দুই বছরেও বিচার হয়নি ব্লগার নীলাদ্রি হত্যার
2017.08.07
ঢাকা

দুই বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও ঢাকায় নিজ বাসায় জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের হাতে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় (নিলয় নীল) হত্যার বিচার হয়নি। পুলিশ এখনো তদন্ত শেষ করতে পারেনি।
এদিকে হত্যার বিচারের দাবিতে সোমবার নীলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সাজ্জাদ সাজু জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনশনের চেষ্টা করলে শাহবাগ পুলিশ তাকে উঠিয়ে দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নীলের সহধর্মিণী আশা মণি সোমবার বেনারকে বলেন, “দুই বছর হয়ে গেল পুলিশ এখনো চার্জশিট জমা দেয়নি। আমাদের সঙ্গে আর যোগাযোগও করে না। এখন পুরো বিষয়টি প্রশাসনের হাতে। আমাদের কিছু করার নেই। আমরা খুবই মর্মাহত”।
তবে নীল হত্যাকাণ্ডের তদন্তকারী কর্মকর্তা বাহাউদ্দীন ফারুকী বেনারকে বলেন, “খুব শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব।”
“সে আর ফিরে আসবে না সত্য। তবে হত্যাকারীদের যদি বিচার হতো তাহলে আমরা কিছুটা হলেও শান্তি পেতাম। আমরা আশায় আছি, হয়ত কোনো দিন আমরা বিচার পাব,” বলেন আশা মণি।
২০১৫ সালে জঙ্গি গোষ্ঠীর হাতে ব্লগার হত্যা শুরু হওয়ার পর নীল ছিলেন জঙ্গিদের চতুর্থ শিকার। তিনি ইস্টিশন নামক একটি ব্লগে লিখতেন।
২০১৫ সালের সাত আগস্ট দুপুরে পাঁচ-ছয় জঙ্গি বাসা ভাড়া নেওয়ার কথা বলে তার গোড়ানের বাসায় প্রবেশ করে আশা মণিকে পাশের ঘরে আটকে রেখে নীলাদ্রি নীলকে জবাই করে পালিয়ে যায়।
আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট নীল হত্যার দায় স্বীকার করলেও সরকার সেই দাবি অস্বীকার করে। পুলিশ বলছে দেশীয় জঙ্গি গোষ্ঠী আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
এদিকে এবিটির এক শীর্ষ জঙ্গিকে গ্রেফতারের জন্য সোমবার উত্তর প্রদেশে ব্যাপক অভিযানে নেমেছে ভারতীয় পুলিশ।
নীলের বন্ধুর অনশনে বাধা
নীল হত্যার বিচারের দাবিতে তার বন্ধু সাজু সোমবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ব্যানারসহ প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাথে অবস্থান নেন। তিনি ব্যানার লাগানোর কিছুক্ষণ পর কয়েকজন পুলিশ এসে সেই ব্যানার সরিয়ে নিয়ে তাকে চলে যেতে বলে।
“আমি তাদের বলি যে আমি এখানে শান্তিপূর্ণভাবে দিনব্যাপী অনশন করব। কিন্তু পুলিশ আমাকে বাধা দিয়ে বলে, আজ এখানে কোনো অনশন করতে বসা যাবে না। আমি বলি আমি এখানে শুয়ে থাকব। এরপর পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করার কথা বলে,” বেনারকে বলেন সাজু।
তিনি বলেন, বন্ধুদের পরামর্শে তিনি পুলিশের সঙ্গে বাড়াবাড়ি না করে সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে শাহবাগে চলে আসেন।
শাহবাগ থানার একজন কর্মকর্তা বেনারকে বলেন, কেবিনেট সভা চলাকালীন সচিবালয় ও এর আশপাশের এলাকায় কোনো প্রকার মিটিং, মিছিল, সমাবেশ, অনশন করা নিষিদ্ধ।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের পাশেই বাংলাদেশ সচিবালয় অবস্থিত। প্রতি সোমবার সেখানে মন্ত্রী সভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
‘মুক্তচিন্তা ও ন্যায় বিচারের পক্ষে জনতা’ ব্যানারে সাজু ও তার বন্ধুরা সোমবার বিকেলে একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে।
“জানি না আর কত দিন এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আমাদের,” বলেন সাজু।
তিনি বলেন, “আমরা সন্ধ্যায় মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদ মিছিল করেছি।”
“একের পর এক ব্লগারকে হত্যা করা হলো। কিন্তু সরকার এই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে আন্তরিক নয়। এভাবে চলতে থাকলে দেশে মুক্তচিন্তা আর থাকবে না,” প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেওয়া তিতুমীর কলেজের ছাত্র রুহুল আমিন বেনারকে বলেন।
শিগগিরই চার্জশিট?
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাহাউদ্দীন ফারুকী বেনারকে বলেন, “আমি চাই যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত প্রতিবেদন দিতে; কাজ ও মোটামুটি এগিয়েছে। সরকারের ওপর থেকেও তদন্ত দ্রুত শেষ করার চাপ আছে। আমার আরেকটু সময় প্রয়োজন। বোঝেন তো, এটি জঙ্গি হামলার মামলা।”
তবে তিনি কবে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কোনো তারিখ জানাননি। ফারুকী বলেন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা নীলকে হত্যা করেছে।
“আমরা এ পর্যন্ত আটজনকে গ্রেপ্তার করেছি। তাদের মধ্যে একজন হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক দিয়েছে। আর বাকিদের অনেকেরই জড়িত থাকার প্রমাণ আছে; তাদের সমর্থন ছিল,” তিন বলেন।
হত্যাকাণ্ডে আইএস জঙ্গিগোষ্ঠীর দায় স্বীকারের ব্যাপারে তার তদন্তে কিছু মিলেছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “দেখুন, আমরা বাংলাদেশে কোনো ফোন তৈরি করে যদি অ্যাপল নাম দিই তাহলে কি সেই ফোন অরিজিনাল অ্যাপল হবে?”
এক শীর্ষ এবিটি জঙ্গির খোঁজে ভারতীয় পুলিশ
মোহাম্মদ ফাইজান নামে বাংলাদেশি নাগরিক ও আনসারউল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) এর এক শীর্ষ জঙ্গিকে ধরার জন্য সোমবার উত্তর প্রদেশে ব্যাপক অভিযানে নেমেছে ভারতীয় পুলিশ। গত রোববার রাজ্যের মুজাফ্ফরাবাদ থেকে গ্রেফতার আরেক বাংলাদেশি জঙ্গি আব্দুল্লাহ আল মামুন এর কাছ থেকে পুলিশ ফাইজান সম্পর্কে জানতে পারে।
মামুন ২০১১ সাল থেকে উত্তর প্রদেশে বসবাস করছে। সে এবিটির সদস্য সংগ্রহের সাথে যুক্ত বলে জানিয়েছে ভারতের পুলিশ।
“জিজ্ঞাসাবাদে ফাইজানসহ অনেক সহযোগির কথা জানিয়েছে আব্দুল্লাহ। আমরা উত্তর প্রদেশে তাঁকে (ফাইজান) ধরার জন্য সম্ভাব্য গোপন আস্তানাগুলোতে ইতিমধ্যেই অভিযান শুরু করেছি। খুব শিগগিরই তাকে গ্রেফতার করা হবে,” বেনারকে বলেন উত্তর প্রদেশের অ্যান্টি টেররিজম স্কোয়াডের সিনিয়র পুলিশ সুপার উমেশ কুমার।
ফাইজান সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “সে ময়মনসিংহের তারাকান্দার লোক এবং গত আট বছর ধরে সে ভারতে আছে।”
প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন ঢাকা থেকে প্রাপ্তি রহমান ও নয়াদিল্লি থেকে আকাশ বশিষ্ঠ।