করোনাভাইরাসে দেশে প্রথম কোনো কারাবন্দির মৃত্যু
2020.05.12
ঢাকা

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কোনো বন্দির মৃত্যুর ঘটনা মঙ্গলবার নিশ্চিত করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আহমদ হোসেন (৫৩) গত রোববার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তাঁর মরদেহ থেকে নমুনা পরীক্ষার পর জানা যায় তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন।
এই তথ্য জানিয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল জলিল মঙ্গলবার বেনারকে বলেন, হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া সিলেটের কানাইঘাট এলাকার বাসিন্দা আহমদ হোসেনকে কারাগারে নেওয়া হয় ৫ মার্চ।
বন্দি অবস্থায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে কারা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। ৭ মে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে সিলেটের ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওই হাসপাতাল তাঁকে করোনাভাইরাস চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত শহরের সৈয়দ শামসুদ্দিন হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।
সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ মে আহমদ হোসেন মারা যান জানিয়ে আব্দুল জলিল বলেন, “তাঁর মরদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করার পর করোনাভাইরাস পজিটিভ আসে।”
বর্তমানে দেশের ৬৮টি কারাগারে মোট ২৬ জন কারারক্ষী ও আসামি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে রয়েছেন বলে বেনারকে জানান কারা অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক মো. মনজুর হোসেন।
“আর কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৪২৬ কারারক্ষী ও আসামি,” বলেন তিনি।
বাংলাদেশের কারাগারগুলোর মোট ধারণক্ষমতা ৪১ হাজার ৩১৪ জন জানিয়ে মনজুর হোসেন বলেন, এর বিপরীতে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৬৮টি কারাগারে রয়েছেন ৮৮ হাজার ৭০২ বন্দি।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর কারাগার থেকে বন্দির সংখ্যা কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে বেনারকে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
“আমাদের কারাগারগুলোতে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি আসামি রয়েছে,” মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বেনারকে বলেন, “করোনাভাইরাস সংক্রমণের আগে থেকেই আমরা লঘু দণ্ডে দণ্ডিত বন্দিদের মুক্তি দেয়ার উদ্যোগ নেই।”
তিনি বলেন, “ইতিমধ্যে আমরা দুই হাজারের বেশি বন্দিকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
কারা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ১২ মে পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে মুক্তি পেয়েছেন দুই হাজার ৩২৯ আসামি। এছাড়া কারাগারগুলোতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ভালো: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও মৃত্যুর হারের দিক দিয়ে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি এখনো ‘ভালো’ বলে বেনারকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
ঢাকা বিভাগ বাদ দিলে দেশের বাকি এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা শতকরা ১৪ ভাগের কিছু বেশি উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “সেই হিসাবে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ভালো। বর্তমানে রোগীর সংখ্যা বাড়লেও মৃত্যুর হার সেই হিসাবে কম।”
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে “ডিজি সাহেবের ব্যাপারে আপনারা তো জানেন। এ নিয়ে বলার কিছু নেই,” বলে মন্তব্য করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে মারা গেছেন ১১ জন, আক্রান্ত নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৯৬৯ জন।
এ নিয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৬৬০ ও মৃত ২৫০ জনে।
যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, মঙ্গলবার পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৪২ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন দুই লাখ ৮৯ হাজারের বেশি।
ছুটি বাড়ানো হতে পারে
মঙ্গলবার রাজধানীর জীবনযাত্রা ছিল অনেকটাই স্বাভাবিক। রাস্তাঘাটে বাস ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলেছে।
১০ মে থেকে শপিং মল স্বল্প পরিসরে খুলে দেয়ার পর ব্যাপক হারে জনসমাগম বেড়ে যাবার কারণে চলমান সরকারি ছুটি বৃদ্ধি করা হতে পারে বলে মঙ্গলবার বেনারকে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
তিনি বলেন, “মানুষ যেভাবে কেনাকাটা করতে নেমেছে, তাতে আমি মনে করি চলমান ছুটির মেয়াদ বাড়ানো প্রয়োজন।”
“তবে সব কিছু নির্ভর করছে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের ওপর। কারণ, সামনে ঈদসহ আর্থিক অবস্থা সচল করার বিষয় রয়েছে,” বলেন তিনি।
সব দিক বিবেচনা করে সরকার ছুটি বৃদ্ধির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।