করোনাভাইরাস: মৃত্যু ও সংক্রমণ বাড়ছে আবার, এক মাসের বিধিনিষেধ শুরু
2021.06.17

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৬৩ জন, যা গত ৪৫ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা।একই সময়ে নতুন করে করোনার সংক্রমণ চিহ্নিত হয়েছে তিন হাজার ৮৪০ জনের দেহে।
বৃহস্পতিবার নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর আগের দিন মৃত্যু হয়েছিল ৬০ জনের, আক্রান্ত হয়েছিলেন তিন হাজার ৯৫৬ জন নতুন রোগী।
করোনা পরিস্থিতি আবারও অবনতি হতে থাকায় বৃহস্পতিবার থেকে সারা দেশে চলমান বিধিনিষেধ আগামী ১৫ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
এদিকে করোনাভাইরাসের ভারতীয় বা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ঢাকাসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
সম্প্রতি শুধু ঢাকায় শনাক্ত রোগীদের ৬৮ শতাংশ ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বলে এক গবেষণা শেষে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা সংস্থা আইসিডিডিআরবি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, লক ডাউন ঘোষণা করেও তা কঠোরভাবে পালন না করার কারণেই দেশে আবারও করোনার প্রকোপ বাড়ছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. এমএইচ চৌধুরী লেলিন বেনারকে বলেন, “কাগজে কলমে কঠোর বিধি নিষেধের কথা বলা হলেও বাস্তবতা হলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাদে কোথাও এই বিধি নিষেধের বালাই নেই। বরং সবখানে গাদাগাদি বা উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে।”
তাঁর মতে, “সীমান্ত দিয়ে আসা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টকে রোধ করার জন্য প্রথম কাজ ছিল বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সিলগালা করা। অর্থাৎ বৈধ-অবৈধ সব ধরনের যাতায়াত বন্ধ করা। কিন্তু সেটা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।”
“করোনা প্রবণ অঞ্চলে লক ডাউন দেওয়া হলেও তা ঢিলেঢালাভাবে চলছে। এ কারণে করোনাপ্রবণ অঞ্চল থেকে যানবাহনে করে লোক দেশের অন্যান্য অঞ্চলে যেতে পারছে। ফলে করোনা ছড়িয়ে যাচ্ছে,” বলেন তিনি।
করোনা শনাক্ত ব্যক্তি ও তাঁর পরিবারের কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা, প্রয়োজনে আর্থিক সহায়তা, এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে ডাক্তার, নার্স বা অক্সিজেন সঙ্কট মেটাতে একটি কেন্দ্রীয় মেডিকেল পুল গঠন করা দরকার ছিল বলে মনে করেন ডা. লেলিন।
“সীমান্ত পেরিয়ে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল পর্যন্ত ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে। জনগণকে সাথে নিয়ে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে লক ডাউন পরিচালনা করতে হবে। না হলে ভারতের মতো মানবিক বিপর্যয় হতে পারে,” বলেন তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মোট আট লাখ ৪১ হাজার ৮৭ জন। আর মোট মৃত্যু হয়েছে ১৩ হাজার ৩৪৫ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৭৬ হাজার ৪৬৬ জন।
বিধি নিষেধ বেড়েছে এক মাস
গত কয়েকদিন ধরে করোনার সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে বিদ্যমান বিধিনিষেধ ১৬ জুন মধ্যরাত থেকে আগামী ১৫ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত চলবে বলে বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, এসময় সব সরকারি-বেসরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা থাকবে। তবে পর্যটনস্থল, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান (বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান, জন্মদিন, পিকনিক পার্টি ইত্যাদি), রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরা সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিক্রি ও সরবরাহ করতে পারবে এবং আসন সংখ্যার অর্ধেক সেবাগ্রহীতাকে সেবা প্রদান করতে পারবে। মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে আন্তঃজেলাসহ সব ধরনের গণপরিবহন আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে পারবে।
উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা জেলাগুলোর জেলা প্রশাসকরা সংশ্লিষ্ট কারিগরি কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে নিজ নিজ এলাকার সংক্রমণ প্রতিরোধে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন বলে জানানো হয় প্রজ্ঞাপনে।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। তখন সারা দেশে লক ডাউন দেয় সরকার। গত বছরের শেষ দিকে এসে সংক্রমণ কমে আসে। তবে এ বছরের মার্চ থেকে আবারও সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যায়। এ অবস্থায় গত ৫ এপ্রিল থেকে মানুষের চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, যা এখনো বহাল রয়েছে।