করোনাভাইরাস মোকাবেলা: ২৬ মার্চ থেকে ১০ দিন ছুটি

কামরান রেজা চৌধুরী
2020.03.23
ঢাকা
020323_corona_1000.jpg করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের উদ্যোগে ঢাকায় বিভিন্ন গণপরিবহনে জীবাণুনাশক স্প্রে এবং সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করছেন এক কর্মী। ২৩ মার্চ ২০২০।
[ফোকাস বাংলা]

কাগজপত্রে ‘লকডাউন’ বা অবরুদ্ধ পরিস্থিতি বলা না হলেও দৃশ্যত বাংলাদেশের অবস্থা এখন তেমনই। দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তৃতি ঘটার প্রেক্ষাপটে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করতে এবং জনসাধারণের ঘরের বাইরে আসা বন্ধ করতে মঙ্গলবার থেকে সারা দেশে মাঠে নামছে সেনাবাহিনী।

বৃহস্পতিবার থেকে আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত টানা দশদিন জরুরি সেবা ছাড়া সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি দপ্তর বন্ধ থাকবে। সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

এদিকে সরকারের রোগতত্ত্ব বিভাগের পরিচালক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা সাংবাদিকদের জানান, সোমবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরেক ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেছেন। এর ফলে বাংলাদেশে বর্তমানে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল তিন।

তিনি বলেন, সোমবার নতুন করে আরও ছয়জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে তিনজন পুরুষ ও তিনজন নারী। এই ছয়জনসহ এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩৩।

ডা. ফ্লোরা জানান, নতুন আক্রান্তদের মধ্যে তিনজন স্বাস্থ্যকর্মী, যার মধ্যে দুজন নার্স ও একজন চিকিৎসক রয়েছেন।

ছুটি ঘোষণা

দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে করণীয় নির্ধারণ করতে সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদসহ গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার আলাদা বৈঠক করে করেন বলে সাংবাদিকদের জানান তাঁর মূখ্যসচিব আহমদ কায়কাউস।

ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে সাংবাদিক সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধ করতে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

তবে কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল এবং জরুরি সেবার ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত প্রযোজ্য হবে না বলে জানান তিনি।

বিশেষ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে না আসতে জনগণকে আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “২৪ মার্চ ২০২০ থেকে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে সামাজিক দূরত্ব ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার্থে বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনী জেলা প্রশাসককে সহায়তার জন্য নিয়োজিত থাকবে।”

তিনি বলেন, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন থাকবে।

এদিকে ২৪ মার্চ থেকে সামাজিক দূরত্ব ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও সন্দেহজনক ব্যক্তিদের কোয়ারেনটাইন ব্যবস্থা পর্যালোচনায় বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে বেসামরিক প্রশাসনকে সহয়াতার জন্য সশস্ত্র বাহিনী নিয়োজিত থাকবে বলে সোমবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সমাগম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিশেষ করে অসুস্থ, জ্বর, সর্দি-কাশি আক্রান্ত ব্যক্তিদের মসজিদে না যাওয়ার জন্য বারংবার নিষেধ করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, সম্প্রতি অসুস্থ এক ব্যক্তি মসজিদে যাওয়ার ফলে মৃত্যুবরণ করেছেন এবং আরও দু-একজন সংক্রমিত হয়েছেন।

এছাড়া গণপরিবহনে চলাচলও নিরুৎসাহিত করেন আনোয়ারুল ইসলাম।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে নিম্ন আয়ের কোনো ব্যক্তি শহরে জীবনযাপনে অক্ষম হলে সরকার তাঁকে ঘরে ফেরা কর্মসূচির অধীনে নিজ গ্রাম বা ঘরে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকেরা ব্যবস্থা নেবেন।

দরিদ্রদের জন্য ভাসানচর

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, “আপনারা জানেন যে ভাসানচরে এক লক্ষ লোকের পর্যাপ্ত আবাসন ও জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই সময়টাতে যদি কোনো দরিদ্র ব্যক্তি ভাসানচরে সরকারের আবাসন ও জীবিকা নির্বাহের সুযোগ নিতে চান, সে জন্য এটা ওপেন করে দেয়া হলো। জেলা প্রশাসন এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”

কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরিত করতে সরকারি অর্থে নোয়াখালীর ভাসানচরে উন্নত সুবিধাসম্পন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছে সরকার। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আপত্তির মুখে এক লাখ রোহিঙ্গাকে সেখানে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা পরে বাতিল করা হয়।

যোগাযোগ করা হলে নোয়াখালির জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস বেনারকে বলেন, “আমি সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জেনেছি। কিন্তু এখনো এব্যাপারে কোনো নির্দেশনা পাইনি।”

তিনি বলেন, “আগামীকাল বিকেলে একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। তখন এব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।”

গাম্বিয়ায় এক বাংলাদেশির মৃত্যু

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত শুক্রবার এক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে বলে সোমবার এক প্রতিবেদনে জানায় বার্তাসংস্থা এএফপি।

গাম্বিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এএফপি জানায়, ৭০ বছর বয়স্ক ওই বাংলাদেশি ছিলেন একজন ইমাম।

প্রতিবেশী দেশ সেনেগাল থেকে ১৩ মার্চ গাম্বিয়া যাওয়া ওই ইমাম দেশটির রাজধানী বানজুলের একটি মসজিদে থাকতেন। গাম্বিয়া আসার আগে তিনি ছয়টি দেশে ধর্মপ্রচারের কাজ করেছিলেন বলেও জানানো হয় ওই প্রতিবেদনে।

সবার জন্য সেবা নিশ্চিত করার আহ্বান

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সবার জন্য পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

সোমবার এক বিবৃতিতে সংস্থাটির এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্রাড অ্যাডামস বলেন, “কর্তৃপক্ষ গণসমাগমকে নিরুৎসাহিত করলেও তাঁরা এমন কিছু করছেন না যাতে ভরসা করা যায় যে তাঁরা সংকটটি যথাযথভাবে মোকাবেলা করছেন।”

করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে ১৮ মার্চ লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুরে স্থানীয় এক ধর্মীয় নেতা বিশেষ দোয়ার আয়োজন করেন। এতে কয়েক হাজার মানুষের সমাগম হয়।

ষোলো কোটির বেশি মানুষের দেশে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য শুধু ঢাকার রোগতত্ত্ব বিভাগে (আইইডিসিআর) একটি পরীক্ষাগার রয়েছে উল্লেখ করে রায়পুরের সমাবেশের প্রসঙ্গ টেনে বিবৃতিতে বলা হয়, “যে হাজার হাজার মানুষ ওই প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করেছেন, উদাহরণস্বরূপ বলা যায় তাঁদের ভাইরাস সংক্রমণ পরীক্ষা সম্ভব নয়।”

এতে বলা হয়, “বিভিন্ন সংবাদ থেকে জানা যায়, আইইডিসিআর এর হটলাইন কাজ করছে না, কিছু হাসপাতাল (করোনাভাইরাসের) উপসর্গ আছে এমন রোগীদের চিকিৎসাও দিচ্ছে না।”

করোনাভাইরাস সংক্রান্ত সঠিক তথ্য যথাসময়ে প্রকাশ এবং সবার জন্য সুলভে স্বাস্থ্যসেবা ও সহায়তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।