প্রতি পাঁচটি নমুনার একটিতে শনাক্ত হচ্ছে করোনাভাইরাস
2021.06.23
ঢাকা

বুধবার বাংলাদেশে প্রতি পাঁচটি নমুনা পরীক্ষা করে একটিতে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে, যা মাত্র এক মাস আগেও ছিল প্রতি দশটিতে একটির নিচে।
বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত একদিনে দেশে নতুন করে ৫ হাজার ৭২৭ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা করা প্রতি একশ’টি নমুনায় করোনা শনাক্তের হার ২০ এর বেশি, যা ঠিক এক মাস আগে ২৩ মে ছিল ৮.৯ শতাংশ। গত দুই দিনও নমুনার বিপরীতে আক্রান্তের হার ছিল ১৯ শতাংশের বেশি।
রোগীর পাশাপাশি মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৯ এপ্রিলের পর এটাই একদিনে সর্বাধিক মৃত্যু, সেদিন ৮৮ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
শনাক্তের এই দৈনিক হারকে আশঙ্কাজনক হিসেবে দেখছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের অভিযোগ, সংক্রমণ ঠেকাতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছে না সরকার।
কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও ভাইরোলজিস্ট ড. নজরুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে আমরা যে পদ্ধতি অবলম্বন করছি, সেটা সংক্রমণ প্রতিরোধে সক্ষম নয়।”
“এখন বিভিন্ন জেলা আলাদাভাবে লকডাউন ঘোষণা করেছে। কিন্তু ছোট ছোট এলাকায় করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। সারা দেশটাই এখন করোনার রেড জোন হয়ে উঠছে,” বলেন তিনি।
ড. নজরুলের মতে, শুধু লক ডাউন দিয়ে নয়, “আক্রান্ত পরিবারকে কোয়ারেন্টিনে রাখা থেকে শুরু করে করোনামুক্ত হওয়া পর্যন্ত সার্বিক সহায়তা করা প্রয়োজন।”
পাশাপাশি, ঘরের বাইরে প্রত্যেকের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “করোনা পরিস্থিতি যে আকার নিয়েছে তাতে মনে হচ্ছে সংক্রমণের হার দীর্ঘদিন ধরে বাড়তে থাকবে।”
এখনো করোনার চিকিৎসার জন্য দেশের সকল জেলায় নিবিড় পর্যবেক্ষণ ইউনিট (আইসিইউ) স্থাপন না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন ড. নজরুল।
করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে ব্যক্তিগত সচেতনতার বিকল্প নেই বলে মনে করেন রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর।
তিনি বেনারকে বলেন, “ব্যক্তিগত সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। আমার জীবন আমার। আমি আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারি-এ কথা নিজে না বুঝলে রাষ্ট্র ইনফোর্স করতে পারে না।”
“তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে। মাস্ক পরতে হবে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে,” বলেন ওই কর্মকর্তা।
পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যেতে পারে
স্বাস্থ্যবিধি এবং সরকারের দেওয়া বিধিনিষেধ না মানলে চলমান করোনা পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক পর্যায়ে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক রোবেদ আমিন বলেন, “সীমান্তবর্তী এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কোভিড–১৯ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে।”
ঢাকার চারপাশে কঠোর লকডাউন দেবার পরেও দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে উল্লেখ করে রোবেদ আমিন আরোপিত বিধিনিষেধ মানতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রয়োজনে কঠোর হওয়ার অনুরোধ করেন।
তিনি বলেন, “নিত্যদিনের মতো সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে। এর ব্যত্যয় হলে পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক পর্যায়ে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।”
নমুনার বিপরীতে সংক্রমণের হার টানা তিন সপ্তাহ পাঁচ শতাংশ বা তার নিচে রাখা গেলে “পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকবে,” জানিয়ে তিনি বলেন, “কিন্তু আমরা সেটা পারিনি।”
টিকার জন্য এডিবির ঋণ
করোনা প্রতিরোধী ভ্যাকসিন কিনতে বাংলাদেশের জন্য ৯৪ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। গত ২২ জুন ম্যানিলাভিত্তিক এই ঋণদাতা সংস্থার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে করোনাভাইরাসের টিকা কিনতে সহযোগিতা করার জন্য গত ডিসেম্বরে ৯০০ কোটি ডলারের ‘এশিয়া-প্যাসিফিক ভ্যাকসিন একসেস ফ্যাসিলিটি’ চালু করেছিল এডিবি। এর আওতায় ওই অর্থ পাচ্ছে বাংলাদেশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন আট লাখ, ৬৬ হাজার ৮৭৭ জন, মৃত্যু হয়েছে ১৩ হাজার ৭৮৭ জনের।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ কোটি ৯৩ লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন ৩৮ লাখ ৮৫ হাজারের বেশি।