্রীদের চীন হয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে পরিবহন করতে চায়। এতে তাদের ব্যবসা বৃদ্ধি পাবে।”

তিনি বলেন, “বিমান বলছে, তারা ঢাকা-গুয়াংজু ও ঢাকা-কুনমিং রুটে তিনশ’র বেশি আসন বিশিষ্ট বোয়িং ৭৭৭ ফ্লাইট পরিচালনা করবে। কিন্তু এই বিষয়টি মনে রাখা দরকার যে, ইউএস-বাংলা এবং চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্স ১৭০ সিটের উড়োজাহাজ চালায়। বিমান কীভাবে এই রুটে এতো যাত্রী পাবে তা আমি বুঝতে পারছি না।”

ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, “বর্তমানে চীন বাংলাদেশ থেকে কোন যাত্রীকে ভিসা দিচ্ছে না। ভিসা না দিলে যাত্রী আসবে কোথা থেকে? ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে কার জন্য? সুতরাং এই সেবা চালুর জন্য এই সময়টি ঠিক না।”

তিনি বলেন, “ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স এবং বিমান উভয়ই এক গন্তব্য থেকে অন্য গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। শুধু এভাবে যাত্রী পরিবহন করে এই রুটকে লাভজনক করা যাবে না।“

ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, “রুট লাভজনক করতে ঢাকা থেকে গুয়াংজু হয়ে চীনের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন শহর ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের যাত্রীদের বহন করতে হবে। এজন্য অন্যান্য অপারেটরদের সাথে বিশেষ চুক্তি করতে হবে। তবে এধরণের চুক্তি করতে বিমানের কোন আগ্রহ দেখছি না। সুতরাং, কিছুদিন পর বিমান হয়তো লোকসান দিয়ে এই রুটে সেবা বন্ধ করে দেবে।“

তিনি বলেন, “তবে হ্যাঁ, বিমান কিছু কার্গো পরিবহন করবে। সেখান থেকে কিছু ব্যবসা হবে। এর বাইরে কিছু হবে না।“

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।