প্রতিশ্রুত ৫০০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে উন্নত দেশগুলোর প্রতি ৪৮ দেশের আহ্বান

কামরান রেজা চৌধুরী
2021.07.09
ঢাকা
প্রতিশ্রুত ৫০০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে উন্নত দেশগুলোর প্রতি ৪৮ দেশের আহ্বান পদ্মা নদীর ভাঙনের মুখে একটি চিকিৎসা কেন্দ্র। সেপ্টেম্বর ২০১৮।
এএফপি

জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী উন্নত দেশগুলোকে ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সাল - এই পাঁচ বছরে মোট ৫০০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ প্রদানের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ঘোষণার আহ্বান জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অর্থমন্ত্রীদের সংগঠন ভি২০ এর প্রথম শীর্ষ সম্মেলনে এই দাবি জানিয়ে যৌথ ইশতেহার ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের নেতৃত্বাধীন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৪৮ দেশ।

''আমরা সুনির্দিষ্টভাবে উন্নত বিশ্বের কাছ থেকে যৌথ  পরিকল্পনা দাবি করছি , কীভাবে বাৎসরিক ১০০ বিলিয়ন ডলার ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত  পূরণ করা হবে। '' ভার্চুয়াল সন্মেলনের শেষে এই দাবী করা হয়।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৪৮টি দেশের সংগঠন ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সভাপতি হিসাবে এই ভার্চুয়াল সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে প্রথমবারের মতো “মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান-ডেকেড ২০৩০” ঘোষণা করে অন্যান্য দেশগুলোকেও একই ধরণের প্রসপারিটি প্ল্যান ঘোষণার আহ্বান জানান। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনে অভিঘাত মোকাবিলা করে উন্নত হতে পারবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের জাতীয় সংসদ  জলবায়ু পরিবর্তন বন্ধে সবাইকে জরুরি ভিত্তিতে’ কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে। আমরা বিশ্বব্যাপী বাকি নেতাদের কাছ থেকেও একই পদক্ষেপের আশা করি।

শেখ হাসিনা বলেন, “ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ)-ভি২০ আওতায় থাকা ৪৮ দেশ সম্মিলিতভাবে মাত্র শতকরা পাঁচ ভাগ দূষণ (এমিশন) করে থাকে। কিন্তু তারাই মনুষ্য সৃষ্ট এই জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত।”

তিনি বলেন, “এ ছাড়াও চলমান কোভিড-১৯ মহামারি লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন-জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। মানব সভ্যতার ইতিহাসের এই সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে চলমান ও ভবিষ্যত সঙ্কট মোকাবিলা করতে হবে।”

ওয়াশিংটন ভিত্তিক ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইনস্টিটিউটের (ডাব্লুআইআরআই) সাসটেনেবল ফিনান্স সেন্টারের একজন সহযোগী বলেছেন যে, ৫০০ বিলিয়ন ডলারের পুরোটা আদায়ের জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলি একটি স্পষ্ট সংকেত পাঠিয়েছে ।

বেনার নিউজকে জো থুয়েট বলেন, পুরো ইস্যুটিকে তুলে ধরার জন্য -এটি একটি দুর্দান্ত উদ্যোগ।

তিনি বলেন, ২০১৮ সালের সাম্প্রতিক হিসাব অনুযায়ী,  ৭৯ বিলিয়ন ডলার প্রদান করা হয়েছে।

থুয়াট আরও বলেন, কিন্তু আমি জানি না, ২০১৯ এবং ২০২০ সালে কত ( টাকা) দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, কোভিড মহামারির কারণে আন্তর্জাতিক অর্থায়নে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটেছে।

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টনিও গুটেরেস সম্মেলনে অংশ নিয়ে বলেন, আস্থা পুননির্মাণের জন্য উন্নত দেশসমূহের উচিত, তারা কীভাবে কার্যকর পদ্ধতিতে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করবে। যেমনটা তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো এক দশক আগে। ''

 বীমা ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব

বৃহস্পতিবারের শীর্ষ সম্মেলনের যৌথ ইশতেহারে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সাথে জড়িত ৫০ কোটি মানুষকে রক্ষা করতে বীমা ব্যবস্থা চালুর কথা পুর্নব্যক্ত করা হয়।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বেনারকে বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নি:সরণ কমানো এবং অর্থ প্রদান দুই ক্ষেত্রেই এখানে কিছুটা ডিসকানেক্ট (ব্যবধান) রয়েছে। তাই, আমরা কোথায় আছি এবং কোথায় যেতে চাই সেটির একটি পরিষ্কার রোডম্যাপ থাকতে হবে।”

তিনি বলেন, “অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে একটি নীতি ছিল সেটি হলো: ৫০ ভাগ যাবে অ্যাডাপটেশন (অভিযোজন) এবং ৫০ ভাগ যাবে মিটিগেশন (প্রশমনে) খাতে। তবে বর্তমানে বলা হচ্ছে ৭৫ ভাগ যাবে মিটিগেশন এবং ২৫ ভাগ যাবে অভিযোজনে।”

সাবের হোসেন বলেন, “এর কারণ হলো ব্যবসায়িক সুযোগ রয়েছে মিটিগেশনের ক্ষেত্রে। অভিযোজনের ক্ষেত্রে তা নেই।”

সাবের হোসেন বলেন, “আমরা আশা করি উন্নত বিশ্ব এখন তাদের প্রতিশ্রুত অর্থ ছাড় করবে। কারণ হলো, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো শুধু আমাদের ক্ষতির কথা বলে যেতাম এবং উন্নত বিশ্বের দেশগুলো শুনে যেতো এবং মনে করত জলবায়ু পরিবর্তন একটি দূরবর্তী সমস্যা।”

ঢাকা ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্চ অ্যাণ্ড ডেভেলপমেন্ট এর উপপরিচালক মিজান আর. খান বেনারের কাছে বীমা ব্যবস্থা প্রবর্তনের বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন।

তিনি বলেন, অভিযোজন নীতির মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য বীমার ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে।

“আমাদের কথা হলো, যদি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে কোন কৃষকের পাকা ধান অথবা অন্য কোনও ফসল হঠাৎ বন্যা অথবা খরায় নষ্ট হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে বীমা কোম্পানিগুলো কয়েকদিনের মধ্যে এই ক্ষতির বিপরীতে অর্থ প্রদান করবে,” যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, “কারণ, এই বন্যা, খরা বা জলোচ্ছাসের জন্য সেই কৃষক দায়ী নন, দায়ী উন্নত বিশ্ব। তাদের ব্যাপকহারে জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ানোর কারণেই আজ বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জলবায়ু পরিবর্তিত হয়ে বিভিন্ন দুর্যোগ নেমে আসছে।”

মিজান রহমান বলেন, “এই বীমা প্রকল্পের প্রিমিয়াম দিতে হবে উন্নত বিশ্বকে। কৃষক হয়তো নূন্যতম অংশ দিতে পারেন।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।