করোনাভাইরাস: প্রবাসীদের এখনই দেশে না ফেরার পরামর্শ সরকারের
2020.03.12
ঢাকা

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বিদেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের না ফেরার পরামর্শ দিয়েছে সরকার। যেসব দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঘটেছে সেসব দেশ থেকে কেউ বাংলাদেশে ফিরলে তাঁকে নিজ বাসা বা বাড়িতে কমপক্ষে ১৪ দিন বদ্ধ ঘরে থাকতে বলা হয়েছে।
প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ বৃহস্পতিবার বেনারকে এই তথ্য জানান।
বুধবার দেশব্যাপি পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও পরামর্শ দিয়ে বলেন, কেউ দেশে ফিরলে নিজ উদ্যোগে যেন কোয়ারেন্টাইনে বা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকেন।
এদিকে বাংলাদেশ থেকে পর্যটকদের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে পেট্রোপোল-বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে পর্যটকদের ভারত প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে সেদেশের সরকার। বিষয়টি নিশ্চিত করে বেনাপোল চেক পোস্ট ইমিগ্রেশনের পরিদর্শক (তদন্ত) মহসিন খান বেনারকে জানান, এই নিষেধাজ্ঞা শনিবার থেকে কার্যকর হবে।
তবে দেশের সর্ববৃহৎ এই স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকবে কি না সে বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি।
মহসিন খান বলেন, বৃহস্পতিবার এক চিঠির মাধ্যমে ভারতের পেট্রোপোল ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যার পর নতুন কোনো যাত্রী তারা গ্রহণ করবে না। তবে যেসব বাংলাদেশি ভারতে আছেন এবং যেসব ভারতীয় বাংলাদেশে আছেন তাঁরা নিজ দেশে ফেরত যেতে পারবেন।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (গণসংযোগ) তাহেরা খন্দকার বেনারকে বলেন, আগামী ১৪ মার্চ থেকে ঢাকা থেকে কলকাতা ও দিল্লির মধ্যে চলাচলকারী সকল ফ্লাইট অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, “ভারত অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত আমরা ঢাকা থেকে ভারতগামী সকল ফ্লাইট বাতিল করেছি।”
বাংলাদেশ রেলওয়ের ইন্টারচেঞ্জ শাখার সহকারী পরিচালক হুমায়ূন কবির বেনারকে বলেন, “ভারতের পক্ষ থেকে আমাদের অনানুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে যে, করোনাভাইরাসের কারণে ঢাকা-কলকাতার মধ্যে চলাচলকারী ট্রেন বন্ধ থাকবে।
একইভাবে ঢাকা-শিলং এবং ঢাকা-শিলিগুড়ি রুটে চলাচলকারী বাস বন্ধ করে দিয়েছে মালিক সমিতি।
জানুয়ারি মাসে চীনে করোনাভাইরাস বিস্তার লাভ করলেও গত রোববার বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মোট তিনজন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের দুজনই ইতালি ফেরত পুরুষ, তৃতীয়জন এক ইতালি ফেরতের পরিবার সদস্য নারী।
এই ঘোষণার পর ১৭ মার্চের নির্ধারিত ঢাকা সফর বাতিল করেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, “আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত মোট তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের দুজন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তাঁরা খুব শিগগির বাড়ি ফিরে যাবেন। নতুন করে কোনো রোগী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি।”
মন্ত্রী বলেন, “আমরা প্রবাসী ভাইদের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, খুব প্রয়োজন না হলে এখন দেশে আসবেন না। যদি আসেন তাহলে আপনারা নিজ উদ্যোগে বাসায় আলাদা থাকবেন। কোনও সমস্যা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। আমাদের হটলাইনে ফোন করতে পারেন।”
এদিকে বুধবার দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে (ঢাকা–মাওয়া–ভাঙ্গা) উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হলেও পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত ভালো।”
তিনি জনগণের উদ্দ্যেশে বলেন, “করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে বিষয়টি লুকিয়ে না রেখে ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিতে হবে।”
এদিকে বুধবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেনের সভাপতিত্বে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদসহ কূটনীতিকরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “আমি প্রবাসী ভাইদের বলি, আমরা একটি বিশেষ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। আপনারা যেখানে আছেন সেখানেই থাকুন। সেই দেশের নিয়ম মেনে চলুন। দেশে আসার দরকার নেই।”
তিনি বলেন, “দেশে আসলে আপনাদের কমপক্ষে ১৪ দিন কোয়ারানটাইনে থাকতে হবে।”
মন্ত্রী বলেন, কয়েক মিলিয়ন বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করছেন। তাঁরা দেশে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকেন। এর মধ্যে যেসব দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঘটেছে, সেসব দেশের মধ্যে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান ও ইতালির নাগরিকদের জন্য অনঅ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় বাংলাদেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির অবনতি না হলেও বৃহস্পতিবার ইতালি থেকে দেশে আসা ৩০ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি ঢাকার কুয়েত মৈত্রি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে বেনারকে জানিয়েছেন হয়রত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক তৌহিদ-উল-আহসান।
তিনি বলেন, যে ফ্লাইটে ইতালি থেকে ওই বাংলাদেশি এসেছেন সেই ফ্লাইটের ২৯৯ জন যাত্রীকে বলা হয়েছে, তাঁরা যেন নিজ দায়িত্বে নিজেদের বাসায় থাকেন।
গত কয়েকদিনে করোনাভাইরাস থাকতে পারে সন্দেহে মোট ১৩ জনকে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতির অবনতি না হলেও এর বিস্তার বন্ধ করতে জনসমাগম নিরুৎসাহিত করছে সরকার। বৃহস্পতিবার সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অ্যাসেম্বলি বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। একের পর এক বন্ধ ঘোষণা করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।