ক্রমেই বাড়ছে করোনভাইরাসের সংক্রমণ, আরোও বাড়ার আশঙ্কা
2020.05.26
ঢাকা

ক্রমেই বেড়ে চলেছে বাংলাদেশে করোনভাইরাসের সংক্রমণ। ঈদের ছুটিসহ গত চারদিনে এই ভাইরাসের সংক্রমণে মারা গেছেন ৯০ জন। আক্রান্ত হয়েছেন সাড়ে ছয় হাজারের বেশি মানুষ। এই তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের।
মঙ্গলবার পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৬ হাজার ৭৫১ জন। মোট মারা গেছেন ৫২২ জন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মারাত্মক দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি। তাঁদের মতে, ঈদের ছুটিতে গাদাগাদি করে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার ফলে ঢাকার বাইরের পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ১,১৬৬ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আর মৃত্যুবরণ করেছেন ২১ জন।
এর মাঝে একদিনে সর্বোচ্চ ২৮ জন মারা গেছেন রোববার। সর্বোচ্চ আক্রান্ত ১,৯৭৫ জন শনাক্ত হয়েছেন সোমবার।
বাংলাদেশে প্রথম করোনভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে ৮ মার্চ। আর ১৮ মার্চ করোনা আক্রান্ত প্রথম রোগীর মৃত্যু হয়। প্রথম দিকে সংক্রমণের হার খুব কম হলেও এপ্রিল মাসের শেষের দিক থেকে বাড়তে থাকে সংক্রমণের সংখ্যা।
৮ মে দেশের সকল মসজিদ খুলে দেয়া হয়। ১০ মে থেকে ঈদ শপিংয়ের জন্য সীমিত আকারে খুলে দেয়া হয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এর পর থেকে সংক্রমণ আরও বেড়ে যায়।
এর মাঝে স্বাস্থ্য নির্দেশনা উপেক্ষা করে লাখ লাখ মানুষ ঈদ করতে যান গ্রামের বাড়িতে।
যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, মঙ্গলবার পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৫ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন তিন লাখ ৪৮ হাজারের বেশি।
পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে?
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বাংলাদেশে প্রতি দশ লাখে সর্বনিম্ন পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া।
পরীক্ষা করা নমুনাগুলোর মধ্যে শতকরা ২০ ভাগের করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ছে জানিয়ে তিনি বেনারকে বলেন, “এটি বৈশ্বিক হার বিবেচনা করলে কিছুটা বেশি।”
এই সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করে তিনি বলেন, “লাখ লাখ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে গেছে। ঈদের জামাতে অনেক জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি মানেননি অনেক মানুষ।”
“যারা গ্রামে গেছেন তাঁদের মাধ্যমে করোনাভাইরাস দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে,” মন্তব্য করে ডা. কনক কান্তি বলেন “যারা গ্রাম গিয়েছিলেন তাঁরা আবার ঢাকায় ফেরা শুরু করবেন। সেখানেও স্বাস্থ্যবিধি মানা হবে বলে মনে হয় না।”
তাঁর মতে আরো দুসপ্তাহ পরে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোরই সংখ্যা বাড়তে পারে।
“মানুষ যদি ঘরে থাকত, লকডাউন মানতো তাহলে হয়তো আমরা এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতাম না,” বলেন অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা গেছেন, সানবিমস ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও শিক্ষাবিদ এবং শিল্পপতি ও তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সৈয়দ মনজুর এলাহীর স্ত্রী নিলুফার মঞ্জুর (৭৪)। পরিবারের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের কাছ থেকে তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
সৈয়দ মনজুর এলাহী নিজেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।
শুক্রবার রাত এগারটার দিকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দেশের অন্যতম বড় ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলম’র পরিচালক মোরশেদ আলম।
এদিকে এখন পর্যন্ত চার হাজার ৫৩ জন পুলিশ সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও ১৪ জন পুলিশ সদস্য এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে মঙ্গলবার জানিয়েছে পুলিশ সদরদপ্তর।
মঙ্গলবার পর্যন্ত করোনভাইরাসে মোট ১৮৭ জন সাংবাদিক আক্রান্ত ও একজন মারা গেছেন বলে বেনারকে জানান ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহকারী সাংবাদিক আহমেদ ফয়েজ।
আক্রান্তদের ১৭০ জন ঢাকায় এবং ১৭ জন ঢাকার বাইরে কর্মরত সাংবাদিক বলেও জানান তিনি।
“করোনাভাইরাস আমাদের কোন অবস্থায় নিয়ে যাবে সেটা আল্লায় জানেন। কেউ তো রক্ষা পাচ্ছে না। সবাই আমরা ভয়ে আছি, কি যে হয়,” বেনারকে বলেন মিরপুর-১২ নম্বর এলাকার দোকানদার মো. মিজান।
এদিকে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে গত সপ্তায় বাংলাদেশে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। এই ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশে কমপক্ষে ২৬ জন প্রাণ হারান বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যের বরাত দিয়ে সোমবারে প্রকাশিত বাংলাদেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি প্রতিবেদনে জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে বাংলাদেশে কমপক্ষে ১১’শ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে বেনারকে জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।
“পূর্ণাঙ্গ ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নিরূপণ করতে আমাদের আরও কয়েকদিন সময় লেগে যাবে,” বলেন তিনি।
২৬ রোহিঙ্গা আক্রান্ত
মঙ্গলবার পর্যন্ত মোট ২৬ জন রোহিঙ্গা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে বেনারকে জানান কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. অনুপম বড়ুয়া। তবে এখন পর্যন্ত কোনো রোহিঙ্গা এই রোগে মৃত্যুবরণ করেননি।
তিনি জানান, সব মিলিয়ে কক্সবাজার জেলায় এখন করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩৮১জন।
কক্সবাজার থেকে প্রতিবেদন তৈরিতে সহয়তা করেছেন সুনীল বড়ুয়া।