পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের

জেসমিন পাপড়ি
2020.06.30
ঢাকা
200630_US-BD_Conversation_1000.jpg করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক রোগীর কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করছেন একজন স্বাস্থ্যকর্মী। ১৮ জুন ২০২০।
[বেনারনিউজ]

করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবেলা, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসহ দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন ইস্যুতে পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র।

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রণায় জানায়, আগের দিন দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যকার ফোনালাপে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ফোনালাপে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এ দেশের স্বাস্থ্যখাতে যুক্তরাষ্ট্রকে বিনিয়োগের আহবান জানান। পাশাপাশি কভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলায় তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশকে আগামী দু’বছর যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার অনুরোধও করেন তিনি।

তৈরি পোশাক খাতের বাস্তবতা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের ক্রেতারা ক্রয়াদেশ বাতিল করায় এ খাতে কর্মরত শ্রমিকরা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী।”

এ ছাড়া ড. মোমেন বাংলাদেশের আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসনে যুক্তরাষ্ট্রকে আরো দৃঢ় ভূমিকা রাখার অনুরোধ করেন।

তিনি বলেন, “রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে চুক্তির বাস্তবায়নে মিয়ানমার সময় ক্ষেপণ করছে।”

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অব্যাহত উদারতার জন্য প্রসংশা করেন।

তিনি জানান, “যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা হিসেবে ৮২০ মিলিয়ন ডলার প্রদান করেছে, যার বেশির ভাগই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কর্মসূচির জন্য।”

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রহমান বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে পারে। কারণ, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দেশটির বড় ভূমিকা পালন করার ‍সযোগ রয়েছে।”

তিনি বলেন, “মিয়ানমার বিরাট এই জনগোষ্ঠীকে ফেরতে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও কভিড-১৯ মহামারির সুযোগে টালবাহানা করছে। দেশটির ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ জরুরি।”

“এছাড়া কভিড-১৯ মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের সহযোগিতা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই দ্বিপাক্ষিকভাবে বিষয়টি আরো আলোচনায় আসা উচিত,” মনে করেন ড. তারেক।

৪৩ মিলিয়ন ডলার সহায়তা যুক্তরাষ্ট্রের

আলাপকালে ড. মোমেন বলেন, “করোনা মহামারি সারা পৃথিবীকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এ সমস্যা মোকাবেলায় পৃথিবীর সকল দেশের পারস্পারিক অংশীদারিত্ব প্রয়োজন।”

এ বিষয়ে পারস্পারিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

এ বিষয়ে সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, মাইকেল পম্পেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সাথে আলাপকালে কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় অব্যাহত সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করেন।

মাইক পম্পেও উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্র করোনা মহামারি মোকাবেলায় বাংলাদেশের সাহায্যের জন্য ৪৩ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জরুরি চিকিৎসা ও সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম তৈরি ও সরবরাহের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে মহামারি মোকাবেলায় বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েও আলোচনা করেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে মানবপাচার রোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ধাপে উন্নয়নের প্রশংসা করেন মাইক পম্পেও। এ বিষয়ে ড. মোমেন যুক্তরাষ্ট্রেকে ধন্যবাদ জানান।

এছাড়াও দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য স্বচ্ছতা ও তথ্য প্রাপ্তির গুরুত্ব নিয়েও আলোচনা করেন দুই মন্ত্রী।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি

করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবেলায় ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের অপসারণ দাবি করেছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা।

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই করোনা মোকাবেলায় অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম-দুর্নীতি ও সমন্বয়হীনতার অভিযোগ তোলেন তাঁরা।

তবে সমালোচনার জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই মহামারি মোকাবেলায় সক্ষমতা বৃদ্ধির নানা দিক তুলে ধরেন।

এদিকে মঙ্গলবারই বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সর্বোচ্চ রেকর্ড তৈরি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে মারা গেছেন ৬৪ জন। একই সময়ে আক্রান্ত হিসেবে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন তিন হাজার ৬৮২ জন।

“বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৬ শতাংশ। ভারতে এই হার ৬ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ১৫ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ১৪ শতাংশ,” উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “সবাই কাজ করেছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।”

দেশের হাসপাতালগুলোতে মোট শয্যার ৪০ শতাংশ খালি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত প্রায় ১৪ হাজার শয্যায় চার হাজার রোগী আছে।”

এর আগে সংসদে আলোচনায় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ অভিযোগ করে বলেন, “আমাদের অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই।”

বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ দেশে করোনা পরীক্ষার অপর্যাপ্ততা তুলে ধরে বলেন, “প্রতিদিন যে পরীক্ষা হচ্ছে, তার ২৩ শতাংশ পজিটিভ আসছে। পরীক্ষার ফলও পেতে হচ্ছে ১০-১৫ দিন পরে। ফলে সংক্রমণের হার বেড়ে যাচ্ছে।”

এছাড়া করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যর্থতার জন্য জাতীয় পার্টির সাংসদ পীর ফজলুর রহমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী বদলেরও দাবি জানান সংসদে।

দোকানপাট খোলা রাখার সময় বাড়ল

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে অফিস ও গণপরিবহন চলাচল আগামী ৩ আগস্ট পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। মঙ্গলবার রাতে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, ওষুধের দোকান ছাড়া অন্য সব দোকান, শপিং মল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকবে, যা আগে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ছিল।

এ সময় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।

উল্লেখ্য, মার্চের প্রথম দিকে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ২৬ মার্চ থেকে কয়েক দফায় ৩০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার।

পরে ৩১ মে থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে অফিস ও গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত দেশে মোট করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এক লাখ ৪৫ হাজার ৪৮৩ জন এবং এ রোগে মারা গেছেন এক হাজার ৮৪৭ জন।

যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন মোট এক কোটি তিন লাখ ৮৯ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন পাঁচ লাখ আট হাজারের বেশি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।