স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সম্মানী ঘোষণা
2020.04.13
ঢাকা

বাঙালির সর্ববৃহৎ জাতীয় উৎসব পহেলা বৈশাখের আগের দিন সোমবার রাতে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে সবাইকে ঘরে থেকে নববর্ষ পালনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সাথে করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য ১০০ কোটি টাকার বিশেষ সম্মানীর ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
“বৃহত্তর জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে,” করোনাভাইরাস মোকাবেলার অংশ হিসেবে বহিরাঙ্গণের সকল অনুষ্ঠান ইতিমধ্যেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা ঘরে বসেই এবারের নববর্ষের আনন্দ উপভোগ করব।”
“আপনারা বিনা কারণে ঘরের বাইরে যাবেন না। অযথা কোথাও ভিড় করবেন না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করুন, পরিবারের সদস্যদের রক্ষা করুন,” বলেন প্রধানমন্ত্রী।
একইসাথে চিকিৎসক, নার্সসহ সকল স্বাস্থ্যকর্মী, স্থানীয় প্রশাসনের কর্মচারী, সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সব সদস্যের জন্য স্বাস্থ্য বীমারও ঘোষণা দেন তিনি।
একই দিন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের কমিউনিটি সংক্রমণ হয়েছে। আর এই সংক্রমণ ঠেকাতে দেশের সব মানুষকে অবশ্যই ঘরে থাকতে হবে।
‘দেশে কমিউনিটি সংক্রমণ ঘটেছে’
নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে সোমবার মন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, বাংলাদেশে গত ২৪ ঘন্টায় ১৮২ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন পাঁচজন।
তিনি বলেন, “দেশে কমিউনিটি সংক্রমণ ঘটেছে। এই সংক্রমণ যাতে আর বিস্তার লাভ না করে, সেজন্য আমাদের ঘরে থাকতে হবে।”
মন্ত্রী বলেন, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ করোনাভাইরাস সংক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে যাওয়া মানুষের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে।
কমিউনিটি সংক্রমণ তখনই বলা হয়, যখন স্থানীয় মানুষ আক্রান্ত হয়ে অন্যদের সংক্রমিত করে। এই ধাপ মহামারীর আগের অবস্থা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া বেনারকে বলেন, “যারা বিদেশ থেকে এসেছিলেন তাঁদের প্রথমেই শক্তভাবে কোয়ারেন্টিন করা গেলে কমিউনিটি সংক্রমণ হতো না।”
তিনি বলেন, “সরকার এবং চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে এবং হচ্ছে যে ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। কিন্তু এটি খুবই দুঃখজনক যে, মানুষ সামাজিক দূরত্ব রক্ষা না করে দলে দলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এর ফলাফল ভয়াবহ হতে পারে।”
“আমরা জানি না এই সংক্রমণ কত দূর যাবে। তবে এখনও যদি আমরা সচেতন হই তাহলে করোনাভাইরাসের মহামারি থেকে বাঁচতে পারব,” বলেন ডা. কনক।
গত ডিসেম্বরে চীন থেকে সারা বিশ্বে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া শুরু হয়। বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হন ৮ মার্চ আর প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৮ মার্চ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সোমবার পর্যন্ত দেশে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০৩, মৃত্যু হয়েছে ৩৯ জনের।
যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, সোমবার পর্যন্ত সারা বিশ্বে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১৯ লাখ ৪ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন এক লাখ ১৮ হাজারেরও বেশি।
স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য সম্মানী
শেখ হাসিনা বলেন, “যেসব সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী প্রত্যক্ষভাবে করোনাভাইরাস রোগীদের নিয়ে কাজ করছেন, ইতোমধ্যে তাঁদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছি। তাঁদের বিশেষ সম্মানী দেওয়া হবে। এ জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।”
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সশস্ত্র বাহিনী ও বিজিবি সদস্য এবং প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মচারীর জন্য বীমার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
স্বাস্থ্যবীমা ও জীবনবীমার জন্য ৭৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “দায়িত্ব পালনকালে যদি কেউ আক্রান্ত হন, তাহলে পদমর্যাদা অনুযায়ী প্রত্যেকের জন্য থাকছে পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকার স্বাস্থ্যবীমা এবং মৃত্যুর ক্ষেত্রে এর পরিমাণ পাঁচগুণ বৃদ্ধি পাবে।”
“আমরা বিশ্ব ব্যবস্থার বাইরে নই। বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কা আমাদের অর্থনীতির জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে,” মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে ৯৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ দশমিক ৩ শতাংশ।
যদিও মোট বরাদ্দের খাতভিত্তিক বিস্তারিত জানাননি প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী জানান, স্বল্প-আয়ের মানুষদের বিনামূল্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করার জন্য পাঁচ লাখ মেট্রিক টন চাল এবং এক লাখ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ করা হয়েছে। যার মোট মূল্য দুই হাজার ৫০৩ কোটি টাকা।
শহরাঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রয় কার্যক্রম চালু করা হয়েছে, যার আওতায় আগামী তিন মাসে ৭৪ হাজার মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এ জন্য ২৫১ কোটি টাকা ভর্তুকি প্রদান করতে হবে।”
দিনমজুর ও রিকশাচালকসহ অন্যান্য পেশার যেসব মানুষ দীর্ঘ ছুটি বা লক-ডাউনের ফলে কাজ হারিয়েছেন, দ্রুত তাঁদের নামের তালিকা ও ব্যাংক হিসাব তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
তিনি জানান, তালিকা তৈরি হলে সরাসরি তাঁদের ব্যাংক হিসাবে এককালীন নগদ অর্থ পাঠানো হবে। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭৬০ কোটি টাকা।
এছাড়া সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় পরিচালিত বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের জন্য ভাতা কর্মসূচি খাতে ৮১৫ কোটি টাকা বরাদ্দা রাখা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে রোববার দেশের কৃষকদের জন্য প্রধানমন্ত্রী পাঁচ হাজার কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেন। এছাড়া গত ৫ এপ্রিল ৬৭,৭৫০ কোটি টাকার চারটি প্যাকেজ এবং ২৫ মার্চ তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি প্যাজেক ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।