করোনাভাইরাস মোকাবেলা: বেড়েছে সাধারণ ছুটি, সন্ধ্যার পর বের হওয়া নিষিদ্ধ
2020.04.10
ঢাকা

দেশে করোনাভাইরাসে একদিনে সর্বোচ্চ ছয়জনের মৃত্যুর পর ২৬ মার্চ থেকে চলমান সাধারণ ছুটি ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে সরকার।
শুক্রবার নতুন এক আদেশের মাধ্যমে ছুটি বৃদ্ধির পাশাপাশি সন্ধ্যা ছয়টার পর জনসাধারণের চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে বেনারকে এ কথা জানান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
“জনসাধারণকে ঘরে রাখার মাধ্যমে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বন্ধ করার উদ্দেশ্যে,” প্রতিদিন সন্ধ্যা ছয়টা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত জনসাধারণের চলাচল বন্ধ করা হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শুক্রবার জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী তৃতীয় দফায় বর্ধিত হয়ে সাপ্তাহিক বন্ধসহ এক মাসের এই ছুটি শেষ হবে ২৫ এপ্রিল।
প্রজ্ঞাপনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রশমনে জনগণকে ‘অবশ্যই ঘরে অবস্থান’ করার নির্দেশ দিয়ে ‘অতীব জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত’ ঘরের বাইরে বের না হতে অনুরোধ জানানো হয়।
এতে বলা হয়, সন্ধ্যা ছয়টার পর কেউ ঘরের বাইরে বের হতে পারবেন না এবং এই নির্দেশ অমান্য করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এই নির্দেশনায় এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় চলাচলও কঠোরভাবে সীমিত করা হয়েছে।
তবে জরুরি বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, ফায়ার সার্ভিস, পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেটসহ অন্যান্য পরিসেবার ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থা প্রযোজ্য হবে না।
এছাড়া কৃষি পণ্য, সার, কীটনাশক, জ্বালানি, সংবাদপত্র, খাদ্য, শিল্প পণ্য, চিকিৎসা সরঞ্জামাদি, জরুরি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহন এবং কাঁচা বাজার, খাবার, ওষুধের দোকান ও হাসপাতাল এ ছুটির আওতার বাইরে থাকবে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, প্রয়োজনে ঔষধশিল্প, উৎপাদন ও রপ্তানিনিমুখী শিল্প কারখানা চালু রাখা যাবে। মানুষের জীবন জীবিকার স্বার্থে রিকশা-ভ্যানসহ যানবাহন, রেল, বাস সার্ভিস পর্যায়ক্রমে চালু করা হবে বলেও জানানো হয় প্রজ্ঞাপনে।
এতে জানানো হয়, প্রয়োজন বিবেচনায় ছুটিকালীন অবস্থায় ‘সীমিত আকারে’ ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
“এই ভাইরাস প্রতিরোধ করতে হলে ঘরে থাকতে হবে এবং জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে,” মন্তব্য করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বেনারকে জানান, বর্তমানে জরুরি সেবাপ্রদানকারী ছাড়া সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে বিভিন্ন আদেশের মাধ্যমে সকল প্রকার সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক জনসমাগম নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ সরকার।
শুক্রবার মারা গেলেন ছয়জন
বাংলাদেশে সর্বশেষ করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করতে নিয়মিত অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে শুক্রবার সরকারের রোগতত্ত্ব বিভাগের পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, গত ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে মোট ৯৪ জন নতুন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। আর মারা গেছেন ছয়জন। একদিনে এটিই সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা।
তিনি বলেন, গত ২৪ ঘন্টায় প্রায় ১,২০০ রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। মৃতদের মধ্যে তিনজন ঢাকার, দুইজন নারায়ণগঞ্জ এবং একজন পটুয়াখালীর। ডা. ফ্লোরা বলেন, করোনাভাইরাসের মূল কেন্দ্র ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ।
শুক্রবারের সংখ্যা যোগ দিয়ে বাংলাদেশে এখন নিশ্চিত করোনাভাইরাস রোগীর সংখ্যা ৪২৪, আর এই ভাইরাস সংক্রমণে মারা গেছেন ২৭ জন।
বৃহস্পতিবারের তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কম হলেও মৃত্যু বেড়েছে। বৃহস্পতিবার নতুন রোগীর সংখ্যা ছিল ১১২ জন এবং মারা যান একজন।
এদিকে বর্তমানে দেশে মোট ১৭টি পরীক্ষাগারে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে বলে বেনারকে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
ডিসেম্বরে চীনের উহান শহর থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বাংলাদেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হন ৮ মার্চ আর প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৮ মার্চ।
যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, শুক্রবার পর্যন্ত সারা বিশ্বে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ লাখ ৭৩ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন এক লাখেরও বেশি।
মসজিদে জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি
গত সপ্তাহে এক আদেশের মাধ্যমে সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করেছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। মসজিদে না গিয়ে বাড়িতে নামাজ পড়ার নির্দেশ জারি করে সরকার।
সরকারি আদেশে শুক্রবার সারাদেশের প্রায় সকল মসজিদে আযান হলেও জুম্মার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়নি। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মসজিদের মাইকে ঘরে জোহরের নামাজ আদায় করতে বলতে শোনা গেছে।
বায়তুল মোকাররাম জাতীয় মসজিদে মুসল্লিরা এলেও তাঁদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি বলে বেনারকে জানান ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ।
তিনি বলেন, সরকারি ছুটি শেষ হওয়ার পর চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এপ্রিলের ২৫ তারিখের দিকে রোজা শুরু হবে।
মহাপরিচালক বলেন, “রোজার মধ্যে মানুষ মসজিদে নামাজ আদায় করতে যায় বেশি। আবার রাতে তারাবী নামাজ পড়তে প্রচুর মানুষ মসজিদে যায়। আমরা এখনও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেইনি। রোজার মধ্যে মসজিদ খুলে দেয়া হবে কি না সেটি নির্ভর করছে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির ওপর।”
আগামী সপ্তায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে জানিয়ে আনিস মাহমুদ বলেন, “আলেম-ওলামাদের পরামর্শে এব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে সরকার।”