করোনাভাইরাস: ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বিচারকাজ পরিচালনার সিদ্ধান্ত
2020.05.07
ঢাকা

মামলাজট কমানোসহ বিচার পাওয়া নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০’ জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে (গণভবন) অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠকের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, আগামী সপ্তাহে রাষ্ট্রপতি এই অধ্যাদেশে সই করবেন বলে তিনি আশা করছেন। অধ্যাদেশটি জারি হলে ভিডিও কনফারেন্সিংসহ ডিজিটাল মাধ্যমে আদালতে হাজির না হয়ে বিচারকাজ পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, জাতীয় সংসদের বাইরে আইন করতে চাইলে রাষ্ট্রপতির সাক্ষরে অধ্যাদেশ জারি করতে হয়, পরে জাতীয় সংসদ তা অনুমোদন করে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের অধ্যাদেশ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানান।
“সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশে কোভিড–১৯ সংক্রমণের কারণে এক মাসের বেশি সময় ধরে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া আদালত প্রায় বন্ধ রয়েছে। এতে মামলাজট যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি বিচারপ্রার্থীরা বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই প্রেক্ষাপটে সংসদ অধিবেশন না থাকায় অধ্যাদেশটি জারি হতে যাচ্ছে,” জানান খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিচার চলাকালে আদালতে মামলার পক্ষ বা বিপক্ষ থাকে। দুই পক্ষের নিযুক্ত আইনজীবী এবং সাক্ষীদের সশরীর উপস্থিতির মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল বেনারকে বলেন, “আদালত কীভাবে চলবে, কীভাবে কার্যক্রম পরিচালিত হবে সেটা সম্পূর্ণভাবে প্রধান বিচারপতি এবং সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের ওপর নির্ভর করবে। তবে আমরা মনে করি নতুন কোনোকিছুর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে শুরুতে খটকা লাগলেও সেটি মানিয়ে নেওয়া যাবে।”
“তবে ডিজটাল বিচার ব্যবস্থা চালুর জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর প্রশিক্ষণ দরকার,” বলেন রুহুল কুদ্দুস কাজল।
তাঁর মতে, করোনার মতো মাহামারি বা দুর্যোগে এটা স্বল্পমেয়াদী ব্যবস্থা হতে পারে। তবে আমাদের প্রচলিত ধারার বিচার কাঠামো এবং বিচারিক প্রক্রিয়ার বিকল্প এটা হতে পারে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৭০৬ জন এবং মারা গেছেন ১৩ জন।
এ নিয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৪২৫ ও মৃত ১৯৯ জনে।
যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭ লাখ ৮৪ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন দুই লাখ ৬৪ হাজারের বেশি।
সরকারি চাকুরেদের জন্য নির্দেশ
রাষ্ট্র ও সরকার সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিরূপ মন্তব্য সম্বলিত লেখা, এমনকি এ ধরনের অন্যের লেখায় লাইক ও শেয়ার দেওয়া থেকে বিরত থাকতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকার পরিমার্জিত পরিপত্রে বৃহস্পতিবার এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। এই নির্দেশনা অমান্যকারীদের শাস্তির কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয় ওই প্রজ্ঞাপনে।
করোনাভাইরাসে পরিস্থিতিতে সরকারের সমালোচনার কারণে সাংবাদিক, লেখক, কার্টুনিস্টসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের মধ্যেই সরকারি চাকুরিজীবীদের জন্য এই বার্তা আসল।
তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, সরকারি চাকুরিজীবী হলেও প্রত্যেকের মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকা উচিত।
সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব আবু আলম মো. শহীদ খানের মতে, “সম্প্রতি কোনো কোনো সরকারি কর্মকর্তা বিশেষ করে চিকিৎসকেরা মাস্ক বা স্বাস্থ্য সরঞ্জামের অভাব নিয়ে কথা বলেছেন। সম্ভবত সেসব সমালোচনা নিবৃত করার চেষ্টায় এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
তবে তাঁর মতে, এ ধরনের আদেশ দিয়ে সমালোচনা ঠেকানো যায় না।
সাবেক ওই সচিব বেনারকে বলেন, “এ ধরনের পরিপত্র দিয়ে মতামতের প্রবাহ বন্ধ করা যায় না। কোনো তথ্যই এখন আর তালাচাবি দিয়ে রাখা যায় না।”
“যেকোনো নাগরিকের যেকোনো বিষয়ে মন্তব্য করার স্বাধীনতা থাকা উচিত। এই মন্তব্য বা সমালোচনা রাষ্ট্র ও সরকারের ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তা সমাধান করতে সহায়তা করে,” বলেন সাবেক এই সরকারি কর্মকর্তা।
আবু আলম মনে করেন, সরকারের উচিত সমালোচনার বিষয়গুলো তদন্ত করে ত্রুটি থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।
এর আগে ২০১৫ সালের ৪ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানিয়ে নির্দেশনা জারি করেছিল। ওই নির্দেশনাটি পরে বিভিন্ন সময় পরিমার্জন করা হয়।