করোনাভাইরাস: টিকার প্রথম ডোজ নেবার সময় বেঁধে দেওয়ায় বিশেষজ্ঞদের সমালোচনা
2022.02.16
ঢাকা

আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে করোনাভাইরাস টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার সরকারি আহবান যথার্থ নয় বলে মন্তব্য করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। জনগণকে কোনো সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে এভাবে সময় বেঁধে দেওয়া উচিত নয় বলে মনে করে তাঁরা।
“আমার মনে হয় না, ২৬ ফেব্রুয়ারির পর প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া বন্ধ করা ঠিক হবে। হয়ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এমনটা বলে দেখতে চাচ্ছে, এতে কেমন ‘রেসপন্স’ (সাড়া) আসে,” বুধবার বেনারকে বলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. চিন্ময় কান্তি দাস।
“তবে তারা যদি সত্যিই এটা বন্ধ করে, তবে তা নিঃসন্দেহে অবৈজ্ঞানিক একটি সিদ্ধান্ত হবে,” যোগ করেন বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে বসবাসকারী এই জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম মঙ্গলবার যে বক্তব্য দিয়েছেন তার সমালোচনা করে সরকারপন্থী ডাক্তারদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) রাজশাহী জেলার সভাপতি চিন্ময় বলেন, “রাষ্ট্রের কোনো কর্মচারী জনগণকে সেবা নেওয়ার জন্য কোনো সময় নির্ধারণ করে দিতে পারেন না। এটা সংবিধান বিরোধী।”
তবে “ব্যবস্থাপনার স্বার্থে কর্তৃপক্ষকে অনেক সময় এমন অনেক কিছুই করতে হয়,” উল্লেখ করে ঢাকায় বসবাসকারী জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. রুহুল ফুরকান সিদ্দিক বেনারকে বলেন, “নিশ্চয়ই সরকারের কোনো পরবর্তী পরিকল্পনা রয়েছে। টিকার প্রাপ্যতা, সংরক্ষণের সক্ষমতাসহ আরো অনেক দিক চিন্তা করেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগ থেকে অবসর নেওয়া এই অধ্যাপকেরও ধারণা, ২৬ ফেব্রুয়ারির পরও প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া বন্ধ হবে না।
“১২ বছরের কম বয়সীদের কিন্তু টিকা দেওয়া শুরুই হয়নি,” বলেন তিনি।
স্বাস্থ্যের ডিজি মঙ্গলবার জানান, ২৬ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে একদিনে এক কোটি কোভিড টিকা দেওয়া হবে। এরপর দ্বিতীয় ডোজ এবং বুস্টার ডোজ কার্যক্রম গতিশীল করা হবে।
“তখন আমরা দ্বিতীয় ডোজ এবং বুস্টার ডোজ নিয়ে ব্যস্ত থাকব। কাজেই যারা এখনো করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ নেননি, তারা বিলম্ব না করে নিকটস্থ টিকাদান কেন্দ্র থেকে টিকা নিয়ে নিন,” বলেন তিনি।
এ ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিষয়ক অনলাইন বুলেটিনে বুধবার সরকার জানিয়েছে, ওই দিন পর্যন্ত নিবন্ধন ছাড়াই টিকা নেওয়া যাবে।
যে কেউ যে কোনো কেন্দ্রে গিয়ে করোনাভাইরাসের টিকা নিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ডা. মো. শামসুল হক।
টিকা নিতে নিবন্ধন লাগবে না
গত বছর দেশে টিকাদান শুরুর পর থেকে নিবন্ধন করে টিকা নেওয়ার নিয়ম চালু ছিল। জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন সনদ কিংবা পাসপোর্ট নম্বর নিয়ে নিবন্ধনের পর মোবাইলে টিকার দিন জানিয়ে ক্ষুদেবার্তা আসার পর টিকা নেওয়া যেত।
তবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিবন্ধন না থাকলেও টিকা নেওয়া যাবে উল্লেখ করে ডা. শামসুল বলেন, “শুধু ‘লাইন লিস্টিং’ করে তাঁর (নিবন্ধন ছাড়া টিকে নিতে আসা ব্যক্তি) মোবাইল নম্বর দিয়ে টিকা নিতে পারবেন।”
টিকা নেওয়ার পর টিকা গ্রহীতাকে একটি কার্ড দেওয়া হবে। ওই কার্ড ব্যবহার করে পরবর্তীতে টিকার জন্য নিবন্ধন করা যাবে বলেও উল্লেখ করেন এই কর্মকর্তা।
“আমরা এই কার্ড ছাপিয়ে বিভিন্ন কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিয়েছি। যারা টিকা নেবেন তাঁদের যেহেতু কোনো ধরনের ডকুমেন্ট নাই, এই কার্ডটাই তাঁদের টিকার ডকুমেন্ট হিসেবে কাজ করবে,” যোগ করেন তিনি।
এর আগে সোমবার রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও একই তথ্য জানিয়েছিলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, দেশে ১২ বছরের বেশি ১৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষের মধ্যে ১২ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। এতে ৭০ শতাংশ মানুষ টিকার আওতায় আসবে।
২৬ ফেব্রুয়ারি এক কোটি টিকাদান কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে নানা কার্যক্রম নেওয়ার কথাও জানান ডা. শামসুল। এ ব্যাপারে ডা. রুহুল ও ডা. চিন্ময় মনে করেন, নিবন্ধনের ঝামেলা না থাকলে এই উদ্যোগ সফল করা সম্ভব।
এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে একদিনে ৭৬ লাখ ডোজের বেশি টিকা দেওয়া হয়েছিল।
গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া শুরু হয়। দুই মাস পর ৮ এপ্রিল শুরু হয় দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার কার্যক্রম এবং ২৮ ডিসেম্বর তৃতীয় ডোজ বা বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের হিসাবে, মঙ্গলবার পর্যন্ত সারাদেশে করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে ১০ কোটি ১১ লাখ ৯০ হাজারের বেশি মানুষকে। তাঁদের মধ্যে ৭ কোটি ২৮ লাখ ৮৩ হাজারের বেশি মানুষ দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন। বুস্টার ডোজ পেয়েছেন ২৯ লাখ ৯২ হাজারের বেশি মানুষ।
শনাক্ত নেমেছে ৪ হাজারের নিচে
করোনাভাইরাস রোগীর সংখ্যা এক মাস পর চার হাজারের নিচে নেমেছে বুধবার। এই দিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ৩২ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করে তিন হাজার হাজার ৯২৯ জনের শরীরে সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এ সময় মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের।
এর আগে গত ১৫ জানুয়ারি এক দিনে এর চেয়ে কম তিন হাজার ৪৭৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল।
বর্তমানে বাংলাদেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ২৩ হাজার ৩১ জনে, যার মধ্যে ২৮ হাজার ৮৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
খুলে দেওয়া হচ্ছে স্কুল-কলেজ
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ায় ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে পরামর্শ দিয়েছে করোনাবিষয়ক জাতীয় কমিটি।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বুধবার রাতে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের পর জাতীয় কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন। বৈঠকে যুক্ত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
এর আগে রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, “আমরা আশা করি এ মাসের শেষের দিকে অবস্থার পরিবর্তন হবে এবং সংক্রমণ কমবে। সেই সময় আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে পারব।”