করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ঘরে বসে নামাজ ও উপাসনা করার নির্দেশ
2020.04.06
ঢাকা

করোনাভাইরাস ছড়ানো ঠেকাতে সরকারি ছুটি ঘোষণার ১১ দিনের মাথায় মুসল্লিদের নিজেদের ঘরে নামাজ পড়ার নির্দেশ দিলো বাংলাদেশ সরকার। এছাড়া অন্য ধর্মের অনুসারীরাও উপাসনালয়ে সমবেত হতে পারবেন না। তাঁদেরও নিজ বাসস্থানে উপাসনা করতে হবে।
সোমবার ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সাখাওয়াৎ হোসেনের সই করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে কেউ নির্দেশ অমান্য করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও উল্লেখ রয়েছে।
সব ধর্মের মূলনীতির আলোকে এবং জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে ধর্ম মন্ত্রণালয় এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা কমিটিকে অনুরোধ জানিয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠানে এই নির্দেশ লঙ্ঘিত হলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
এ বিষয়ে ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বেনারকে বলেন, প্রথমে তারা নম্রভাবে বলেছিলেন। কিন্তু কেউই সেসব কথা শোনেননি।
“সবাই নিজেদের মতো করে চলেছেন। ভাইরাস ছড়ানো ঠেকাতে সরকার তাই নিজেই কঠোর হয়েছে। নির্দেশনা না মানলে এখন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে,” বলেন তিনি।
উল্লেখ্য, মসজিদে দলবেঁধে নামাজ পড়তে যাওয়া মানুষের মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কার বিষয়টি দীর্ঘদিন দিন ধরে আলোচনায় ছিল। সম্প্রতি মালয়েশিয়া ও দিল্লিতে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার পেছনে তাবলিগ জামাতের জমায়েতকে অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। সংক্রমণ এড়াতে মক্কা এবং মদিনাতেও নামাজের জন্য জড়ো হওয়ার বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
গত শনিবার মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর পৌর এলাকার একটি মসজিদে ফরিদপুরের নগরকান্দি উপজেলা থেকে যাওয়া তাবলিগের এক সদস্যের করোনা সংক্রমণের বিষয়টি শনাক্ত হয়। ওইদিনই পৌর এলাকা লকডাউন করে স্থানীয় প্রশাসন।
তাঁর সঙ্গে থাকা তাবলিগ জামাতের ১২ সদস্য, সংস্পর্শে আসা স্থানীয় ছয়জন ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। এছাড়া করোনায় আক্রান্তদের ইতিহাস ঘেটে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানায়, সংক্রমিত হওয়াদের একটি অংশের মসজিদে যাতায়াত ছিল। এরপরই সরকার মসজিদে নামাজের বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করল।
নির্দেশনা যথার্থ: হেফাজতে ইসলাম
সরকারের এ নির্দেশনাকে শরিয়তের দৃষ্টিতে সঠিক ও যথার্থ বলে মন্তব্য করেছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় আমির আল্লামা আহমদ শফী।
সোমবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ইসলাম নিজের বা অন্যের ক্ষতির কারণ হওয়াকে সমর্থন করে না; বরং নিষেধ করে।”
করোনাভাইরাস মহামারি ঠেকাতে সরকারের নির্দেশনাকে মূল্যায়ন করা এবং তা উত্তমরূপে গ্রহণ ও পালন করা মানবতার কল্যাণে আমাদের অপরিহার্য কর্তব্য বলেও উল্লেখ করেন আল্লামা শফী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বাংলাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসজনিত কারণে আরও তিনজন মারা গেছেন। এতে মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ জনে।
এছাড়া গত ২৪ ঘন্টায় আরও ৩৫ ব্যক্তি কভিড-১৯ ভাইরাসে সংক্রামিত হয়েছেন। এই নিয়ে এখন বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১২৩ জন।
যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব মতে, সোমবার পর্যন্ত সারা বিশ্বে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ লাখের বেশি মানুষ, মারা গেছেন ৭৩ হাজারেও বেশি।
মসজিদ চালু থাকবে
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মসজিদে কেবল খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমরা নামাজ আদায় করবেন। জুমার জামাতে না গিয়ে মুসল্লিরা ঘরে জোহরের নামাজ পড়বেন। মসজিদে জামাত চালু রাখার জন্য খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমরা মিলে পাঁচ ওয়াক্তের নামাজে সর্বোচ্চ পাঁচজন এবং জুমার জামাতে সর্বোচ্চ দশজন অংশ নিতে পারবেন। বাইরের কোনো মুসল্লি মসজিদের জামাতে অংশ নিতে পারবেন না।
এছাড়া ওয়াজ মাহফিল, তাফসির মাহফিল, তাবলিগ বা মিলাদ মাহফিলের আয়োজনের ওপরও বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে তিলওয়াত, জিকির, ও দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও বিপদ মুক্তির প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে। অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরাও ধর্মীয় বা সামাজিক কোনো আচার-অনুষ্ঠানের জন্য জড়ো হতে পারবেন না।
প্রসঙ্গত, গত ২৯ মার্চ দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে মসজিদে মুসল্লি কম রাখার আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু তারপরও মসজিদে প্রতি ওয়াক্তে এবং জুমার নামাজর জামাতে বিপুল পরিমাণ মুসল্লির উপস্থিত হতেন।
এই পরিস্থিতে গত ৪ এপ্রিল দেশের সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সম্মিলিত প্রার্থনা বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়ে যৌথ বিবৃতি দেন দেশের ২৩ বিশিষ্ট চিকিৎসক।
বিবৃতিতে তাঁরা বলেছিলেন, “মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতে মুসলিমদের তাবলিগ জামাত ও জামাতে নামাজ পড়ার মাধ্যমে কোভিড-১৯ ছড়িয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় চার্চের প্রার্থনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই রোগের বিস্তার ঘটেছে।”
এ রকম বাস্তবতায় চিকিৎসকেরা আপৎলীন ব্যবস্থা হিসেবে গণসংক্রমণ প্রতিরোধে সম্মিলিত প্রার্থনা বন্ধের দাবি জানান।