করোনাভাইরাস: এক দিনে আক্রান্ত আড়াই হাজারের বেশি
2020.05.29
ঢাকা
অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে বাংলাদেশে ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা আড়াই হাজার ছাড়িয়েছে। এক দিনের ব্যবধানে সংক্রমণের হার বেড়েছে ২০ শতাংশ।
সরকার সীমিত আকারে রোববার থেকে অফিস-আদালত ও গণপরিবহন চালুর ঘোষণা দেওয়ার পরদিনই এই তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। বৃহস্পতিবার সরকার ঘোষণা দেয় যে, সীমিত আকারে অফিস ও গণপরিবহন খুলে দেওয়া হবে। শুক্রবার এ নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক হয় সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে।
আক্রান্তের সংখ্যা অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পাশাপাশি গত ২৪ ঘন্টায় মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের। শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে এই তথ্য জানানো হয়। একই সময়ে দুই হাজার ৫২৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়।
“করোনা সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতির মধ্যেই রবিবার থেকে অফিস-আদালত ও গণপরিবহন খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের পরিণতি আসলে কী হতে যাচ্ছে তা ১৫ জুনের মধ্যেই পরিস্কার হয়ে যাবে,” বেনারকে বলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. রুহুল ফুরকান সিদ্দিক।
গত বৃহস্পতিবার এক প্রজ্ঞাপনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানায়, ১৫ জুন পর্যন্ত সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় সীমিত আকারে চলবে।
এছাড়া শর্তসাপেক্ষে সীমিত পরিসরে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত বিধি নিশ্চিত করে গণপরিবহন, যাত্রীবাহী নৌযান, রেল চলাচল করতে পারবে বলেও জানানো হয় প্রজ্ঞাপনে।
এর মধ্যে কেবল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকছে পুরোপুরি।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. ফুরকানের ধারণা, আগামীতে সংক্রমণের হার আরও বাড়বে। এটা মাথায় রেখে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান বা গণপরিবহনসহ প্রতিটি ক্ষেত্রের জন্য বিশেষায়িত স্বাস্থ্যবিধি প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৪২ হাজার ৮৪৪ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। মারা গেছেন ৫৮২ জন এবং সুস্থ হয়েছেন নয় হাজার ১৫ জন।
মোট আক্রান্তের বিপরীতে দেশে সুস্থতার হার ২১ দশমিক ০৪ শতাংশ ও মৃত্যুর হার এক দশমিক ৩৬ শতাংশ।
গত ২৪ মে পরীক্ষাকৃত নমুনার বিপরীতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৭ শতাংশ, ২৯ মে এই সংখ্যা ২২ শতাংশ।
“একদিনে পাঁচ শতাধিক রোগী বাড়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক। তা ছাড়া পরীক্ষা করা মানুষের ২২ শতাংশ আক্রান্ত হওয়াটা অ্যালার্মিং বিষয়,” বেনারকে বলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক।
যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, শুক্রবার পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৮ লাখ ৭৮ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন তিন লাখ ৬২ হাজারের বেশি।
সবকিছু খুলে দেওয়ার সমালোচনা
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে সবকিছু খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বড় ধরনের ভুল। এই সিদ্ধান্তে সংক্রমনের হার আরো বাড়াবে বলে শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানান তিনি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী শুক্রবার এক অনলাইনে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, সরকার ছুটি প্রত্যাহার করে করোনাভাইরাসকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
“গণবিরোধী ও অগণতান্ত্রিক সরকারের সিদ্ধান্ত জনগণের অনুকূলে হবে না, এটাই স্বাভাবিক। তারা নিজেদের টিকে থাকার স্বার্থে জনগণের জীবনবিনাশী সিদ্ধান্ত নিতে কুণ্ঠাবোধ করে না,” বলেন তিনি।
বিএনপির অভিযোগ সরকার দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে লুকোচুরি খেলছে। একদিকে মৃত্যু ও আক্রান্তের সঠিক পরিসংখ্যান তো দিচ্ছেই না, অন্যদিকে এই ভাইরাসকে আক্রমণের সুযোগ করে দিচ্ছে।
একই দিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, “বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মৃত্যু ও সংক্রমণ উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছালেও সার্বিক দিক বিবেচনা করে লকডাউন শিথিল করা হচ্ছে।”
“জনগণের জীবনের পাশাপাশি জীবিকার গতি সচল রাখতে শেখ হাসিনার সরকার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে সাধারণ ছুটি না বাড়ানোর এবং গণপরিবহন চালুর বিষয়ে শর্তসাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছে,” বলেন তিনি।
গণপরিবহন চালুর বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সঙ্গে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের এক মতবিনিময় সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে এই বক্তব্য দেন ওবায়দুল কাদের।
গণপরিবহনের জন্য বিশেষ নির্দেশনা
গণপরিবহনে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে মালিক-শ্রমিকদের বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। তিনি জানান, স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্ব ও শারীরিক দূরত্ব কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। বাস টার্মিনালে কোনোভাবেই ভিড় করা যাবে না। তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে যাত্রীরা গাড়ির জন্য লাইনে দাঁড়াবেন এবং টিকিট কাটবেন।
বাসে কোনও যাত্রী দাঁড়িয়ে যেতে পারবেন না। বাসের সব সিটে যাত্রী নেওয়া যাবে না। অর্ধেক সিট খালি রাখতে হবে। পরিবারের সদস্য হলে পাশের সিটে বসানো যাবে, অন্যথায় নয়। যাত্রী, চালক, সহকারী ও কাউন্টারের কর্মী সবার জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক।
এদিকে অফিস ও গণপরিবহন খুলে দেওয়ার ঘোষণায় ঢাকামুখী মানুষের ভিড় বাড়ছে। শুক্রবার দুই ফেরিঘাট আরিচা ও মাওয়ায় ছিল ঢাকামুখী মানুষের ভিড়। রাজধানীর জীবনযাত্রা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসছে।