অবশেষে শেলা নদীতে নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা
2016.03.23

বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের শেলা নদীতে প্রথমে তেলবাহী ট্যাংকার ও পরে কয়লাবাহী জাহাজ ডুবে যাওয়ার ঘটনায় সরকার ওই নদীতে স্থায়ীভাবে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে। চট্টগ্রাম ও বিদেশি বন্দর থেকে আসা জাহাজগুলোকে বিকল্পপথে মংলা-ঘষিয়াখালি খাল দিয়ে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
গত ১৯ মার্চ সুন্দরবনের শেলা নদীতে ১ হাজার ২৩৫ টন কয়লা নিয়ে সি হর্স-১ নামে একটি কোস্টার ডুবে যায়। তার আগে ২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ওই নদীতে ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ নামে একটি তেলবাহী ট্যাংকার ডুবলে দেশে–বিদেশে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক হই চই হয়।
অবশ্য গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠন এবং রাজনৈতিক দল সুন্দরবনের এই নৌপথে বাণিজ্যিক নৌ চলাচল বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছে। ওই পথে জাহাজডুবির বেশ কয়েকটি দৃষ্টান্ত রয়েছে।
“এরপর শেলা নদী দিয়ে আর কোনো জাহাজ চলাচল করবে না মর্মে আমরা সিদ্ধান্ত দিয়েছি,” সাংবাদিকদের জানান নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। বুধবার সচিবালয়ে নদী রক্ষা সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।
পরিবেশবাদীরা বলছেন, সুন্দরবনের ভেতরে শ্যালা নদীর বিকল্প নৌপথ থাকলেও সেটি চালু করা যাচ্ছে না। ওই বিকল্প পথ হচ্ছে মংলা-ঘষিয়াখালি খাল।
১২ ফুটের বেশি গভীরতার জাহাজগুলো ঘসিয়াখালি খাল দিয়ে চলাচল করতে পারে না। তাই সেগুলো শ্যালা নদী দিয়ে চলাচল করে বলে এত দিন ব্যাখ্যা দিয়ে আসছিল অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ।
এর সমাধান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নৌপরিবহন সচিব অশোক মাধব রায় সাংবাদিকদের বলেন, “জাহাজে পণ্যের পরিমাণ কমালেই তা ১২ ফুট গভীরতার মধ্যে চলতে পারবে। ফলে আশা করি এগুলো নিয়ে কোন সমস্যা হবে না।”
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, মংলা-ঘষিয়াখালীর দু’ধারের এক হাজার ৮২টি বাঁধ দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে সহস্রাধিক চিংড়ি ঘের। রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় স্থানীয় প্রভাবশালীদের গড়ে তোলা এসব অবৈধ বাঁধ ও চিংড়ি ঘেরের কারণে ওই খালের পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ওই খাল অবমুক্ত করার দাবি থাকলেও সরকার বা প্রশাসন তা করতে পারেনি।
“এই মুহূর্তে সুন্দরবনের রক্ষাকবচ মংলা-ঘষিয়াখালি চ্যানেল। এই নৌপথ স্থায়ীভাবে সচলকরণে বাধা সৃষ্টিকারীরা যতই প্রভাবশালী হোক, তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে,” জানান পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক।
নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, বারবার জাহাজডুবির ঘটনায় পরিবেশগত কিছু হুমকি দেখা দিয়েছে, এতে অনেকেই উদ্বিগ্ন।
“সরকারি খালে শত শত অবৈধ বাঁধ দিয়ে গড়ে তোলা চিংড়িঘেরের মালিকেরা কী এতই প্রভাবশালী যে, তাদের উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না?,” প্রশ্ন রাখেন গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা হাসান তারিক চৌধুরী।
তিনি বলেন, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এই রুট নিয়ে ঢাক ঢাক গুড়গুড় মনোভাব চলছিল।
বুধবার পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের শ্যালা নদীতে কয়লাবোঝাই জাহাজডুবির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি শ্যালা নদী দিয়ে স্থায়ী ভাবে নৌযান চলাচল বন্ধের সুপারিশ করে। এর আগে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকেও নৌযান চলাচল বন্ধের সুপারিশ করেছিল।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে জয়মনিরগোল এলাকায় সাড়ে তিন লাখ লিটার ফার্নেস তেলবাহী একটি জাহাজ ডুবে তা সুন্দরবনের ৩০০ কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে যায়। এতে বনে দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করেন বিশেষজ্ঞরা।
পরবর্তীতে বনের ওই একই এলাকায় দুইটি কয়লা ও একটি ছাইবাহী জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ গত শনিবার একটি কয়লাবাহী জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটে।
“দুর্ঘটনার প্রাথমিক অনুসন্ধানে আমরা চালকের অসাবধানতাকে দায়ী করেছি। আর জাহাজটি ৩০ ফুট পানিতে তলিয়ে থাকায় সেটি পর্যবেক্ষণ করতে পারিনি,” বেনারকে জানান ঘটনার পর গঠিত চার সদস্যের তদন্ত কমিটির একজন সদস্য।