প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনী নোটিশ: ক্ষুব্ধ ক্ষমতাসীনেরা
2017.12.21
ঢাকা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রধান বিরোধীদল বিএনপির আইনি নোটিশ পাঠানোর একদিন পর বৃহস্পতিবার ক্ষমতাসীন দলের নেতারা রাস্তায় মানববন্ধন করেছেন। তাঁরা বলেছেন, আইনি নোটিশ প্রত্যাহার না করলে বিএনপির বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
অন্যদিকে বিএনপি বলেছে, প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির যে অভিযোগ এনেছেন, তা অসত্য। সুতরাং তাঁকে ছাড় দেওয়া হবে না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিএনপির আইনি নোটিশ পাঠানোর কারণ হলো এরপর শেখ হাসিনা হয়ত এ ব্যাপারে আর কথা বলবেন না। বিএনপি এমনও মনে করতে পারে, প্রতিবাদ না করলে ক্ষমতাসীন দল খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনতেই থাকবে, যা আগামী আগামী নির্বাচনে ভোটের ওপর প্রভাব ফেলবে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন স্বাধীনতা পরিষদ আয়োজিত এক মানববন্ধনে সাবেক পরিবেশমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের প্রচার সম্পাদক হাসান মাহমুদ বলেন, “যদি এই লিগ্যাল নোটিশ প্রত্যাহার করা না হয়, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে সরকার কী ধরনের ‘কঠোর ব্যবস্থা’ নেবে সে ব্যাপারে তিনি কিছু বলেননি।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বেনারকে বলেন, “আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলেছি এই আইনি নোটিশ প্রত্যাহার করতে হবে। না করলে তার পরিণতি হবে কঠোর। একই সঙ্গে আমরা আইনি লড়াই আইনি পদ্ধতির মাধ্যমে চালিয়ে যেতে চাই।”
গতকাল বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিকভাবে নোটিশটি প্রত্যাহারের আহ্বান জানায়।
“বিএনপি কেন ছেড়ে দেবে? প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ উত্থাপনের সময় দুর্নীতির কোনো প্রমাণ দেখাননি। তাই আমরা লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছি,” বেনারকে বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জেনারেল মাহবুবুর রহমান।
তিনি বলেন, “আমরা জানি এই আইনি নোটিশের মাধ্যমে কিছুই হয়ত হবে না। কিন্তু প্রতিবাদ তো করতে হবে? নির্বাচনের আগে এমন অভিযোগ বিএনপির গ্রহণযোগ্যতাকে ম্লান করতে পারে।”
অন্যদিকে হাসান মাহমুদ বেনারকে বলেন, “আমরা এখনো লিগ্যাল নোটিশটি পাইনি। হাতে পাওয়ার পর আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।”
৭ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা সৌদি আরবের শপিং মলে বিনিয়োগ করেছেন। ক্ষমতায় থাকার সময় অনেক ব্রিফকেস ভরে টাকা সৌদি আরবে নিয়ে গেছেন বলে সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে।
কী বলা হয়েছে নোটিশে?
বিএনপির আইনি নোটিশে বলা হয়েছে, আপনার (প্রধানমন্ত্রী) বেপরোয়া ও বিদ্বেষপূর্ণ কটূক্তি একাধারে পরনিন্দা, অপবাদপূর্ণ ও মানহানিকর, যা খালেদা জিয়ার সর্বোচ্চ সুনাম, সম্মান, সততা ও মর্যাদাকে বিনষ্ট করার এবং দেশে ও বিদেশে তাঁকে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে খাটো করার হীন উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। এই মানহানিকর বিবৃতির কারণে খালেদা জিয়ার অপূরণীয় লোকসান ও ক্ষতি হয়েছে, যার জন্য আইনত আপনি দায়ী।
এই লিগ্যাল নোটিশের মাধ্যমে আমরা আপনাকে বেগম খালেদা জিয়ার নিকট নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করার আহ্বান জানাচ্ছি এবং উক্ত ক্ষমা অত্র আইনি নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে সব জাতীয় দৈনিকের প্রথম পৃষ্ঠায়, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, অনলাইন সংবাদপত্র এবং সামাজিক মাধ্যমে আউটলেটে যথাযথভাবে প্রকাশ ও প্রচার করার আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় বিদ্বেষপূর্ণ, মানহানিকর এবং কপট ও কুটিল বিবৃতির কারণে আপনার বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমাদের উপরে নির্দেশ রয়েছে।
বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সাংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আইনি নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি জানান। নোটিশ পাঠিয়েছেন সাবেক সংসদ-সদস্য ও আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন।
এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রফেসর ড. নিজাম উদ্দীন আহমেদ বেনারকে বলেন, “এইবার প্রথমবারের মতো কোনো প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিরোধী দল মানহানির অভিযোগ এনে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছে। আর এই বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “বিএনপির নোটিশ পাঠানোর পেছনের কারণ হলো খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চলা একটি দুর্নীতির মামলার কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে। সুতরাং শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। নোটিশ দেওয়ার ব্যাপারে বিএনপির আরেকটি কৌশলও থাকতে পারে। তা হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হয়ত খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আর কোনো কথা বলবেন না।”