করোনাভাইরাস: যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে মডার্নার তৈরি ১৩ লাখ টিকা

জেসমিন পাপড়ি
2021.07.02
ঢাকা
করোনাভাইরাস: যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে মডার্নার তৈরি ১৩ লাখ টিকা অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে করোনা আক্রান্ত এক রোগী রিকশায় চড়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে ঢাকার জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউটে যাচ্ছেন। ২ জুলাই ২০২১।
[ফোকাস বাংলা]

যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাওয়া মডার্নার তৈরি ২৫ লাখ করোনাভাইরাস টিকার মধ্যে প্রথম চালানে শুক্রবার তেরো লাখ ডোজ দেশে পৌঁছেছে, বাকিটা পৌঁছাবে শনিবার। একই সাথে শুক্রবার দিবাগত রাতে চীন থেকে কেনা বিশ লাখ টিকাও ঢাকা পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। 

কোভ্যাক্সের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা মডার্নার টিকাবাহী বিমানটি শুক্রবার রাত সোয়া ১১টার দিকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায় বলে বেনারকে জানান স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম।

তিনি জানান, এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।

টিকা গ্রহণের পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “আনন্দের সঙ্গে বলছি, আমরা ১৩ লাখ টিকা গ্রহণ করলাম। আরও ১২ লাখ ডোজ টিকা (শনিবার) সকালে এসে পৌঁছাবে।”

বিভিন্ন উৎস থেকে থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে দশ কোটি টিকা আসবে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “আশা করছি টিকার আর অভাব হবে না।”

এদিকে বাংলাদেশ বিমানের দুটি কার্গো ফ্লাইটে করে চীন থেকে কেনা টিকার প্রথম চালানে ২০ লাখ ডোজ সিনোফার্মের টিকা শুক্রবার দিবাগত রাতেই ঢাকা পৌঁছেছে বলে বেনারকে জানান মাইদুল ইসলাম। 

মডার্নার টিকা বাংলাদেশে চতুর্থ ধরনের করোনাভাইরাস টিকা, কোভ্যাক্সের আওতায় এটি বাংলাদেশের পাওয়া দ্বিতীয় টিকা। 

শুক্র ও শনিবার মিলে মডার্না ও সিনোফার্মের মোট ৪৫ লাখ টিকা পাচ্ছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে দিয়ে দেশে টিকার সংকট কমতে শুরু করবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

“বাংলাদেশ কোভ্যাক্সের আওতায় টিকা আসছে, এটা দারুণ ব্যাপার। পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবেও টিকা আসা শুরু হয়েছে। আশা করি টিকা আসার এই ধারা নিয়মিত থাকবে,” বেনারকে বলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন।

তিনি বলেন, “টিকার যে সংকট ছিল তা ধীরে ধীরে কেটে যাবে। কারণ, টিকার অনেকগুলো উৎস এখন চিন্তা করা হচ্ছে। সবগুলো সঠিকভাবে আসতে থাকলে এ নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না।”

এর আগে গত ৩১ মে আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্স থেকে ফাইজার বায়োএনটেকের তৈরি এক লাখ ৬২০ ডোজ টিকা উপহার পায় বাংলাদেশ। এ ছাড়া গত মে ও জুন মাসে চীন থেকে দুই দফায় সিনোফার্মের মোট ১১ লাখ টিকা উপহার পায় বাংলাদেশ।

তার আগে ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে কেনা ৭০ লাখ ও ভারত থেকে উপহার হিসেবে ৩৩ লাখ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্র্যাজেনেকার টিকা আসে বাংলাদেশে। 

মডার্নার টিকা করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনের বিরুদ্ধে তুলনামূলক বেশি কার্যকর বলে গবেষণাগারের বরাতে গত ৩০ জুন রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়। মডার্নার দাবি, ডেল্টা ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরিতে এই টিকাটি সবচেয়ে বেশি কার্যকর।

“এ পর্যন্ত আসা সব টিকা একইরকম, সবগুলোরই দুটি ডোজ দিতে হবে,” বেনারকে বলেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআরের প্রধান পরামর্শক ড. মুশতাক হোসেন।

“কোনো টিকাই এখন পর্যন্ত করোনার সংক্রমণ পুরোপুরি ঠেকাতে পারছে না,” জানিয়ে ড. মুশতাক বলেন, “তবে এই টিকাগুলো মানুষকে হাসপাতালে নেওয়া থেকে রক্ষা করতে পারছে; তাদেরকে আইসিইউ–তে নেওয়া ঠেকাচ্ছে। আশা করি এসব টিকার যে নতুন সংস্করণ আগামীতে হবে সেগুলো আরো উন্নত হবে।” 

আবারও শুরু হচ্ছে টিকা কার্যক্রম

বিভিন্ন উৎস থেকে দেশে টিকা আসা শুরু হওয়ার প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে আবারও করোনাভাইরাসের টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে বেনারকে জানিয়েছেন ডা. রোবেদ আমিন।

তিনি জানান, সারা দেশের ৪০টি কেন্দ্রে চীনের সিনোফার্মের টিকা আর পরিমাণে কম আসার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান ফাইজারের টিকা শুধু ঢাকায় দেয়া হচ্ছে।

বর্তমানে সিনোফার্মের টিকা শুধু মেডিকেল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেয়া হচ্ছে জানিয়ে রোবেদ আমিন বলেন, “নতুন আসা সিনোফার্মের টিকা সাধারণ মানুষকেও দেওয়া হবে।”

এক্ষেত্রে আগের মতোই রেজিস্ট্রেশন করা সাপেক্ষে আপাতত চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের টিকা দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “রেজিস্ট্রেশন উন্মুক্ত করা হবে আগামী বৃহস্পতিবার সুরক্ষা অ্যাপসের মাধ্যমে।”

তবে সদ্য পৌঁছানো মডার্নার টিকা কবে থেকে এবং কাদের দেয়া হবে তা এখনো ঠিক হয়নি বলে জানান তিনি। 

মিশ্র টিকার বিষয়ে সিদ্ধান্তের অপেক্ষা

বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মার মাধ্যমে ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে কেনা যুক্তরাজ্য-সুইডেন উদ্ভাবিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্র্যাজেনেকার কোভিশিল্ড টিকার মাধ্যমে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে দেশে শুরু হয় গণটিকাদান কর্মসূচি। 

গত নভেম্বরে ভারত থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্র্যাজেনেকার তিন কোটি ডোজ টিকা আনতে চুক্তি করে বাংলাদেশ। তবে মাত্র ৭০ লাখ ডোজ পাঠানোর পর সেখান থেকে আর কোনো টিকার চালান আসেনি।

এর প্রেক্ষিতে গত ২৬ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজ এবং এর সপ্তাহখানেক পর থেকে সারাদেশের সবগুলো কেন্দ্রে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া বন্ধ করতে বাধ্য হয় সরকার।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্র্যাজেনেকার প্রথম ডোজের টিকা নেয়া প্রায় ১৪ লাখ মানুষের এখনো দ্বিতীয় ডোজ অনিশ্চিত।

যারা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্র্যাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিতে পারেননি তাঁদের ফাইজার বা সিনোফার্মের টিকা দেয়া নিরাপদ হবে কিনা সেটা গবেষণাধীন রয়েছে বলে জানান রোবেদ আমিন। 

তিনি বেনারকে বলেন, “মিশ্র ভ্যাকসিন দেয়া যায় কিনা সেটা নিয়ে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রিপোর্ট বেরিয়েছে। এইসব রিপোর্টের ভিত্তিতে বাংলাদেশের ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন টেকনিক্যাল কমিটি আমাদের দেশে টিকার ‘মিক্স-ম্যাচ’ করা যাবে কিনা সে সিদ্ধান্ত নেবে।

“সুতরাং সে সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত যারা অ্যাস্ট্র্যাজেনেকার এক ডোজ টিকা নিয়েছেন তাঁদেরকে অপেক্ষা করতে হবে,” বলেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন নয় লাখ, ৩০ হাজার ৪২ জন, মৃত্যু হয়েছে ১৪ হাজার ৭৭৮ জনের। এর মধ্যে শুক্রবার আক্রান্ত হয়েছেন আ হাজার ৪৮৩ জন, মারা গেছেন ১৩২ জন।

দেশে ক্রমাগত বাড়তে থাকা করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বৃহস্পতিবার থেকে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য মাঠে কাজ করছে সেনাবাহিনীও।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।