চীনের ব্যাংক ও বিমান যোগাযোগের ঘোষণাকে স্বাগত জানালেন ঢাকার ব্যবসায়ীরা

রিয়াদ হোসেন
2024.02.05
ঢাকা
চীনের ব্যাংক ও বিমান যোগাযোগের ঘোষণাকে স্বাগত জানালেন ঢাকার ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন। মতিঝিল, ঢাকা। সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৬।
রয়টার্স

ঢাকার সঙ্গে বেইজিংয়ের সরাসরি বিমান যোগাযোগ ও বাংলাদেশে চীনের ব্যাংকিং কার্যক্রম চালুর ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন বাংলাদেশ সরকার ও ব্যবসায়ীরা।

তাঁরা মনে করছেন, এমন উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে উভয় দেশের ব্যবসা- বাণিজ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বাংলাদেশে চীনের ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু হলে তা ব্যবসায়ীদের জন্য আরও ইতিবাচক হবে উল্লেখ করে বাংলাদেশের পোশাক খাতের উদ্যোক্তা মোহাম্মদ হাতেম বেনারকে বলেন, “আমরা চীন থেকে পণ্য আমদানি করার ক্ষেত্রে তৃতীয় দেশের ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণপত্র (এলসি হিসেবে পরিচিত) খুলে থাকি।  এতে সময় বেশি লাগে।  সরাসরি চীনের ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খুলতে পারলে সময় কম লাগবে এবং কিছুটা ব্যয়ও সাশ্রয় হতে পারে।”

“এছাড়া এই ব্যাংকের মাধ্যমে চীনের মুদ্রা সহজে পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে”–উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর  ফলে ডলারের বদলে সরাসরি চীনের মুদ্রায় লেনদেন করা যাবে।

উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জ ভিত্তিক এমবি নিট ফ্যাশন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাতেম তার পোশাকের কাঁচামালের এক চতূর্থাংশ আমদানি করেন চীন থেকে, যার পরিমাণ বছরে ২৫ লাখ মার্কিন ডলার।

এই ব্যবসায়ীর মতো একই মত দিয়েছেন বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র (বিসিসিসিআই) সাধারণ সম্পাদক আল মামুন মৃধা।  বেনারকে তিনি বলেন, “আমরা জেনেছি, ইতিমধ্যে চীনের বাণিজ্যিক ব্যাংক এখানে আসার বিষয়ে উভয় দেশের সরকার পর্যায়ে দুই দফা সভা হয়েছে।  আরেকটি সভা শিগগিরই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।”

গত রোববার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে (৪ ফেব্রুয়ারি) বিসিসিসিআই-ইআরএফ সাংবদিকতা বিষয়ক পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে বাংলাদেশে চীনা দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন ও মিনিস্টার কাউন্সেলর ইয়ান হালং বলেন, “আগামী এপ্রিলের মধ্যে দুই দেশের রাজধানী ঢাকা ও বেইজিংয়ের মধ্যে সরাসরি বিমান যোগাযোগ চালু হবে।”

এছাড়া দুই দেশের যৌথ প্রচেষ্টায় চীনের বানিজ্যিক ব্যাংক চলতি বছরের শেষ নাগাদ কার্যক্রম শুরু করবে বলেও জানান তিনি।

ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত সরকারের নতুন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু দেশটির এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানান।

তিনি বলেন, “আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে চীনের ব্যাংক যদি আমাদের এখানে আসে, তাহলে আমদানি-রপ্তানিতে নতুন মাইলফলক রচিত হবে।”

একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার চীন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে চীন থেকে বাংলাদেশ এক হাজার ৭৮২ কোটি ডলারের সমপরিমাণ পণ্য আমদানি করেছে।  

বাংলাদেশের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, ওই অর্থবছরে বাংলাদেশ ৬৮ কোটি ডলারের পণ্য চীনে রপ্তানি করেছে।

যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বেনারকে বলেন, “চীনের কোন ব্যাংকের শাখা বাংলাদেশে চালু করার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনও সভা হয়েছে বলে আমার জানা নেই।”

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বর্তমানে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি বিমান যোগাযোগ আছে চীনের কুনমিং ও গুয়াংঝু’র।

আল মামুন মৃধা জানান, “চায়না সাউদার্ন ও চায়না ইস্টার্ন নামে দুটি বিমান সংস্থার সরাসরি ফ্লাইট আছে কুনমিং ও গুয়াংঝু’র সাথে।  আর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও ইউএস বাংলা’র সরাসরি ফ্লাইট আছে কেবল গুয়াংঝুতে।”

নতুন করে ঢাকা ও বেইজিংয়ের যে বিমান যোগাযোগ চালু হতে যাচ্ছে, তা এয়ার চায়না নামে নতুন একটি বিমান সংস্থার মাধ্যমে হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানান তিনি।

 “এটি চালু হলে বেইজিংয়ে যাতায়াতে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের খরচ কমার সুযোগ তৈরি হবে এবং এতে দুই দেশের যোগাযোগ আরো বাড়বে,” বলেন মামুন।

চীনা মুদ্রার মজুত বাড়তে পারে

চীনের ব্যাংকের শাখা বাংলাদেশে চালু হলে অন্তত পাঁচ ধরণের সুবিধা হবে বলে জানান আল মামুন মৃধা।

তিনি বলেন, চীনের ব্যাংক এখানে শুরু হলে আমদানির জন্য চীনের মুদ্রা ইউয়ানে এলসি খোলা সম্ভব হবে, চীনের বিনিয়োগকারীরা একই মুদ্রায় এখানে ঋণ পাওয়ার সুযোগ পাবে, বড় প্রকল্পে লেনদেন করার জন্য চীনা মুদ্রার মজুত বাড়বে এবং মুদ্রার মান ডলার তুলনায় কম উঠানামা করায় ব্যবসায়ীদের খরচ কমার সুযোগ তৈরি হবে।

তিনি বলেন, “চীনের অনেক বড় প্রকল্পের অর্থায়ন দেশটির মুদ্রায় ব্যাংকে আসলে এবং ওই মুদ্রার মজুত বাড়লে ইউয়ানে লেনদেন করা যাবে।”

শুধু তাই নয়, চাইলে ডলারেও তা লেনদেন করা যাবে বলে জানান তিনি।

বেসরকারি মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বেনারকে বলেন, “বর্তমানে চীন থেকে আমদানি করতে তৃতীয় ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খুলতে হয়। তখন সরাসরি চীনের ব্যংকের মাধ্যমে খোলা যাবে।  শুধু তাই নয়, চীনের মুদ্রার পাশাপাশি ডলারেও এলসি খোলা যাবে।”

তবে তিনি বলেন, “বর্তমানে চীনে বাংলদেশের রপ্তানির পরিমাণ খুবই কম।  ফলে ওই পরিমাণ লেনদেন করার সুযোগ থাকবে। এর বাইরে তাদের বিনিয়োগ বা ঋণের অর্থ যদি দেশটির মুদ্রায় আসে, সেটি চীনের মুদ্রার সরবরাহ বাড়াতে পারে।”

প্রসঙ্গত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরে বাংলাদেশে ডলার সংকট দেখা দেয়।  ডলারের বিপরীতে কয়েক ধাপে টাকার দর কমানো হয়।  পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিকল্প মুদ্রায় লেনদেনের উপায় হিসেবে গত বছরের সেপ্টেম্বরে চীনা মুদ্রায় লেনদেনের অনুমতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

এর পর গত মাসের শেষ দিকে চীনের মুদ্রায় তাৎক্ষণিক লেনদেন সম্পন্ন করার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক, যা গত রোববার থেকে চালু হয়েছে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।