পোশাক শ্রমিকদের করোনা শনাক্তে বিজিএমইএ’র ল্যাব

জেসমিন পাপড়ি
2020.06.04
ঢাকা
200604_Garment_story-1000.JPG বকেয়া বেতন ও কারখানা খোলার দাবিতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ। করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাবে দেশের পোশাক কারখানাগুলো সংকটে পড়ায় জুন থেকেই কমী ছাঁটাই শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। ০১ জুন ২০২০।
[নিউজরুম ফটো]

পোশাক শ্রমিকদের করোনাভাইরাস শনাক্তে ঢাকার পাশ্ববর্তী গাজীপুরের চন্দ্রায় একটি অত্যাধুনিক ‘পিসিআর ল্যাব’ (পলিমারি চেইন রি-এ্যাকশন ল্যাব) স্থাপন করেছে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুসারে এই ল্যাব তৈরি প্রসঙ্গে বিজিএমইএ জানায়, এখানে প্রতিদিন চারশ শ্রমিকের করোনা পরীক্ষা করা সম্ভব হবে।

বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ল্যাবটি উদ্বোধন করা হয়। গাজীপুর ছাড়াও সাভার, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামেও পর্যায়ক্রমে এ ধরনের ল্যাব তৈরি করা হবে বলে জানায় বিজিএমইএ।

একই অনুষ্ঠানে বিজিএমইএ সভাপতি ‍রুবানা হক জানান, করোনাভাইরাস মহামারিতে দেশের পোশাক কারখানাগুলো সক্ষমতার অর্ধেক ব্যবহার করে কাজ চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে জুন মাস থেকেই কর্মী ছাঁটাই শুরু হতে পারে।

করোনা সংকটের কারণে পোশাক খাতে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ধাক্কা লেগেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পোশাক শিল্পের বাস্তব অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, “পহেলা জুন থেকে আসলে ছাঁটাই হবে। এটা একটা অনাকাঙ্খিত বাস্তবতা। শতকরা ৫৫ ভাগ সক্ষমতায় কারখানাগুলো চললে আমাদের পক্ষে ছাঁটাই ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।”

তবে বেকার হয়ে পড়া শ্রমিকদের পুনর্বাসনে সরকারের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহের কথা জানান তিনি।

শ্রমিক নেতারা বলছেন, দেশে করোনার সংক্রমণ যখন বাড়ছে তখন শ্রমিকদের স্বাস্থ্যগত এবং জীবিকার নিরাপত্তা নিয়ে না ভেবে কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেওয়াটা উদ্বেগের বিষয়।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভা প্রধান তাসলিমা আক্তার বেনারকে বলেন, “বাতিল হওয়া কিছু ক্রয় আদেশ মালিকেরা ফেরত পেয়েছেন। এর মানে কাজ চালু হচ্ছে। এই সময় কর্মী ছাঁটাইয়ের প্রশ্ন কেন আসবে?”

“করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার এই বিপদের সময়ে শ্রমিকরা যাতে স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা এবং জীবিকা নিয়ে উদ্বিগ্ন না হন, সে বিষয় সামনে আসা উচিত। কোনো অর্থনৈতিক চাপ আসলে তা মালিক এবং সরকারের মোকাবেলা করা উচিত। তা না করে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেওয়া উদ্বেগের বিষয়,” বলেন তিনি।

বিজিএমইএর করোনা শণাক্তকরণ ল্যাব স্থাপন প্রসঙ্গে তাসলিমা আক্তার বেনারকে বলেন, “এই খাতের ৪০ লাখ শ্রমিকের জন্য চারটি ল্যাব যথেষ্ট নয়। পোশাক শ্রমিকেরা যেসব এলাকায় বসবাস করেন তাঁদের আশেপাশে শ্রমজীবীদের সংখ্যা অনেক। সেই সংখ্যা অনুযায়ী এটা যথেষ্ট নয়।”

তিনি বলেন, “আমরা প্রতিদিন খবর পাচ্ছি বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিকেরা অসুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। অথচ করোনার টেস্ট করানোর ‍সুযোগ পাচ্ছেন না। এমনকি অসুস্থতা নিয়েও অনেকে কাজ করছেন।”

পোশাক শ্রমিকদের করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য এই ল্যাব স্থাপনে সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি। বিজিএমই এ জানায়, ল্যাব স্থাপনের পাশাপাশি নারী শ্রমিকদের জন্য আলাদা আইসোলেশন সেন্টারও করা হবে।

বিজিএমইএ জানায়, কারখানায় গিয়ে করোনার উপসর্গ থাকা শ্রমিকদের নমুনা সংগ্রহ করা হবে। পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হলে আইসোলেশনে রেখে শ্রমিকদের চিকিৎসা দেওয়া হবে।

বুধবার রাত পর্যন্ত ২৬৪ জন পোশাক কর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন উল্লেখ করে রুবানা হক জানান, তাঁদের সবার চিকিৎসার সব ব্যয় কারখানার মালিকেরা বহন করছেন।

তবে শ্রমিক নেত্রী তাসলিমা আক্তার মনে করেন, এই সংখ্যা সঠিক নয়। কারণ, শ্রমিকদের বড় একটি অংশ করোনা পরীক্ষার সুযোগই পাচ্ছেন না।

বিজিএমইএর করোনা ল্যাব উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান উপস্থিত ছিলেন।

দেশের লক্ষ লক্ষ শ্রমিক এই শিল্পের সাথে জড়িত উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “করোনায় পোশাক খাতের রপ্তানি আদেশ বাতিলের বিষয়ে বিভিন্ন দেশের সাথে আলাপ চলছে। এই মুহূর্তে আসলে ধৈর্য্য ধরতে হবে। কারণ ক্রেতারাও পোশাক নিয়ে সমস্যায় আছেন।”

“তবে ধৈর্য্য ধরে সংকট কাটিয়ে ওঠা গেলে বাংলাদেশ বেশি ব্যবসা পাবে এবং এই শিল্পের সংকটও কেটে যাবে,” বলেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৫৭ হাজার ৫৬৩ জন, মারা গেছেন ৭৮১ জন।

যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, সারা বিশ্বে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৫ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন তিন লাখ ৮৭ হাজারের বেশি।

২৬ শতাংশ অর্ডার ফেরত এসেছে

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, বিজিএমইএর অন্তর্ভুক্ত কারখানা ছিল ২ হাজার ২৭৪টি, এখন এক হাজার ৯২৬টি চলছে। বেশ কিছু কারখানা বন্ধ হয়েছে।”

তিনি বলেন, “করোনার এই সময়ে প্রায় ৩ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানির ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ শতাংশ ফেরত এসেছে। তবে যারা ফেরত এসেছেন তাঁরা বিভিন্ন শর্ত দিচ্ছেন।”

পোশাকখাতের ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “শুধু মার্চ থেকে মে পর্যন্ত সামগ্রিক বিবেচনায় তাৎক্ষণিক প্রভাব হচ্ছে ৫ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা।”

আগামীতে শতকরা ৩০ ভাগ অর্ডার কমার আশঙ্কা প্রকাশ করে রুবানা হক বলেন, “জুনে আছি ৫৫ শতাংশ ক্যাপাসিটিতে। জুলাইতে কী হবে জানি না। তবে যাই হোক এই অর্থ বছরে একেবারে কমে গেলেও রপ্তানি হবে ২৩ বিলিয়ন ডলার।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।