করোনাভাইরাস: প্রথম ডোজ টিকা ছাড়া স্কুল ও কলেজে যেতে মানা
2022.01.06
ঢাকা

বাংলাদেশে ক্রমাগত করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে থাকার প্রেক্ষাপটে অন্তত এক ডোজ টিকা ছাড়া শিক্ষার্থীদের স্কুলে না যেতে বলছে সরকার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ৯৯ দিন পর নতুন রোগী শনাক্তের সংখ্যা সোমবার এক হাজার ছাড়িয়েছে।
বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে ১২ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদের স্কুল ও কলেজে যেতে হলে, অবশ্যই অন্তত প্রথম ডোজ কোভিড-১৯ টিকা নিতে হবে।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, “শিক্ষামন্ত্রী ইতোমধ্যেই নির্দেশনা দিয়েছেন যে, ভ্যাকসিন গ্রহণ ছাড়া কেউ স্কুলে যেতে পারবে না। গত ৩ জানুয়ারি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এই ইস্যুটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং আজ বিষয়টি চূড়ান্ত হয়।”
“রেস্টুরেন্টে খেতে, ট্রেন ও বিমানে ভ্রমণ করতে এবং বিপণীবিতান ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা পরিদর্শনের পাশাপাশি অন্যান্য জনসমাগম স্থানগুলোতে কোভিড-১৯ টিকা নেওয়ার সনদ দেখাতে হবে,” বলেন আনোয়ারুল ইসলাম।
তবে জাতীয় কারিগরি কমিটির মতামত অনুযায়ী একটি সুনির্দিষ্ট সময়ের পর এই সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন শুরু হবে বলে জানান তিনি।
গ্রামগঞ্জেও এখন টিকা সহজলভ্য জানিয়ে তিনি বলেন, এ জন্যই বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে।
তিনি জানান, পরিস্থিতি আরো অবনতি হলে গণপরিবহনগুলোতে ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী বহন করার নির্দেশনা দেওয়া হবে। তবে “‘লকডাউন আরোপের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।”
বাস্তবায়ন সম্ভাবনা নিয়ে সংশয়
সরকারের এসব সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বাস্তবায়ন সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
“সিদ্ধান্ত ঠিকই আছে, তবে বাস্তবায়ন করা চ্যালেঞ্জিং। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য সরকারকে এটা করতে হবে। এজন্য বিপুলসংখ্যক মানুষকে দ্রুত টিকার আওতায় আনতে হবে,” বেনারকে বলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।
জনসমাগম বন্ধের জন্য মহামারি সংক্রান্ত আইনগুলো প্রয়োগ করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন চলছে, বাণিজ্য মেলা চলছে, রাজনৈতিক দলগুলো সভা–সমাবেশ করেই যাচ্ছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যেকোনো উপায়ে জনসমাগম কমাতে হবে।”
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা: এমএইচ চৌধুরী লেলিনের মতে, “সরকারের এই সিদ্ধান্তগুলো প্রয়োগযোগ্য নয়। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হলে কমপক্ষে ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে।”
“দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া সরকারের লক্ষ্য। অথচ এখন পর্যন্ত দুই ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে মাত্র ৩১ শতাংশ মানুষকে। আর ১ ডোজ টিকা পেয়েছে প্রায় ৪১ শতাংশ মানুষ,” বেনারকে বলেন ডা. লেলিন।
তিনি বলেন, “দেশে টিকার সরবরাহে ঘাটতি নেই দাবি করা হলেও টিকা প্রদানের হার এত কম কেন খতিয়ে দেখা দরকার। আসলে টিকার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ঠিক গতিতে চলেনি।”
সুরক্ষা অ্যাপে এখন পর্যন্ত টিকার জন্য মোট জনসংখ্যার মাত্র অর্ধেকের মতো মানুষ নিবন্ধন করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাকিরা কেন করেনি খোঁজ নেওয়া দরকার। বহু মানুষের স্মার্ট ফোন নেই। অনেকেই অ্যাপ ব্যবহার করতে জানেন না।”
এইসব সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ না নিয়ে সরকারের এ জাতীয় বিধিনিষেধের সিদ্ধান্ত “জনগণের সঙ্গে কৌতুক করার মতো” বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, “দেশের বাকি মানুষ বাইরে বের হবে না, তারা রেস্টুরেন্টে খাবে না?,”
এদিকে শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি বিকেলে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, “যাদের টিকা দেওয়া হয়নি, তাদের জন্য অনলাইনে ক্লাস চলতে থাকবে। পাশাপাশি যারা টিকা নেয়নি, তাদের টিকার আওতায় আনতে হবে।”
“যেভাবে টিকাদান কর্মসূচি চলছে তাতে খুব শিগগির ১২ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদের অধিকাংশেরই টিকা দেওয়া হয়ে যাবে। করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলে ছাত্রছাত্রীদের অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে,” গাজীপুরে রোভার স্কাউটস প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিতর্ক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে বলেন তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সারাদেশে বুধবার (৫ জানুয়ারি) পর্যন্ত মোট ৪৩ লাখ ২৯ হাজার ৩২১ স্কুল শিক্ষার্থী টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছে ৬ লাখ ২৩ হাজার ৮৪৬ জন। গত ১ নভেম্বর শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়।
দেশের ১৭ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে ৭ কোটি ৬২ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬৮ জনকে এবং দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৫ কোটি ৩৮ লাখ ৮৮ হাজার ৩৪৯ জন।
সংক্রমণ বাড়ছে
বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ১৪০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। করোনায় মারা গেছেন ৭ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জানুয়ারি মাসের প্রথম ৫ দিনে নতুন রোগী শনাক্তের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৩৭০, ৫৫৭, ৬৭৪, ৭৭৫ ও ৮৯২।
গত ৬ ডিসেম্বরে পরীক্ষা করা নমুনার বিপরীতে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের হার শতকরা এক ভাগে নেমে এসেছিল। ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়া এবং কমার মধ্য দিয়ে এই ধারা অব্যাহত থাকে। গত ২ জানুয়ারি শনাক্তের হার ছিল শতকরা প্রায় তিন ভাগ, যা বৃহস্পতিবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৮৬ ভাগে।
এর আগে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর করোনা শনাক্তের সংখ্যা হাজারের বেশি ছিল। ওই দিন ১ হাজার ১৭৮ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
২০২০ সালের মার্চে বাংলাদেশে প্রথম করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশে মোট করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৫ লাখ ৮৯ হাজার ৯৪৭। সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৮ হাজার ৯৭ জনের।