করোনাভাইরাস: ২৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশের ৭০ ভাগ মানুষ আসবে টিকার আওতায়

কামরান রেজা চৌধুরী
2022.02.25
ঢাকা
করোনাভাইরাস: ২৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশের ৭০ ভাগ মানুষ আসবে টিকার আওতায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ২৬ ফেব্রুয়ারি মধ্যে দেশের ৭০ ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে শুক্রবার ছুটির দিনেও খোলা রাখা হয় টিকাদান কেন্দ্র। প্রতিটি কেন্দ্রেরই ছিল মানুষের দীর্ঘ লাইন। ছবিটি নারায়ণগঞ্জ দেলপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্র থেকে তোলা। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২।
[বেনারনিউজ]

আগামীকাল শনিবারের মধ্যে দেশের প্রায় ১২ কোটি মানুষকে করোনাভাইরাস টিকার আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্মকর্তারা। এই লক্ষ্য পূরণে সময় লাগছে এক বছরের কিছু বেশি সময়।

২৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দেশের ৭০ ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো শুক্রবার টিকা কার্যক্রম চালিয়েছে সরকার। ছুটির দিনে সারাদেশে বিভিন্ন টিকা কেন্দ্রে ছিল উপচে পড়া ভিড়।

টিকা নিতে এসে হুড়োহুড়িতে সাভারে কমপক্ষে পাঁচজন আহত হয়েছেন, যাঁদের অধিকাংশই পোশাক কারখানার শ্রমিক।

কর্মকর্তারা বলছেন, শনিবার সারাদেশে ব্যাপক টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করা হবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর শুক্রবার বেনারকে বলেন, “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, দেশের প্রায় ১২ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে। আমরা ইতোমধ্যে ১২ বছরের ঊর্ধ্বে ১১ কোটির বেশি মানুষকে টিকা প্রদান করেছি।”

“শুক্রবারেও টিকা দেয়া হয়েছে, প্রতিটি টিকা কেন্দ্রে ছিল উপচে পড়া ভিড়। শনিবারের মধ্যে আমরা ১২ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনতে পারব,” বলেন তিনি।

প্রথম ডোজ টিকার পর কিছুদিন অপেক্ষা করতে হয় জানিয়ে ডা. আলমগীর বলেন, “সেকারণে সবাইকে দুই ডোজ টিকার আওতায় আনতে আমাদের দুই-এক মাস সময় লাগবে। তবে আমাদের হাতে প্রচুর টিকা রয়েছে। টিকার কোনো ঘাটতি নেই।”

এক ডোজ টিকা নিলেও ‘কিছুটা নিরাপদ

বাংলাদেশে গত বছর ২৭ জানুয়ারি করোনাভাইরাস টিকা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটের মাধ্যমে আমদানি করা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা দিয়ে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

তবে ৭০ লাখ টিকা বিক্রির পর বাংলাদেশে টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেয় সেরাম ইন্সটিটিউট। বন্ধ থাকে টিকা কার্যক্রম। কয়েকমাস পর চীন থেকে সিনোফার্ম টিকা দিয়ে টিকা কার্যক্রম পুনরায় শুরু করে সরকার।

তবে বিপত্তি দেখা দেয় শিশুদের টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে। কারণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ মোতাবেক আমেরিকার ফাইজার টিকা ছাড়া কোনো টিকা শিশুদের ওপর প্রয়োগ করা যায় না।

বাংলাদেশে শিশুসহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর জন্য অনুদান হিসাবে এ পর্যন্ত পাঁচ কোটি ফাইজার-বায়োএনটেক টিকা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকা, সিনোফার্ম, সিনোভ্যাক, ফাইজার-বায়োএনটেক, মডার্না ও জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে।

“বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী কোনো দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৭০ ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনলে এই মহামারি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলা যায়,” শুক্রবার বেনারকে বলেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা বিভাগের সাবেক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোশতাক হোসেন।

“আমরা আগামীকালের মধ্যে হয়তো সেই ৭০ ভাগ টিকা প্রদানের লক্ষ্য অর্জন করতে পারব,” জানিয়ে তিনি বলেন, এর মাঝেই “বড়ো অংশের মানুষ দুই ডোজ টিকা নিয়ে ফেলেছেন। এক ডোজ টিকা নিলেও আমরা কিছুটা নিরাপদ থাকব।”

ইউরোপ-আমেরিকা পূর্ব এশিয়াসহ বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী বেশ কিছু দেশ দুই ডোজ টিকা শেষ করে বর্তমানে তৃতীয় ডোজের টিকা দিচ্ছে বলে জানান ড. মোশতাক।

“আমরা সেই তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে আছি। আশা করি দুই-একমাসের মধ্যে আমাদের ৭০ ভাগ মানুষের সবাইকে দুই ডোজ টিকার আওতায় আনা সম্ভব হবে,” বলেন তিনি।

গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে টিকা কার্যক্রম শুরু হলেও মাঝখানে টিকা প্রাপ্তির সঙ্কট ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “তারপরও এক বছরের মধ্যে এই অর্জন কম নয়। আমরা টিকা সময়মতো পেলে অনেক আগেই টিকা কার্যক্রম শেষ করতে পারতাম।”

তাঁর মতে, বাংলাদেশের টিকা কার্যক্রম সফল হয়েছে “মূলত দেশের মানুষের জন্য। বাংলাদেশের মানুষ টিকা পছন্দ করে। প্রথম দিকে কিছুটা সংশয় থাকলেও কিছুদিন পর সেটি কেটে যায়।”

“উন্নত দেশগুলোতে যেমন বিভিন্ন গ্রুপ টিকার বিরুদ্ধে রাস্তায় আন্দোলন করছে, টিকা না নেয়ার পক্ষে যুক্তি দেখাচ্ছে সেখানে বাংলাদেশে সবাই টিকা নিচ্ছেন। এখন টিকা নেয়ার জন্য হুড়োহুড়ি চলছে,” বলেন ড. মোশতাক।

সংক্রমণের নিম্ন হারের কারণ ‘গবেষণা করতে হবে

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলামের মতে, দেশের ৭০ ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে পারায় “জীবনযাপন স্বাভাবিক পর্যায়ে আসবে।”

তবে “টিকা দেয়া হলেও আমরা প্রকৃতই এর সুফল পাচ্ছি কিনা সেটি নিয়ে গবেষণা করা দরকার,” বলে মনে করেন তিনি।

“গত কয়েকদিন সংক্রমণ হার এক সংখ্যায় রয়েছে। আজও পাঁচ দশমিক ৪৮ ভাগ। আমি মনে করেছিলাম এই হার আরেকটু কম হবে। সংক্রমণের এই নিম্ন হার টিকার কারণে, নাকি অন্য কোন কারণে—এটি বোঝা দরকার,” বেনারকে বলেন অধ্যাপক নজরুল।

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “গত বছরও মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সংক্রমণ কম ছিল। এরপর থেকে বৃদ্ধি পেতে থাকে। তখন তো টিকা দেয়াই হয়নি। তাহলে এবার কমলো কেন সেটি গবেষণা করতে হবে।”

বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। ১৮ মার্চ প্রথম রোগীর মৃত্যু হয়।

নতুন বছরের শুরু থেকেই সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ২৫ জানুয়ারি একদিনে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ৩৩ জন শনাক্ত হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে নতুন করে আরও এক হাজার ৪০৬ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যুবরণ করেছেন ১১ জন।

এ পর্যন্ত সারাদেশে ১৯ লাখ ৪১ হাজার ৫৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং প্রাণ হারিয়েছেন ২৯ হাজার ১৬ জন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।