কাতারে ফিরতে ঢাকায় প্রবাসী শ্রমিকদের বিক্ষোভ
2021.01.05
ঢাকা

কাতার থেকে ছুটিতে দেশে ফেরা প্রবাসী শ্রমিকরা দ্রুত কর্মস্থলে ফেরার দাবিতে ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে অবস্থান নেন হাজারো শ্রমিক। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দেশে আটকা পড়েছেন তাঁরা।
“দেশে ফেরার ১০ মাস পার হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে আটকা পড়েছি। কাতার কর্মী নেওয়া শুরু করলেও আমরা যেতে পারছি না,” বেনারকে বলেন বিক্ষোভে অংশ নেওয়া আবদুল করীম।
ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাতার যেতে না পারলে চাকরি থাকবে না জানিয়ে তিনি বলে, “পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দুইবার কাগজ দিয়েছি। কিন্তু যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে না।”
করোনাকালে অন্তত ১২ হাজার কর্মী কাতার থেকে দেশে এসে আটকা পড়েছেন বলে বেনারকে জানান বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কর্মী মো. মানিক।
আটকে পড়াদের ৯৫ শতাংশের কাতারে ইকামা বা কাজের অনুমতির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা গত চার মাস ধরে রি-এন্ট্রি পারমিটের আবেদন করে যাচ্ছি। আর আবেদন নেওয়া হচ্ছে না, কারোটা দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে।”
“লাখ লাখ টাকা খরচ করে আমরা বিদেশি গিয়েছি। এখন পরিবারের বোঝা হয়ে উঠছি। সরকারের প্রতি আমাদের অনুরোধ কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে যেভাবে সৌদি প্রবাসীদের পাঠানো হয়েছে, তেমনিভাবে আমাদেরও কাতার পাঠানো হোক,” বলেন মানিক।
বিক্ষোভ চলাকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন মন্ত্রণালয়ের গেটে এসে প্রবাসীদের কাতারে ফেরার বিষয়ে আশস্ত করে জানান, সরকার এ বিষয়ে কাজ করছে। দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হবে।
৬ হাজার বাংলাদেশি কাতার ফিরেছেন
করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পরে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে কাতারের সাথে বাংলাদেশের বিমান চলাচল শুরু হয়েছে বলে টেলিফোনে বেনারকে জানান দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো: জসীম উদ্দিন।
তিনি জানান, বিমান চালু হবার পর এখন পর্যন্ত প্রায় ছয় হাজার বাংলাদেশি কর্মী কাতারে ফেরত গেছেন। বাকিদের ফেরত আনতে কাতার সরকারে সাথে আলোচনা চলছে।
“মূলতঃ তারা ধাপে ধাপে কর্মীদের ফিরিয়ে নেবে বলে জানিয়েছে। শুরুতে টেকনিক্যাল কাজে দক্ষদের নিয়ে এসেছে। বয়স্কদের করোনা ঝুঁকি বেশি বলে এক্ষেত্রে কর্মীর বয়সটাও বিবেচনা করছে দেশটির কর্তৃপক্ষ,” বলেন রাষ্ট্রদূত।
“কাতার করোনা বেশ ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে,” মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এ কারণে বিদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার ক্ষেত্রেও তারা সতর্ক রয়েছে।”
এছাড়া কাতারে আসা কর্মীদের বাধ্যতামূলকভাবে ১৫ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলে সেখানে হোটেল স্বল্পতাও একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বলে জানান তিনি।
“তবে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে সকল কর্মীকে ফেরত নেওয়ার কথা তারা জানিয়েছে,” বলেন রাষ্ট্রদূত জসীম উদ্দিন।
দেশে আটকে পড়া কাতার প্রবাসী শ্রমিকদের সংখ্যার সঠিক হিসেব নেই উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, “এই সংখ্যা ১২ হাজারের কমই হবে।”
কাতারে সব মিলেয়ে চার লাখের বেশি বাংলাদেশি কর্মরত রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
করোনা মোকাবেলায় ৬০ কোটি ডলারের সংশোধিত প্রকল্প
টিকা কেনা, মজুদ ও সরবরাহ নিশ্চিত করাসহ দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবেলা করতে ৬০ কোটি ডলারের বেশি একটি সংশোধিত জরুরি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি সভায় এই অনুমোদন দেয়া হয় বলে বেনারকে নিশ্চিত করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম. এ. মান্নান।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কার্যপত্র অনুযায়ী, এই অর্থের মধ্যে রয়েছে বিশ্বব্যাংকের প্রতিশ্রুত ৫০ কোটি মার্কিন ডলার এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক কর্তৃক প্রতিশ্রুত ১০ কোটি মার্কিন ডলার।
এই প্রকল্পের আওতায় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইডিসিআর) করোনাভাইরাস রোগীদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদেরও শনাক্ত (কনট্যাক্ট ট্রেসিং) করবে।
“করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে কনট্যাক্ট ট্রেসিং খুব জরুরি। করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসা মানুষগুলোকে চিহ্নিত করে তাঁদের সঙ্গনিরোধ করা গেলে সংক্রমণের বিস্তার ঠেকানো যাবে সহজে,” বেনারকে বলেন আইডিসিআর এর মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ.এস.এম. আলমগীর।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্র্যাজেনেকার করোনাভাইরাস টিকার জরুরি ব্যবহার অনুমোদন দেয়ার পরদিনই এই প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হলো। এদিকে বাংলাদেশ আরেকটি চীনা কোম্পানির টিকার ট্রায়ালের কথা ভাবছে সরকার।
চীনা কোম্পানি আনহুই জিফেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে (বিএসএমএমইউ) এই ট্রায়াল করতে চায়।
বিএসএমএমইউ-এর উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া বেনারকে বলেন, “আনহুই জিফেই আমাদের কাছে ট্রায়ালের কাগজপত্র পাঠিয়েছে। আমরা সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছি। এ ব্যাপারে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি।”
গতবছর মার্চ মাসের দিকে চীনা কোম্পানি সিনোভ্যাক বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের তৃতীয় ধাপের টিকার ট্রায়ালের প্রস্তাব দেয়। সরকার সেই অনুমোদন দিলেও সিদ্ধান্ত দিতে বিলম্বের কারণে সিনোভ্যাক ট্রায়ালের জন্য সরকারের কাছে অর্থ দাবি করে। সরকার অর্থ দিতে অস্বীকৃতি জানালে ট্রায়াল কার্যক্রম পরিচালনা করেনি প্রতিষ্ঠানটি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ লাখ ১৭ হাজার ৯২০ জন, মৃত্যু হয়েছে সাত হাজার ৬৭০ জনের।
কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরগুলোতে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৩৬৮ জন রোহিঙ্গা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও এই রোগে নয় জন মারা গেছেন বলে বেনারকে জানান শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের প্রধান স্বাস্থ্য সমন্বয়কারী ডা. আবু তোহা এম আর এইচ ভূঁইয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন আট কোটি ৬১ লাখ ৯৫ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন ১৮ লাখ ৬৩ হাজারের বেশি।
প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন কক্সবাজার থেকে আবদুর রহমান।