করোনাভাইরাস: বড়পুকুরিয়া খনি থেকে কয়লা তোলা বন্ধ

কামরান রেজা চৌধুরী
2022.01.31
ঢাকা
করোনাভাইরাস: বড়পুকুরিয়া খনি থেকে কয়লা তোলা বন্ধ দেশে প্রতিদিন করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়লেও স্বাস্থ্য বিধি মানায় আগ্রহ নেই নাগরিকদের। মাস্কপরাসহ স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিতে এসেছেন গাইবান্ধার সাদুল‍্যাপুর এলাকার মানুষ। ৩১ জানুয়ারি ২০২২।
[ফোকাস বাংলা]

দেশের একমাত্র কয়লা খনি দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ায় চীনা নাগরিকসহ ১৩১ জন শ্রমিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় কয়লা উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছে খনি কর্তৃপক্ষ।

বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান খান সোমবার বেনারকে বলেন বলেন, “আমাদের এখানে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৫১ জন চীনা নাগরিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া আরও ৮০ জন স্থানীয় শ্রমিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।”

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বড়পুকুরিয়ার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। এই খনির কয়লা দিয়ে ২০০ মেগাওয়াট বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালিত হয়।

বড়পুকুরিয়া খনিতে কয়লা তোলার কাজ মূলত এক্সএমসি-সিএমসি কনসোর্টিয়ামের চীনা কর্মচারীরাই করে থাকেন। এই খনিতে উচ্চপদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরে মোট ২৯৩ জন চীনা নাগরিক রয়েছেন।

“এই অবস্থায় আমরা কয়লা খনি থেকে গত ২৭ জানুয়ারি থেকে কয়লা উৎপাদন বন্ধ রেখেছি। প্রতিদিনই সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। মূলত চীনা শ্রমিক-কর্মচারীরাই বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। পরিস্থিতির উন্নতি হলেই আমরা পুনরায় উৎপাদনে যাব,” বলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

তিনি বলেন, ২৯৩ জন চীনা নাগরিক ছাড়াও স্থায়ী, অস্থায়ী মিলিয়ে কমপক্ষে পৌণে সাত’শ বাংলাদেশি বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে কাজ করেন।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুজ্জামান বলেন, “আমাদের এখানকার কয়লা দিয়ে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালিত হয়। তবে যে পরিমাণ কয়লা ইতোমধ্যে উত্তোলন করা আছে, তা দিয়ে দুই থেকে তিন মাস তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র চলবে।”

২০০৫ সালে বিএনপি সরকারের আমলে চীনা এক্সএমসি-সিএমসি কনসোর্টিয়ামের সহায়তায় দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ায় কয়লা উত্তোলন শুরু হয়। সেই থেকে একই কনসোর্টিয়াম কয়লা উত্তোলন করছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বড়পুকুরিয়ার কয়লা উন্নতমানের। এই কয়লায় ক্ষতিকারক সালফারের পরিমাণ শতকরা দশমিক পাঁচ ভাগের মতো।

সর্বশেষ গত বছর ডিসেম্বরে এক্সএমসি-সিএমসি কনসোর্টিয়ামের সাথে ছয় বছরের চুক্তি সম্পাদন করেছে সরকার।

নতুন করে শনাক্ত সাড়ে ১৩ হাজার

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিন অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় অর্থাৎ রোববার সকাল আটটা থেকে সোমবার আটটা পর্যন্ত মোট ১৩ হাজার ৫০১ জন নতুন করে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। একই সময়ে ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। পরীক্ষা করা নমুনার বিপরীতে শনাক্তের হার প্রায় শতকরা ৩০ ভাগ।

সোমবারের সংখ্যাসহ ৮ মার্চ ২০২০ থেকে সারাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর মোট সংখ্যা প্রায় ১৮ লাখ। ও বছররে ১৮ মার্চ করোনাভাইরাসে বাংলাদেশে প্রথম রোগীর মৃত্যু হয়। স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাবে সোমবার পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন কমপক্ষে ২৮ হাজার ৩৯৪ জন।

স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া সর্বশেষ হিসাবে, নতুন করে আক্রান্ত মোট সাড়ে ১৩ হাজার রোগীর মধ্যে অর্ধেকের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছেন ঢাকা মহানগরীতে, আর আক্রান্তদের ৬২ ভাগই ঢাকা বিভাগের।

বড়ো মূল্য দিতে হতে পারে

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোশতাক হোসেন বেনারকে বলেন, যেহেতু ঢাকা মহানগরী এবং ঢাকা জেলা বাংলাদেশের সকল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র সেহেতু এখানে সংক্রমণ বেশি হবে সেটিই স্বাভাবিক এবং ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোর মানুষ সহজেই ঢাকায় কাজের জন্য আসে। সেকারণে সেসকল জেলায় সংক্রমণ বেশি রয়েছে।

তিনি বলেন, যেহেতু সরকার কোনো প্রকার লকডাউন দেয়নি সেহেতু মানুষ করোনাভাইরাসের সমস্যা বুঝতে চাইছেন না। স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না।

“সমস্যা আসলে দুদিকেই। জীবনের তাগিদে মানুষকে বের হতে হবে। আবার করোনাভাইরাসও একটি বড় সংকট। কিন্তু মানুষ আর করোনাভাইরাসকে ভয় করে না। তবে এভাবে যদি আমরা চলতে থাকি তাহলে আমাদের অনেক বড় মূল্য দিতে হতে পারে,” বলেন মোশতাক হোসেন।

তাঁর মতে, “আমরা স্বাস্থ্যবিধি মানলে, টিকা নিলেই সুরক্ষিত থাকতে পারি। এটি আমাদের বুঝতে হবে।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম বেনারকে বলেন, সরকার যে নতুন করে স্বাস্থ্যবিধি ঘোষণা করেছেন সেগুলো প্রতিপালন হচ্ছে না। সরকারের আদেশ কাগজেকলমেই রয়ে গেছে।

তিনি বলেন, “আমাদের দেশের সাম্প্রতিক মাসে দ্রুত সংক্রমণের বিস্তারের কারণ হয়তো ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট। কিন্তু মানুষ ওমিক্রনকে ভয় করছে না। এর কারণ ওমিক্রনে খুব বেশি হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে না। তবে আমরা এভাবে অবুঝ হলে, অবহেলা করলে পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে।”

তাঁর মতে, সংক্রমণের বিপরীতে কম প্রাণহানির কারণ টিকা কার্যক্রম।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন প্রায় নয় কোটি ৮০ লাখ মানুষ। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ছয় কোটি ১৬ লাখের বেশি মানুষ। বুস্টার ডোজ নিয়েছেন ১৫ লাখ ২১ হাজারের বেশি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।