জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে উপকূলীয় বিদ্যালয়ে বই বিতরণের পরিকল্পনা

কামরান রেজা চৌধুরী
2017.03.08
ঢাকা
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রকৃতিতে নানা পরিবর্তন আসছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রকৃতিতে নানা পরিবর্তন আসছে। ডিসেম্বর ২০১৬।
জেসমিন পাপড়ি/বেনার নিউজ

দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে বিনা মূল্যে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক পুস্তক সরবরাহ করার উদ্যোগ নিয়েছে উন্নয়ন সংস্থা আরণ্যক ফাউন্ডেশন। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করাই এর মূল লক্ষ্য।

প্রাথমিকভাবে উপকূলীয় জেলা বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলায় এই বই বিতরণ করা হবে।

এ প্রসঙ্গে আরণ্যক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ফরিদ উদ্দীন আহমেদ বেনারকে বলেন, “রঙিন ছবি সংবলিত ২৮-পৃষ্ঠার বইটি মার্চ মাসের মধ্যেই সরবরাহ করা হবে।”

তিনি বলেন, “এসব জেলার প্রতিটি স্কুলে ২০টি করে বই সরবরাহ করা হবে। স্থানীয়দের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে বইগুলোর প্রভাব পর্যালোচনার পর অন্যান্য উপকূলীয় জেলাগুলোতেও এই বই বিতরণ করা হবে।”

জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের উপকূলীয় ১৯টি জেলা। জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক গবেষণা অনুযায়ী সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশের কমপক্ষে ১০ভাগ এলাকা সাগরের পানিতে তলিয়ে যাবে।

বিশ্ব ব্যাংকের মতে, গত ৪০ বছরে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশ ১২ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। আর এ সকল দুর্যোগের অধিকাংশই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বলে মনে করেন পরিবেশ সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে পরিচালিত আরণ্যক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিতরণ করা বইয়ে গল্প বলার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনকে দেশের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বইটি পড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে নিজেরা জেনে অভিভাবকদের জানাবে। একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ-খাওয়ানো ও এর প্রতিকার সম্পর্কে অবহিত হবে।

প্রতিষ্ঠানটির এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা। তবে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সমাজের সকল স্তরকে এ বিষয়ে অবহিত করার প্রতিও গুরুত্বারোপ করেন তাঁরা।

এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির জলবায়ু বিষয়ক বিশেষজ্ঞ একেএম মামুনুর রশিদ বেনারকে বলেন, “আরণ্যক ফাউন্ডেশনের এই উদ্যোগটি ভালো। তবে ছাত্র-ছাত্রীদের পাশাপাশি শিক্ষকদেরও এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দিতে হবে; যাতে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টি শিক্ষার্থীদের বোঝাতে পারেন।”

তাঁর মতে, “জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক কমপক্ষে একটি মডিউল শিক্ষকদের জন্য থাকতে হবে। অন্যথায় এ উদ্যোগ কাঙ্ক্ষিত সুফল বয়ে নাও আনতে পারে।”

আরণ্যক ফাউন্ডেশনের এই বইয়ে খরা, বন্যা, সাইক্লোন, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, মানুষের জীবন-জীবিকা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে জানান পরিবেশ অধিদপ্তরের কারিগরি পরিচালক জিয়াউল হক।

তিনি বেনারকে বলেন, “আশা করা যায় পুস্তকটি কাঙ্ক্ষিত সুফল বয়ে আনবে। আর শুধু দেশের উপকূলীয় অঞ্চল নয়, সারা দেশে বইটি বিতরণের ব্যবস্থা করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ-খাওয়ানো ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই। কারণ বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী নয়।”

তবে বইটি পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা পড়তে আগ্রহী হবে না বলেও আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ।

বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র আমির হোসেন বেনার নিউজকে বলেন, পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত না হলে সব ছাত্র-ছাত্রী জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত বইটি পড়তে আগ্রহী হবে না।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় পাঠ্যক্রম ও টেক্সট বুক বোর্ডের সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) ড. রতন সিদ্দিক বেনার নিউজকে বলেন, এখন ষষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত ভূগোল বইয়ে এবং বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি শিরোনামের দুটি বইয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি স্বল্প পরিসরে পড়ানো হচ্ছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে পরিপূর্ণ বই প্রণয়ন করা সম্ভব হয়নি।

ওই কর্মকর্তা জানান, জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে পড়ানোর জন্য শিক্ষকদের স্বল্প মাত্রায় প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।