রমজানে তারাবির নামাজ ঘরে পড়তে হবে
2020.04.16
ঢাকা

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হওয়ায় আসন্ন রোজার মধ্যে মসজিদে না গিয়ে ঘরে বসে তারাবিসহ অন্যান্য নামাজ আদায় করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবার দেশে সর্বোচ্চ ১০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে, আক্রান্ত হয়েছেন ৩৪১ জন। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, সারা দেশ এখন ঝুঁকিপূর্ণ।
এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নিজেই ঘরে তারাবির নামাজ পড়ার আহ্বান জানান। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বলছে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ধর্মকর্ম করার ব্যাপারে ধর্ম মন্ত্রণালয় যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তা বলবৎ থাকবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ বেনারকে বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে রোজায় নামাজের ব্যাপারে কথা বলেছেন। তিনি জনগণকে ঘরে বসে তারাবির নামাজ আদায় করার কথা বলেছেন। সেকারণে আমরাও বলছি, রোজার মধ্যে নামাজ মসজিদে পড়া যাবে না।”
তিনি বলেন, “করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে আমরা ৬ এপ্রিল আদেশের মাধ্যমে জানিয়েছি যে, মসজিদসহ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে জনসমাগম করা যাবে না। এই আদেশ বলবৎ থাকবে।”
করোনাভাইরাস ছড়ানো ঠেকাতে গত ৬ এপ্রিল মুসল্লিদের বাড়িতে নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
এতে বলা হয়, মসজিদে জামাত চালু রাখার জন্য খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমরা মিলে পাঁচ ওয়াক্তের নামাজে সর্বোচ্চ পাঁচজন এবং জুমার জামাতে সর্বোচ্চ দশজন অংশ নিতে পারবেন। বাইরের কোনো মুসল্লি মসজিদের জামাতে অংশ নিতে পারবেন না।
বৃহস্পতিবার ঢাকা বিভাগের জেলা পর্যায়ের প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী রোজার মধ্যে ঘরে বসে ইবাদত করার কথা বলেন।
তিনি বলেন, “আপনারা দেখেছেন, সৌদি আরব নামাজ, জামাত বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি তারাবির নামাজ সেখানে হবে না, সবাই ঘরে পড়বে। খুব সীমিত আকারে সেখানে তারা করছে। তারা নিষেধ করে দিয়েছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “ঠিক এভাবে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, এমনকি ভ্যাটিকান সিটি থেকে শুরু করে সব জায়গায় তারা সুরক্ষার ব্যবস্থা নিয়েছে। নিজেদের সুরক্ষিত করা, অন্যকে সুরক্ষিত করা। কাজেই এ বিষয়গুলো থেকে আমাদেরও শিক্ষার বিষয় আছে।”
তিনি বলেন, “যে কারণে আমরা মসজিদে না গিয়ে নিজের ঘরে বসে নামাজ পড়ব। কারণ আল্লাহর ইবাদত তো আপনি যেকোনো জায়গায় বসে করতে পারেন।”
সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃত্যু
বৃহস্পতিবার করোনাভাইরাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। একইসাথে ওই দিনই সর্বোচ্চ ৩৪১ জন নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। বুধবার এই সংখ্যা ছিল ২১৯ জন।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মোট মারা গেছেন ৬০ জন, মোট আক্রান্ত ১৫৭২ জন।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে তিনজন করোনাভাইরাস রোগীর খোঁজ পাওয়ার কথা নিশ্চিত করে রোগতত্ত্ব বিভাগ। দশদিন পর ১৮ মার্চ করোনাভাইরাস আক্রান্ত এক রোগীর মৃত্যু নিশ্চিত করে সরকার।
যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২১ লাখেরও বেশি মানুষ, মারা গেছেন এক লাখ ৪০ হাজারের বেশি।
সারাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ, নতুন হটস্পট গাজীপুর
বৃহস্পতিবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, “যেহেতু বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় এই রোগের সংক্রমণ ঘটেছে, সেহেতু সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ এর ১১(১) ধারার ক্ষমতাবলে সমগ্র বাংলাদেশকে সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করা হলো।”
বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জনদের দেয়া তথ্যের বরাত দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বেনারকে বলেন, “এখন পর্যন্ত জেলা পর্যায়ে যে ইনফেকশন ছড়িয়েছে তার শতকরা ৮০ ভাগ হয়েছে নারায়ণগঞ্জ থেকে যাওয়া মানুষদের মাধ্যমে। আর বাকি সংক্রমণ ঘটেছে ঢাকা থেকে যাওয়া এবং ইতালি ফেরত মানুষদের মাধ্যমে।”
এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০ জেলায় করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “নারায়ণগঞ্জে লকডাউন শক্তভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। তবে বর্তমানে গাজীপুর আরেকটি করোনাভাইরাসের হটস্পট হতে যাচ্ছে। সেখানকার মানুষগুলো লকডাউন মানছেন না।”
মন্ত্রী বলেন, “বর্তমানে করোনাভাইরাস রোগীর সংখ্যা এবং মৃত্যু দুটিই ঊর্ধ্বমুখী। যদি আমরা গাজীপুর, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকাসহ অন্যান্য আক্রান্ত জেলাগুলোতে লকডাউন কঠোরভাবে পালন করতে না পারি, তাহলে আশঙ্কা করা যায় আগামী সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে করোনাভাইরাস রোগীর সংখ্যা সর্বোচ্চ পর্যায়ে যাবে।”
তবে এরপরে “সংখ্যা কমে আসবে,” বলে দাবি করেন মন্ত্রী।
আমাদের লকডাউন কঠোরভাবে মানতে হবে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, “তবে লকডাউন বাড়বে কি না সেটি প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত।”
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে ছুটি ঘোষণা করে সরকার। প্রথমে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত থাকলেও পরে দুই দফায় বাড়িয়ে ছুটির মেয়াদ ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। বন্ধ করা হয়েছে মসজিদসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উপসনালয়।
এদিকে ছুটির মেয়াদ বাড়ালেও নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ অভাবের তাড়নায় ঘর থেকে বের হয়ে আসছেন। এই পরিস্থিতিতে “দরিদ্র মানুষদের কষ্ট লাঘব করতে কমপক্ষে আরও ৫০ লাখ মানুষকে স্বল্প মূল্যে খাদ্যসামগ্রী তুলে দিতে রেশন কার্ড দেয়া হবে,” বলে বৃহস্পতিবার প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সমস্যায় পড়া বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর জন্য এ পর্যন্ত ৯৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। যার মধ্যে নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য বিনামূল্যে খাদ্য সরবরাহ ও ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।