ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ছে চিকুনগুনিয়া
2017.07.20
ঢাকা

রাজধানীতে প্রাদুর্ভাবের পর এডিস মশা বাহিত চিকুনগুনিয়া রোগ ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে পড়ছে বলে নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব বিভাগ আইইডিসিআর।
“এপ্রিলের দিকে ঢাকায় চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব ঘটে। জুলাই ১৯ পর্যন্ত সারা দেশে আমরা ৭ শ ৩৭ চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পেয়েছি। ঢাকা ছাড়া গাজীপুর, নরসিংদী, বগুড়া এবং গোপালগঞ্জে চিকুনগুনিয়া ছড়িয়ে পড়েছে," বেনারকে বলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রোগতত্ত্ব ইনস্টিটিউট- আইইডিসিআর এর পরিচালক মীরজাদী সাবরিনা ফ্লোরা।
তিনি জানান এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের ১৯ তারিখ পর্যন্ত সারা দেশ থেকে পাওয়া ৪ হাজার ৭ শ জন সন্দেহভাজন রোগীর রক্ত নমুনা পরীক্ষা করে সাত শতাধিক চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে।
“ঢাকা থেকে চিকুনগুনিয়া ওই চারটি জেলায় ছড়িয়েছে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি,” বলেন তিনি।
আইইডিসিআর সারা দেশের হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে পাঠানো রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে এবং পরীক্ষা করে কোনো রোগী চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত কিনা তা নিশ্চিত করে।
“চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকতে পারে; কারণ, আমাদের দেশে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। আর এই সময়ে এডিস মশার বিস্তার ঘটে," ডা. ফ্লোরা বলেন।
চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত কেউ মারা যায়নি বলেও জানান তিনি।
ডাক্তার ও স্বাস্থ্য কর্মীদের মতে, এখনই এডিস মশা ধ্বংস না করলে এই রোগ সারা দেশে ছড়িয়ে মহামারি আকার ধারণ করতে পারে। তবে বর্তমানে চিকুনগুনিয়া একটি সমস্যা হলেও পরিস্থিতি আতঙ্কিত হওয়ার মতো নয় বলে মনে করছে সরকার।
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহেদ মালেক বেনারকে বলেন, “আমরা প্রতিদিনই হাসপাতালগুলোতে চিকুনগুনিয়ার লক্ষণসহ রোগী আসার খবর পাচ্ছি। কিন্তু সবাই চিকুনগুনিয়া রোগী নয়। চিকুনগুনিয়া পরিস্থিতি মহামারি আকার ধারণ করেনি।”
মানুষ চিকুনগুনিয়ায় ভীত হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, “চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে সরকার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।
তবে এ রোগ নির্মূলে সাধারণ জনগণকেও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী।
“যেহেতু চিকুনগুনিয়ার কোনো বিশেষ চিকিৎসা নেই, সেহেতু এডিস মশা ধ্বংস করাই হলো এই রোগের বিস্তার রোধের একমাত্র উপায়। জনগণকে তাদের বাসা-বাড়ির আশে-পাশের ঝোপ-জঙ্গল পরিষ্কার রাখতে হবে, আশে-পাশে যেন পানি জমে না থাকে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, জমে থাকা পানিতে এডিস মশা বংশবিস্তার করে,” বলেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী মালেক বলেন, “স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চিকুনগুনিয়া সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন প্রচারমূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।”
সরকারি জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের সাবেক পাবলিক অ্যানালিস্ট ডা. আবু বক্কর সিদ্দিক বেনারকে বলেন, “চিকুনগুনিয়ার কোনো বিশেষ চিকিৎসা নেই। সাধারণ জ্বরের মতো প্যারাসিটামল সেবন করা, প্রচুর পানি পান করা এবং বিশ্রাম নেওয়াই চিকুনগুনিয়া থেকে আরোগ্য লাভের উপায়।”
তিনি বলেন, “প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে চিকুনগুনিয়া সারা দেশে মহামারি আকারে ছড়াতে পারে।”
তাঁর মতে, “এডিস মশা ধ্বংস না করার কোনো বিকল্প নেই।"
চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ, জ্বর ও গিটে ব্যথা নিয়ে সরকারি হাসপাতাল ও বেসরকারি ক্লিনিকে রোগীরা ভিড় করছেন প্রতিদিনই। সবচেয়ে বেশি রোগীর চাপ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। প্রতিদিন সেখানে শত শত রোগী চিকিৎসা নিতে আসছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ঢাকায় অনেক পরিবার আছে যেখানে একাধিক সদস্যের চিকুনগুনিয়া হয়েছে।
সরকারি কর্মচারী ড. ফরিদ উদ্দীন আহমেদ বেনারকে বলেন, তিনি এবং তাঁর স্ত্রী একই সঙ্গে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হন একমাস আগে।
“আপনি ঢাকার যে কোনো অঞ্চলে গিয়ে ঘরে ঘরে চিকুনগুনিয়া রোগীর সন্ধান পাবেন। আমার অনেক বন্ধু-স্বজন বর্তমানে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত। চিকিনগুনিয়া ঢাকায় প্রায় মহামারি আকার ধারণ করেছে,” বলেন ড. ফরিদ।
মিরপুর পল্লবী এলাকার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে কর্মরত ডাক্তার শফিউল আকরাম বেনারকে বলেন, তিনি নিজেও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হন গত মাসে।
"আমাদের ক্লিনিকে প্রতিদিন অনেক রোগী চিকুনগুনিয়ার পরীক্ষার জন্য আসছেন। সবাই যে চিকুনগুনিয়ার রোগী তা নয়,” তিনি বলেন।
তবে জ্বর, মাথা ব্যথা ও গিরায় ব্যথা থাকলেই রোগীরা চিকুনগুনিয়ার পরীক্ষা করছেন।
এদিকে বাংলাদেশে চিকুনগুনিয়ার অবস্থা সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মন্তব্য জানতে সংস্থার ঢাকা অফিসে যোগাযোগ করা হলে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে ১৯৫২ সালে পূর্ব আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ায় প্রথম চিকুনগুনিয়া রোগ ধরা পড়ে। বাংলাদেশসহ বর্তমান সময়ে ষাটের অধিক দেশে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।