করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর বিধিনিষেধ শুরু, অমান্য করায় জেল ও জরিমানা
2021.07.01
ঢাকা

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সপ্তাহজুড়ে কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হওয়ার প্রথমদিন বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে যে, গত বছর মার্চের পর ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এই পরিস্থিতির মধ্যে সরকারে বিধিনিষেধ অমান্য করে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বের হওয়ার অভিযোগে একই দিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আড়াইশ’ জনের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এরাসহ ট্রাফিক বিভাগ, অপরাধ বিভাগ ও ভ্রাম্যমাণ আদালত মিলিয়ে মোট ৪৯৮ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার ইফতেখায়রুল ইসলাম।
“নিয়ম না মানায় বিভিন্ন ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ৪ লাখ ৯২ হাজার ৫০৭ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেয়া হয়েছে আটজনকে,” জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার দেশে একদিনে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। একই দিন নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন আট হাজার ৩০১ জন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সারা দেশে বৃহস্পতিবার থেকে সাত দিনের বিধিনিষেধ আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বিধিনিষেধ চলাকালে (১-৭ জুলাই পর্যন্ত) সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে এবং শিল্প কারখানা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। তবে উন্মুক্ত স্থানে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাঁচা বাজার ও নিত্যপণ্য কেনাবেচা করা যাবে।
এ ছাড়া শপিংমল, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার, পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধের পাশাপাশি সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সারা দেশে বিধিনিষেধ কার্যকর করতে সশস্ত্র বাহিনীর প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন থাকবে বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।
বাড়াবাড়ির অভিযোগ
বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুরু হওয়া এই লকডাউনে রাজধানীর রাজপথ সাধারণ দিনের তুলনায় ফাঁকা ছিল। সরকারি ও বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের গাড়ি, পণ্যবাহী বাহন ছাড়াও কিছু রিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলতে দেখা যায়। রাস্তার বিভিন্ন মোড়ে চেক পোস্ট ও ব্যারিকেড বসায় পুলিশ। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিজিবি এবং সেনাবাহিনী সদস্যরা টহল দিয়েছে।
তবে পুলিশের বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ির অভিযোগ এনেছেন ভুক্তভোগীরা। মাসের প্রথম দিন হওয়ায় উত্তরা নয় নম্বর সেক্টর থেকে উত্তরা ১২ নম্বরে সেক্টরে বাসা পরিবর্তন করছেন রেজাউল করিম। কিছু মালামাল বাইকে করে নেওয়ার পথে পুলিশ তাঁকে আটক করে মামলা দেয়।
রেজাউল করিম বেনারকে বলেন, “লক ডাউন হলেও কিছুই করার ছিল না। কারণ, আমার বাসা পরিবর্তন করাটাও জরুরি। কিন্তু কোনো কথা না শুনেই পুলিশ আমার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। এটা তারা করতে পারে না।”
মিরপুর ১০ এলাকার বাসিন্দা রুহুল কুদ্দুস বেনারকে বলেন, ছেলের ওষুধ কিনতে বাসার নিচে নেমেছিলাম। রাস্তার একটি মোড়ে আরো কয়েকজনের সাথে আমাকেও আটক করে জরিমানা আদায় করে পুলিশ। এটা ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া কিছু নয়।”

কাজের জন্য রাস্তায় মানুষ
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোর লকডাউন শুরু হলেও দুমুঠো খাবারের সন্ধানে রাস্তায় নামতে দেখা যায় বহু মানুষকে। সকাল না হতেই উত্তরার আজিমপুর মোড়ে হাজির হয়েছিলেন অন্তত ২৫-৩০ জন শ্রমিক। এদের মধ্যে ষাটোর্ধ রফিকুল হক একজন।
তিনি বেনারকে বলেন, “খুব সকালে কোনো কাজ জুটবে ভেবে আজিমপুর মোড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু লকডাউন জন্য কেউ কাজে ডাকেনি। বয়স হয়েছে বলে এমনিতেও খুব বেশি কাজ পাই না। তবে পেট তো চালাতে হবে।”
রাজধানীর রামপুরা এলাকার শ্রমিক মুজিবর মিয়া বলেন, “ঘরে বসে থাকলে তো সংসার চলবে না। একদিন কাজ না পেলে পরদিন কী খাব? ছয় জনের সংসারে একমাত্র আয় করি আমি। এখন লক ডাউনে চোখে অন্ধকার দেখছি।”
আসছে ৪৫ লাখ টিকা
শুক্র ও শনিবার দুই দিনে বাংলাদেশ মর্ডানা এবং সিনোফার্মের ৪৫ লাখ করোনা টিকা এসে পৌঁছাবে বলে বৃহস্পতিবার এক ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
তিনি জানান, শুক্রবার রাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে মডার্নার ১২ লাখ ও চীন থেকে সিনোফার্মের ১১ লাখ টিকা পৌঁছাবে, পরদিন শনিবার মডার্নার আরো ১৩ লাখ এবং সিনোফার্মের আরো নয় লাখ টিকা পৌঁছাবে।
উল্লেখ্য, কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় বাংলাদেশ মডার্নার এই ২৫ লাখ টিকা যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাচ্ছে। এ ছাড়া চীনের সঙ্গে কেনা চুক্তির আওতায় নিজেদের দায়িত্বে সিনোফার্মের টিকা আনছে বাংলাদেশ। অবশ্য এর আগে দুই দফায় বাংলাদেশকে ১১ লাখ টিকা উপহার দিয়েছে চীন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন নয় লাখ, ২১ হাজার ৫৫৯ জন, মৃত্যু হয়েছে ১৪ হাজার ৬৪৬ জনের।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ কোটি ২৪ লাখ ৩৬ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন ৩৯ লাখ ৫০ হাজারের বেশি।