চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সমঝোতা স্মারক

পুলক ঘটক
2019.03.21
ঢাকা
190321-BD-ch-politics-620.jpg প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে গণভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) মধ্যে সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়। ২১ মার্চ ২০১৯।
[ফোকাস বাংলা]

ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) মধ্যে সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে দল দুটির মধ্যে এই সমঝোতা স্বাক্ষর হওয়ার কথা বেনারকে নিশ্চিত করেন প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম।

সফররত সিপিসি’র আন্তর্জাতিক বিভাগ সংক্রান্ত মন্ত্রী সং তাও এবং প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সমঝোতা স্মারকটি সই হয় বলে জানান নজরুল।

আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ এবং সং তাও নিজ নিজ দলের পক্ষে সই করেন।

বাসস জানায়, চীনা নেতা সং তাও এসময় বলেছেন, “আওয়ামী লীগ ও সিসিপি একই ধরনের মতাদর্শে বিশ্বাসী। এতে এই দুই দল, সরকার ও দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর হবে।”

এই চুক্তি স্বাক্ষর বিষয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক সেলের প্রধান হাসান তারেক চৌধুরী বেনারকে বলেছেন, “চীনের দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টের উভয় পক্ষের যৌথ বৈঠক এ মাসেই অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকে আঞ্চলিক পররাষ্ট্র বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো হয়ে থাকে। তার প্রাক্কালে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির এই সমঝোতা স্মারক গুরুত্ববহ।

তাঁর মতে, চীনা রাষ্ট্রপতি ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রুট' পলিসির আওতায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনীতিতে অধিকতর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চাচ্ছেন। এই সমঝোতা তারই অংশ।”

বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, “দুই দেশের ক্ষমতাসীন দুই দলের মধ্যে এই সমঝোতা গুরুত্বপূর্ণ। সমালোচনার সুরে তিনি বলেন, “দুই দেশের স্বৈরতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্যগত মিল আছে। বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগের প্রকল্পগুলোতে যথেষ্ট অস্বচ্ছতা। এই অস্বচ্ছতা চীনের জন্য সুবিধাজনক। তারা ব্যবসা পেতে অস্বচ্ছ পন্থায় বিনিয়োগে কার্পণ্য করে না।”

“প্রবৃদ্ধি ভিত্তিক উন্নয়ন অংশিদারিত্বে বন, নদী, পরিবেশ সবকিছু বিনাস করেও উন্নয়ন চাওয়া হয়। এ জায়গায় চীনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বেশ মিল। ভারতের সঙ্গে রাজনৈতিক স্বার্থ এবং চীনের সঙ্গে অর্থের স্বার্থ দৃশ্যমান,” বলেন তিনি।

স্মারকে যা আছে

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষে স্বাক্ষর করেন দলটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের মন্ত্রী সং তাও এবং আওয়ামী লীগের পক্ষে স্বাক্ষর করেছেন আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ। বাংলা, চাইনিজ ও ইংরেজি ভাষায় এই স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।

সমঝোতা স্মারকে বলা হয়েছে: সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা, সমঅধিকার, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ের হস্তক্ষেপ না করার ভিত্তিতে দুই বন্ধুপ্রতীম দল পারস্পরিক বিনিময় ও সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দলীয় সম্পর্ক এবং ‘চীন-বাংলাদেশ কৌশলগত সহায়তা ও অংশীদারিত্ব’ আরও জোরদার করার লক্ষ্যে কাজ করবে।

দুই সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আলোচনা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে যোগাযোগ ও সহায়তা জোরদার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ ছাড়াও দুই দেশের এই দুই রাজনৈতিক দলের যুব ও মহিলা শাখাসহ থিঙ্ক ট্যাংকের মধ্যে পারস্পরিক বিনিময় বৃদ্ধি করা হবে।

পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর ওপর বিস্তারিত আলোচনা ও নিজ নিজ অভিজ্ঞতা বিনিময়ের স্বার্থে বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সেমিনার ও প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।

স্মারকটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নির্দিষ্ট ও বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মধ্যে আলোচনা চলবে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের কীভাবে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যায় তা নিয়ে ইতোমধ্যে চীন কাজ করছে বলে জানিয়েছেন সে দেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের একথা জানিয়েছেন।

নজরুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের তাদের নিজেদের দেশে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এব্যাপারে দেশটির সহায়তা চেয়েছেন।

টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান সং তাও। তাকে চীনের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা পৌঁছে দেন তিনি।

বিসিআইএম গঠনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ব্যবসা-বাণিজ্য ও সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে চীনের জন্য ৭০০ একর জমির ওপর একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হয়েছে।

নজরুল ইসলাম বলেন, মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য মিয়ানমার থেকে গ্যাস নিয়ে আসতে চীনাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।