কর্মক্ষেত্রে শিশু শ্রমিকেরা ভালো নেই
2016.04.11
বাংলাদেশে অসংগঠিত খাতে শিশু শ্রমিকদের অবস্থা মোটেও ভালো নয় বলে সাম্প্রতিক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, এ ধরনের শিশুরা ধর্ষণ, মানসিক নির্যাতন ও দুর্ব্যবহারের শিকার হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মক্ষেত্রে ৫৭ শতাংশ শিশু শ্রমিক মারধরের শিকার হচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, জরিপে অংশ নেওয়া শিশুদের ৭৯ শতাংশ প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার আগেই স্কুল থেকে ঝরে গেছে।
দ্য নিলসেন কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড পরিচালিত ‘অসংগঠিত খাতে শিশুশ্রমের অবস্থা’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ চিত্র বেরিয়ে আসে। গত ১০ এপ্রিল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
এটা প্রকাশ হওয়ার পর সরকার ও শিশু সংগঠনগুলো নড়েচড়ে বসেছে।তারা শিশুশ্রম নিরসনে সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের দাবি তুলেছে।
“কর্মক্ষেত্রে শিশুরা যে ভালো নেই, এটা বলতে তথ্য পরিসংখ্যান দরকার নেই। তারপরও যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, সেগুলো আমলে নিয়ে সরকারকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে,” বেনারকে জানান পথশিশুদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন অপরাজেয় বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানু। তিনি বলেন, সরকারের অনেক আইন ও নীতি আছে। কিন্তু সেগুলোর যথাযথ প্রয়োগ হলে এ ধরনের স্পর্শকাতর তথ্য পাওয়া যেত না।প্ররতিবেদনের তথ্য হচ্ছে, দেশে বর্তমানে ৭ শতাংশ শিশু গৃহশ্রমিক ধর্ষণ ও ৬৬ শতাংশ শিশু শ্রমিক মানসিক নির্যাতনের শিকার। প্রায় ৪৬ শতাংশ শিশু শ্রমিকের সঙ্গে খারাপ ভাষা ব্যবহার করা হয়।
শিশু শ্রমিকদের আয় সম্পর্কে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত শিশু শ্রমিকেরা দৈনিক ১০ ঘণ্টার বেশি কাজ করে মাসে ১৪শ’ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করে।
“শিশু শ্রমিকদের নির্যাতন করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে,” জানান গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে জানান মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বেগম মেহের আফরোজ চুমকি।
তবে প্রতিমন্ত্রী মনে করেন, সরকারের একার পক্ষে শিশুদের দেখভাল করা সম্ভব নয়। তাই এ ক্ষেত্রে দেশের বিভিন্ন সংস্থাসহ বাবা-মায়ের আরও সহায়তা দরকার।
তিনি আরও বলেন, শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত রেখে কোনো দেশ মধ্যম আয়ের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে না।
বাংলাদেশের শিশুশ্রমের পেছনে অন্তর্নিহিত কারণ এবং এর সম্ভাব্য প্রতিকার খুঁজে বের করার জন্য নিলসেন ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকায় বিভিন্ন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত ৬শ’ শিশু শ্রমিকের তথ্য নিয়ে এ গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।
গবেষণায় উঠে এসেছে, শতকরা ২২ শতাংশ শিশু শ্রমিক বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত রয়েছে। ৩৫ শতাংশ শিশু শ্রমিকের কর্মস্থলে খাবার ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া ৮০ শতাংশ শিশু শ্রমিকের কর্মক্ষেত্রে কোনো ধরনের ওভারটাইমের সুযোগ নেই।
গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশে ১১ বছর বয়স থেকেই শিশুরা শ্রমে নিয়োজিত হয়। গবেষণায় অংশ নেওয়া শিশুদের শতকরা ৫২ ভাগ শিশুর বয়স ছিল ১৫ থেকে ১৮, ৪৪ ভাগ ছিল ১০ থেকে ১৪ বছরের এবং ৪ ভাগ শিশুর বয়স ছিল ৫ থেকে ৯ বছর।
“দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সন্তানেরা এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত হচ্ছে। তাঁরা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করতে না পেরে ঝরে পড়ছে। এদের দিকে সরকারের বিশেষ নজর দিতে হবে,” বেনারকে জানান গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী।
তিনি বলেন, পরিবারের আর্থিক অসংগতি ছাড়াও লিঙ্গ বৈষম্য, বসবাসের স্থান, সামাজিক অবস্থা ও শিশুশ্রমসহ বিভিন্ন কারণে বিপুলসংখ্যক শিশু স্কুলের বাইরে থাকে।উল্লেখ্য, ইউনিসেফের হিসেবে দেশের প্রাথমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বয়স উপযোগী শিশুর সংখ্যা দুই কোটি ৬০ লাখ। এদের মধ্যে ৫৬ লাখ বিদ্যালয়ের বাইরে রয়েছে এবং এদের মধ্যে থেকেই শিশুরা অসংগঠিত খাতে কাজ করছে।