সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাস আক্রান্ত এক বাংলাদেশির অবস্থা সঙ্কটাপন্ন
2020.02.19
ঢাকা

সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাস বা ‘কোভিড–১৯’ আক্রান্ত এক বাংলাদেশির অবস্থা বেশ ‘সঙ্কটাপন্ন’ বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। ওই ব্যক্তির শরীরে কোনো ওষুধ কাজ করছে না বলে ড. মোমেনকে ফোন করে জানিয়েছেন সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ভিভিয়ান ব্লাকৃষ্ণন।
বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য দেন ড. মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “সকালেই সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে ফোন করেছিলেন। তিনি জানালেন, সেখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে একজনের অবস্থা খুব ক্রিটিক্যাল।”
“এই বাংলাদেশির বয়স ৩৯ বছর। উনি বেশ কিছু দিন ধরেই শ্বাসকষ্ট এবং কিডনি জটিলতাসহ নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। এর মধ্যে তাঁর শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে,” বলেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়। চীনের বাইরেও এই ভাইরাসের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। চীনের পর করোনায় আক্রান্ত রোগী বেশি পাওয়া গেছে সিঙ্গাপুরে।
দেশটিতে থাকা বাংলাদেশিদের মধ্যে এ পর্যন্ত পাঁচ জনের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম একজন বাংলাদেশির আক্রান্তের খবর নিশ্চিত করেন সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকেরা। পরে আরও চার বাংলাদেশির এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর আসে।
এই পাঁচজনই সিঙ্গাপুরে সেলেটার অ্যারোস্পেস হাইটসের নির্মাণশ্রমিক। তাঁরা কখনো চীনে ভ্রমণ করেননি।
ওষুধ কাজ করছে না আক্রান্তের শরীরে
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সঙ্কটাপন্ন ওই বাংলাদেশি ১৩ দিন ধরে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রয়েছেন। বর্তমানে তাঁর ওষুধ কাজ করছে না। এজন্য সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ কিছুটা শঙ্কিত।
তিনি বলেন, “সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন তাঁকে (আক্রান্ত বাংলাদেশি) ‘টপ মেডিকেল সার্ভিস’ দেওয়া হচ্ছে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। তবে গতকাল থেকে ওষুধ রেসপন্স করছে না।”
সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপের প্রসঙ্গ টেনে ড. মোমেন বলেন, “আমি বললাম যদি উনার (করোনা আক্রান্ত বাংলাদেশির) মৃত্যু হয়, তাহলে পরিবার তো লাশ চাইবে। তিনি জানালেন, সেই ব্যবস্থাও তাঁর সরকার করবে।”
মন্ত্রী জানান, দেশটিতে যে কয়েকজন বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের চিকিৎসার পুরো খরচ সিঙ্গাপুর বহন করবে। সেখানে বাংলাদেশি কমিউনিটিকেও সিঙ্গাপুর সরকার সহযোগিতা করছে।
এক প্রশ্নের জবাবে এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, সিঙ্গাপুরে আক্রান্ত রোগীদের নাম সরকার জানে। তবে রোগীর ‘প্রাইভেসির’ স্বার্থে সিঙ্গাপুরে কর্তৃপক্ষ নাম প্রকাশ করতে চায় না।
‘অন্য বাংলাদেশিদের অবস্থা স্থিতিশীল’
সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অন্য চার বাংলাদেশির অবস্থা স্থিতিশীল বলে বেনারকে জানিয়েছেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, “করেনাভাইরাসে আক্রান্ত এটা নিশ্চিত হওয়ার পরেই এসব বাংলাদেশিদের কোয়ারাইন্টাইন (বিচ্ছিন্ন) করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ফলে সেখানে তাঁদেরকে দেখতে যাওয়ার সুযোগ নেই। তবে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আমাদেরকে জানিয়েছে একজন ছাড়া বাকি বাংলাদেশিদের অবস্থা ‘স্টেবল’।”
সঙ্কটাপন্ন বাংলাদেশির বিষয়ে হাইকমিশনার মোস্তাফিজুর বলেন, গত চার-পাঁচদিন ধরেই তাঁর একই অবস্থা। কোনো উন্নতি দেখছেন না ডাক্তাররা।”
আক্রান্ত বাংলাদেশিদের পরিবারের সাথে দূতাবাস সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছে বলেও জানান তিনি।
নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা বুধবার জানান, সিঙ্গাপুরের হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ওই বাংলাদেশি দীর্ঘদিন ধরে অ্যাজমায় ভুগছেন। শ্বাসকষ্ট নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পর তাঁর ‘কোভিড–১৯’ শনাক্ত হয়। আক্রান্ত অন্য চার বাংলাদেশি ভালো আছেন।
এদিকে বুধবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আইইডিসিআর জানিয়েছে, তাদের গবেষণাগারে এখন পর্যন্ত ৭৫ জনের নমুনা (লালা বা রক্ত) পরীক্ষা করা হয়েছে। কারও করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি।
চীনে থেকে ১৭১ বাংলাদেশিকে ফেরত আনা অনিশ্চিত
চীনের যে শহর থেকে এই ভাইরাসরে উৎপত্তি বলে ধারণা করা হচ্ছে, সেই উহান থেকে গত ১ ফেব্রুয়ারি ফেরত আনা ৩১২ জন বাংলাদেশি ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন শেষে নিজ নিজ পরিবারের কাছে ফিরেছেন। তাঁরা কেউই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন নিশ্চত হওয়ার পরেই তাঁদের ফিরতে দেওয়া হয়েছে বলে বেনারকে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন।
এর বাইরে চীনের হুবেই প্রদেশ থেকে আরো ১৭১ জন বাংলাদেশি ফেরার জন্য সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসে নাম নিবন্ধন করিয়েছেন।
তাঁদের ফেরত আনার বিষয়ে প্রশ্ন করলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, “চীন মনে করে তাঁদের আরো কিছু দিন রাখলে কোয়ারেন্টাইন ঠিকমতো হবে। তবে আমরা আলোচনা করছি কীভাবে তাঁদের ফিরিয়ে আনতে পারি। তবে এতে চীনকে সম্মত হতে হবে।”
“চীন তাঁদের সব ধরনের সুযোগ- সুবিধা দিচ্ছে। খাবার-পানি থেকে শুরু করে সকল জিনিস সরবরাহ করছে। এখন আর বাংলাদেশিদের কোনো অভিযোগ নেই,” বলেন তিনি।
তবে সোমবার এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, চীনের সম্মতি কোনো বিষয় না। সমস্যাটা মূলত টেকনিক্যাল।”
“কারণ, হুবেই থেকে এখন কোনো বিমান চলছে না। বাংলাদেশের বিমান গেলে সেটির পাইলট ও ক্রুরা অন্য দেশে ঢুকতে পারেন না। এটা বড় ধরনের জটিলতা। আমরা বিকল্প খুঁজছি।”
“তবে আমার পরামর্শ হলো, তাদেরকে এখনই ফিরিয়ে না আনাই ভালো। কারণ তাতে এই দেশের জন্য ঝুঁকি রয়েছে,” বলেন তিনি।
এদিকে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার দেশটির ৩১টি প্রাদেশিক অঞ্চলে করোনাভাইরাস সংক্রমণে মারা গেছেন ১৩৬ জন। এ নিয়ে চীনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২ হাজার ৪ জন হলো।
চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে ২৯ দেশ ও অঞ্চলে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে। চীনের বাইরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার সংখ্যা ছয়জন। আক্রান্তের তালিকায় নতুন করে ইরানের নাম এসেছে।