তীব্র শীতে কাঁপছে বাংলাদেশ, স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত

জেসমিন পাপড়ি
2018.01.05
ঢাকা
শৈত্যপ্রবাহে জনজীবনে নেমে এসেছে সীমাহীন দুর্ভোগ। শৈত্যপ্রবাহে জনজীবনে নেমে এসেছে সীমাহীন দুর্ভোগ। ছবিটি রাজধানী ঢাকা থেকে তোলা। ০৫ জানুয়ারি ২০১৮।
নিউজরুম ফটো

পৌষের মাঝামাঝি এসে তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। ফেরি চলাচল থেকে শুরু করে বিঘ্নিত হচ্ছে বিমান চলাচলও।

দুর্ভোগে পড়েছে শ্রমজীবী ও দরিদ্র মানুষ। বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ। বৃহস্পতিবার ঠান্ডাজনিত রোগে চুয়াডাঙ্গা ও কুড়িগ্রামে মারা গেছে দুটি শিশু।

বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়, ৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটাই এই মৌসুমের সবচেয়ে কম তাপমাত্রা। শুক্রবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় যশোরে, ৭.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

চুয়াডাঙ্গা, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট ও দিনাজপুরে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি।

বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগে বাবু নামে চার বছর বয়সী একটি শিশু মারা যায় বলে বেনারকে জানান হাসপাতালটির আবাসিক মেডিকেল অফিসার শামীম কবির। এ ছাড়া গত তিন দিনে প্রায় পাঁচশ’র বেশি মানুষ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে বলে জানান তিনি। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই শিশু।

এ ছাড়া কুড়িগ্রাম আধুনিক হাসপাতালে মারা গেছে মায়েম নামের দেড় বছরের একটি শিশু।

আবহাওয়াবিদ নিঝুম রোকেয়া আহমেদ বেনারকে বলেন, শ্রীমঙ্গল, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে চলা এ শৈত্যপ্রবাহ আরও অব্যাহত থাকতে পারে এবং আশপাশের এলাকায় বিস্তৃত হতে পারে।

আবহাওয়া অফিসের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, জানুয়ারিতে একটি মাঝারি (৬-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা তীব্র (৪-৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এবং ২-৩টি মৃদু (৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

বাড়ছে রোগব্যাধি

তীব্র শীতের কারণে সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবদুল আজিজ বেনারকে বলেন, গত কয়েক দিনে রোগীর সংখ্যা কয়েক গুন বেড়ে গেছে। এদের মধ্যে সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়াসহ শ্বাসকষ্টজনিত রোগীর সংখ্যাই বেশি।”

এমন পরিস্থিতিতে শিশুদের প্রতি বাড়তি নজর দেওয়া জরুরি বলে মনে করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের প্রধান মনীষা ব্যানার্জী। তিনি বেনারকে বলেন, “শোনা যাচ্ছে জানুয়ারি জুড়েই এই শৈত্যপ্রবাহ থাকবে। এমন সময়ে শিশুদের বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত। কারণ, ঠান্ডা লেগে নিউমোনিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং যার নেতিবাচক প্রভাব অনেকাংশে সারা জীবন ধরে থেকে যায়।”

“এই সময়ে নবজাতক শিশুদেরকে মায়ের শরীরের সঙ্গে রাখা প্রয়োজন। যাতে মায়ের শরীরের তাপটা তাদের শরীরে প্রবাহিত হয়,” বলেন তিনি।

জানা যায়, বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে শতাধিক শিশু ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছে।

তীব্র শীতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বিপাকে পড়েছে দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষ।

কুড়িগ্রাম থেকে রিকশাচালক হেলালউদ্দিন বেনারকে বলেন, “বানের পানিতে ঘর হারিয়ে শহরে আশ্রয় নিয়েছিলাম। কিন্তু ঠান্ডায় হিম হয়ে যাচ্ছি। শীত আর কুয়াশার কারণে ক’দিন ধরে রিকশাও চালাতে পারছি না।”

বিমান চলাচল বিঘ্নিত

ঘন কুয়াশার কারণে শুক্রবার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে সাড়ে ৭ ঘণ্টা সকল আন্তর্জাতিক বিমান উঠানামা বন্ধ রাখা হয়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র একেএম রেজাউল করিম বেনার নিউজকে বলেন, “ঘন কুয়াশার কারণে শুক্রবার বৃহস্পতিবার রাত ২টা ৪৫ মিনিট থেকে শুক্রবার সকাল ১০টা ১১ মিনিট পর্যন্ত বিমান উঠানামা বাতিল করতে হয়।”

তিনি জানান, এ সময় শারজাহ থেকে এয়ার এরাবিয়ার দু’টি এবং বাংলাদেশ বিমানের একটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটকে শাহজালালে অবতরণ করতে না দিয়ে কলকাতায় পাঠানো হয়। এ ছাড়া দুবাই থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের একটি এবং কুয়ালালামপুর থেকে আসা ইউএস বাংলা এয়ার লাইনসের একটি ফ্লাইটকে চট্টগ্রামে পাঠানো হয়। একইভাবে মিয়ানমারের মান্দালয়ে পাঠানো হয় কুয়ালালামপুর থেকে আসা ইউএস বাংলা এয়ার লাইনসের আরও একটি ফ্লাইটকে।

ফেরি চলাচল ব্যাহত

ঘন কুয়াশার কারণে দেশের প্রধান প্রধান নৌরুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হয়। দুর্ঘটনা এড়াতে কয়েক ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে ফেরি চলাচল শুরু হয় বলে বেনারকে জানান পাটুরিয়া ফেরিঘাট শাখা বাণিজ্য বিভাগের ব্যবস্থাপক সালাউদ্দিন হোসেন।

তিনি বলেন, “এদিন সকালে ঘন কুয়াশার কারণে ফেরির মার্কিং বাতির আলো অস্পষ্ট হয়ে যায়। নৌরুটে দুর্ঘটনা এড়াতে কয়েক ঘণ্টা সাময়িকভাবে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়।”

এদিকে লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে শুক্রবার ভোর সাড়ে ৪ টা থেকে বেলা সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। শতাধিক যাত্রীসহ মাঝ পদ্মায় ৫টি ফেরি আটকা পড়লে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।

ঘন কুয়াশার কারণে গত ১০ দিন ধরেই এই নৌরুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বলে জানান শিমুলিয়া ঘাটের পুলিশ পরিদর্শক (টিআই) মো.কাজল।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।