অভিজিৎ হত্যায় ছয় জঙ্গির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ

কামরান রেজা চৌধুরী
2019.04.11
ঢাকা
190411_Avijit_Roy_1000.jpg অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত শফিউর রহমান ফারাবিকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। ৩ মার্চ ২০১৫।
[এপি]

হত্যাকাণ্ডের চার বছরের বেশি সময় পর বৃহস্পতিবার ব্লগার ও প্রগতিশীল লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় জঙ্গি সংগঠন আনসার-আল-ইসলামের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছে ঢাকার সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনাল।

বিচারক মুজিবুর রহমান ওই ছয় জঙ্গির মধ্যে পলাতক দুজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন বলে বেনারকে জানিয়েছেন সন্ত্রাস বিরোধী আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

তিনি বলেন, ৩০ এপ্রিল শুনানির পর ওই ছয় জঙ্গির বিরুদ্ধে চার্য গঠন হবে। আর এর মাধ্যমেই অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের বিচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আদালত আজ শুনানি শেষে অভিজিৎ হত্যা মামলাটি আমলে নিয়েছে। এর অর্থ হলো অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের ওপর পুলিশের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেছে।”

“আদালত পলাতক দুই আসামি মেজর জিয়াউল হক এবং আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে,” জানিয়ে তিনি বলেন, "চার্জ গঠন হলেই বলা যাবে যে অভিজিৎ হত্যার বিচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো।"

এ প্রসঙ্গে “দেরিতে হলেও যে বিচারিক প্রক্রিয়া চলছে এটি একটি ভালো দিক” বলে বেনাররের কাছে মন্তব্য করেন অভিজিৎ রায়ের বাবা অধ্যাপক অজয় রায়।

২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি একুশে বইমেলা থেকের ফেরার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরের কাছে প্রগতিশীল লেখক অভিজিৎ রায়কে জঙ্গিরা কুপিয়ে হত্যা করে। একই হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হন অভিজিতের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও।

পুলিশের মতে, হামলাকারীরা আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামে পরিচিত আনসার আল ইসলামের সদস্য।

দীর্ঘ তদন্তের পর গত ১৫ মার্চ অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের ওপর পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেন কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।

ওই তদন্ত প্রতিবেদনে জীবিত ছয় জঙ্গির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। এবং প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত আরও ১৫ জনকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করা হয়।

যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ

যাদের বিরুদ্ধে আদালত অভিযোগ গ্রহণ করেছে, তাঁরা হলেন: মোজাম্মেল হোসেন ওরফে সায়মন, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ, আরাফাত রহমান সিয়াম ওরফে সাজ্জাদ, আকরাম হোসেন আবির ওরফে আদনান, শফিউর রহমান ফারাবি এবং চাকুরিচ্যুত মেজর মোহাম্মদ জিয়াউল হক।

এদের মধ্যে জিয়াউল হক ও আকরাম হোসেন ছাড়া বাকি চারজন কারাগারে রয়েছেন।

এই মামলায় অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাসহ ৩৪ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

এদিকে হত্যাকণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় সাতজন, ইতিমধ্যে মারা যাবার কারণে তিনজন ও নাম-ঠিকান না পাওয়ার কারণে পাঁচজনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

হত্যাকাণ্ডের সাথে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি তাঁরা হলেন: সাদেক আলী ওরফে মিঠু, মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান, আমিনুল মল্লিক, জাফরান হাসান, জুলহাস বিশ্বাস, আব্দুর সবুর ওরফে রাজু সাদ ও মাইনুল হাসান শামীম।

বাকিদের মধ্যে মান্না ইয়াহিয়া ওরফে মান্নান রাহি ও আবুল বাশার চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা গেছেন এবং মকুল রানা খিলগাঁও এলাকায় পুলিশের সাথে ‘বন্ধুকযুদ্ধে’ মারা যান।

এছাড়া নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় অভিযোগ থেকে বাদ দেওয়া পাঁচজন হলেন, সেলিম, হাসান, আলী ওরফে খলিল, অনিক ও অন্তু।

ফারাবির খালাস, আপিল করবে রাষ্ট্রপক্ষ

বৃহস্পতিবার সন্ত্রাস বিরোধী আদালত যাদের বিরুদ্ধে চার্জ গ্রহণ করেছে শফিউর রহমান ফারাবি তাঁদের একজন।

হত্যাকাণ্ডের আগে ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে ইসলামকে অবমাননার জন্য কয়েক দফা অভিজিৎকে হত্যার হুমকি দেন ফারাবি।

সে কারণে অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড ছাড়াও সাইবার অপরাধের মামলা হয় ফারাবির বিরুদ্ধে।

তবে বুধবার ঢাকার সাইবার আদালত ফারাবিকে বেকসুর খালাস দেয়।

ওই সাইবার আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম শামীম বেনারকে বলেন, ফারাবিকে খালাস দেয়ার আগে আদালত বলেছে রাষ্ট্রপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

তিনি বলেন, “আমরা এখনো জানি না কোন কারণে আদালত ফারাবিকে খালাস দিলো। মামলার পূর্ণ রায় এখনো প্রকাশিত হয়নি। মামলার রায় প্রকাশিত হওয়ার পর আমরা যত দ্রুত সম্ভব এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।