যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা চুক্তি: আলোচনা চালিয়ে যেতে চায় দুই দেশ
2019.12.04
ঢাকা

যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ অত্যাধুনিক অস্ত্র কিনতে চাইলেও এ বিষয়ে প্রতিরক্ষা চুক্তি সই করতে আরো আলোচনা চালিয়ে যেতে চায় দুই দেশ।
দুদিনের ঢাকা সফর শেষে বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় নিরাপত্তাবিষয়ক সহকারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী র্যান্ডল শ্রাইভার।
একই সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি (আইপিএস) উদ্যোগ কোনোভাবেই চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) উদ্যোগের সাথে সাংঘর্ষিক নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের চলমান আলোচিত দুটি চুক্তি হচ্ছে অস্ত্র কেনাকাটা বিষয়ক ‘অ্যাকুজেশন অ্যান্ড ক্রস-সার্ভিসিং অ্যাগ্রিমেন্ট (আকসা)’ এবং অস্ত্র সংক্রান্ত গোপন তথ্য বিনিময় ও সুরক্ষা বিষয়ক ‘জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্ট (জিসোমিয়া)।’
আকসা ও জিসোমিয়া স্বাক্ষরের জন্য অনেকগুলো কৌশলগত ও কারিগরি দিক সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করতে হয় জানিয়ে র্যান্ডল বলেন, “সে বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা চলমান থাকবে। সব প্রক্রিয়া শেষে চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।”
চুক্তি সইয়ের কোনো সময়সীমা উল্লেখ না করে তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র যথাযথ প্রক্রিয়ায় এবং সঠিক উপায়ে চুক্তি করতে আগ্রহী।”
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে উন্নত প্রযুক্তির অত্যাধুনিক অ্যাপাচে কমব্যাট হেলিকপ্টার, জঙ্গি বিমান এবং ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা কেনার আগ্রহ দেখিয়েছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, উন্নত প্রযুক্তির সমরাস্ত্র বিক্রির আগে সংশ্লিষ্ট দেশটির সাথে জিসোমিয়া সই করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
বর্তমানে চীন বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সামরিক সরঞ্জামাদির প্রধান সরবরাহকারী দেশ। স্বাধীনতার পরে এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে উন্নতমানের সামরিক সরঞ্জামাদি কিনতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
এ বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমডোর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী বেনারকে বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আমাদের সামরিক সম্পর্ক আশির দশক থেকেই। প্রথমে কিছুটা আক্রমণাত্মক যুদ্ধাস্ত্র বিক্রির বিষয়ে তাদের নিষেধাজ্ঞা ছিল।”
“বাংলাদেশ এখন স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক দেশ, ফলে অস্ত্র বিক্রির সেই নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এটা ইতিবাচক,” বলেন তিনি।
“এর মাধ্যমে কেবলমাত্র চীনের মুখাপেক্ষী না হয়ে আমরা পশ্চিমাদের দিকে যাচ্ছি,” মন্তব্য করে এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন “এর ফলে চীনের সাথে সম্পর্কে প্রভাব পড়ার কথা নয়।”
“স্বাধীন দেশ হিসেবে আমাদের মাল্টিপল অপশনস্ থাকা উচিত,” যোগ করেন তিনি।
আকসা ও জিসোমিয়া প্রতিরক্ষা চুক্তি
মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো ঢাকায় এসে প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দকী, সেনা প্রধান জেনারেল আবদুল আজিজ আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন এই মার্কিন সহকারী প্রতিরক্ষা মন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, দু পক্ষের আলোচনায় আকসা এবং জিসোমিয়াসহ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং এই আলোচনা চলমান রাখতে উভয় পক্ষই সম্মত রয়েছে।
জিসমিয়া এবং আকসা চুক্তিকে আমরা প্রতিরক্ষা চুক্তির ভিত্তি হিসেবে গণ্য করি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এগুলো সর্বব্যাপী সাধারণ চুক্তি যার মাধ্যমে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার পরিধি, অধিক তথ্য আদান-প্রদান, সংবেদনশীল প্রযুক্তি ও সামর্থ্য অর্জনের পথ উন্মুক্ত হবে।”
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এ বছরের ১৩ এপ্রিল ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে আকসার প্রসঙ্গটি তুলেছেন। পরে ঢাকায় গত ২ মে অনুষ্ঠিত নিরাপত্তা সংলাপে আকসা ও জিসোমিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এই চুক্তি দুটি সই করার ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে গত অক্টোবরে ওয়াশিংটন সফর করেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক। এরপরেই ঢাকায় এলেন র্যান্ডল শ্রাইভার।
আগামী বছরের শুরুতে বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের নিয়ে গড়া একটি প্রতিনিধি দল এ নিয়ে কথা বলতে ওয়াশিংটন যাবে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিআরআই’র সাথে সাংঘর্ষিক নয়
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি (আইপিএস) উদ্যোগ কোনোভাবেই চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) উদ্যোগের পাল্টা নয় বলে মন্তব্য করেন র্যান্ডল শ্রাইভার।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমাদের প্রতিপক্ষের অনেকেই আইপিএসকে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এর পাল্টা জবাব কিংবা চীনবিরোধী একটি উদ্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।”
“আমি সুস্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, আইপিএস একটি ইতিবাচক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কৌশল যার লক্ষ্য এ অঞ্চলের সব রাষ্ট্রের জন্য নিরাপত্তা, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে বিধিবিধান ভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে সুরক্ষিত রাখা। এর মধ্যে চীনও অন্তর্ভুক্ত,” বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আইপিএস এর মনোযোগের কেন্দ্র তিনটি: অর্থনীতি, সুশাসন ও নিরাপত্তা।
মার্কিন সহকারী প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, “আইপিএস-এর অর্থনৈতিক স্তম্ভের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে বেসরকারি বিনিয়োগের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। সুনির্দিষ্ট করে বললে, ডিজিটাল অর্থনীতি, অবকাঠামো ও জ্বালানি খাতে।”