করোনাভাইরাস: টিকা নেয়ার আপাতত বয়স সর্বনিম্ম ২৫
2021.07.29
ঢাকা

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়ার সর্বনিম্ন বয়স ২৫ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার বেনারকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।
এর আগে টিকা নেয়ার সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর করা হবে বলে গত সপ্তাহে জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও মহাপরিচালক খুরশীদ আলম। তবে তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের সার্ভারের সীমাবদ্ধতার কথা বিবেচনা করে আপাতত ২৫ বছর পর্যন্ত রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
“আমরা টিকা নেয়ার সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আইসিটি (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) বিভাগ জানিয়েছে ১৮ বছর করা হলে এই পর্যায়ে সার্ভার ডাউন হয়ে যাবে; এতে সার্বিকভাবে টিকা কার্যক্রম ব্যাহত হবে। সেকারণে আমরা ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন থেকে সরে এসেছি,” বলেন মহাপরিচালক খুরশীদ আলম।
শুরুর দিকে অনেকেই টিকার জন্য নিবন্ধন করতে চাননি জানিয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোশতাক হোসেন বৃহস্পতিবার বেনারকে বলেন, “বর্তমানে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় শহর ও গ্রাম উভয় স্থানেই টিকা নেয়ার আগ্রহ বেড়েছে।”
তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে টিকা নেয়ার বয়স ১৮ বছরে নামানো হলে লাখ লাখ যুবক-যুবতী টিকার নিবন্ধনের জন্য চেষ্টা করবেন এবং আমাদের সার্ভার এত সংখ্যক তথ্য একসাথে নিতে পারবে না। সার্বিক টিকা কার্যক্রমে ঝামেলা হতে পারে।”
তবে ৮ আগস্ট থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত নাগরিকেরা টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, “আমরা ধীরে ধীরে বয়সের সীমা কমাচ্ছি।”
আগস্ট থেকে দৈনিক এক কোটি মানুষকে টিকা
ভারত থেকে আমদানি করা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্র্যাজেনেকার টিকা দিয়ে বাংলাদেশে ২৭ জানুয়ারি কোভিড-১৯ এর টিকা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর গণহারে টিকা দেয়া শুরু হয় ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে। তখন সর্বনিম্ন বয়সসীমা ছিল ৪৫ বছর।
এক পর্যায়ে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট টিকা সরবরাহ বন্ধ করে দিলে এপ্রিলের শেষ দিক থেকে বাংলাদেশে টিকা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
টিকা কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে চীনের সিনোফার্ম এর তিন কোটি টিকা আনতে চুক্তি করে সরকার। পাশাপাশি ১১ লাখ সিনোফার্মের টিকা উপহার দেয় চীন সরকার। পুনরায় টিকা কার্যক্রম শুরু হয়।
চীন থেকে এ পর্যন্ত ৪৫ লাখ টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার রাতে আরও ত্রিশ লাখ সিনোফার্মের টিকা ঢাকায় পৌঁছানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্যবিভাগ।
চীনা টিকা ছাড়াও কোভ্যাক্সের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫ লাখ মার্ডানা এবং এক লাখ ফাইজার টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ। জাপান থেকে আসে ২৫ লাখ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্র্যাজেনেকার টিকা।
সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় টিকা নেয়ার বয়স কয়েক দফা কমিয়ে ২৫ পর্যন্ত নিয়ে আসে সরকার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশে সোয়া এক কোটির বেশি মানুষ টিকার আওতায় এসেছেন, টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন আরো প্রায় দেড় কোটি মানুষ।
“সরকারের এখন উচিত হবে, যত দ্রুত সম্ভব টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা, যাতে আমরা যত বেশি সংখ্যক মানুষকে টিকা দিতে পারি। টিকা দেয়া হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে এবং মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে,” বলেন মোশতাক হোসেন।
মহাপরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, “আশা করি আগামীতে টিকার সরবরাহে কোনো সমস্যা হবে না। আগস্টের মাঝামাঝি থেকে প্রতিদিন এক কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া যাবে।”
পোশাক কারখানা খুলে দেয়ার দাবি
করোনাভাইরাস সংক্রমণ না কমলেও অর্থনৈতিক কারণে চলমান লকডাউনের আওতায় দেশের সকল বন্ধ কারখানা খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
বৃহস্পতিবার তাঁরা মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সাথে দেখা করে কারখানা খুলে দেয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরেন।
গত ২৩ জুলাই শুরু হওয়া কঠোর লকডাউনে কারখানা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
সচিবের সাথে বৈঠকে “পোশাক কারখানাসহ সকল কারখানা খুলে দেয়ার দাবি,” জানানো হয়েছে জানিয়ে তৈরি পোশাক শিল্পের কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বেনারকে বলেন, “আমরা বলেছি, আমাদের অধিকাংশ কর্মী ঢাকায় আছেন। আমরা কারখানা চালাতে পারব।”
তিনি বলেন, “গত সাত দিন ধরে কারখানা বন্ধ। আমাদের ব্যবসা সিজনাল। পশ্চিমা বাজার খুলে গেছে। এই বাজার ধরতে না পারলে আমাদের ক্ষতি হয়ে যাবে। শিল্প কারখানা বন্ধ থাকলে দেশের সাপ্লাই চেইন বিঘ্নিত হবে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাবে।”
“যদি কারখানা খুলে দেয়া হয় তাহলে আমরা আমাদের কর্মীদের টিকা দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানিয়ে কারখানা পরিচালনা করতে পারব,” বলেন ফারুক হাসান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবগুলো প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করবেন এবং সিদ্ধান্ত এলে তা জানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে জানান ফারুক হাসান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রুখতে বাংলাদেশে ১ জুলাই থেকে কঠোর লকডাউন দেয় সরকার। ঈদুল আজহার কারণে আট দিনের জন্য লকডাউন শিথিল করা হয়। এরপর ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত পুনরায় লকডাউন আরোপ করা হয়।
তবে লকডাউন দেয়া হলেও করোনা সংক্রমণ কমছে না। পরীক্ষা করা নমুনার বিপরীতে বর্তমান সংক্রমণ হার প্রায় শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত বছর ৮ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১২ লাখ, ২৬ হাজার ২৫৩ জন, মৃত্যু হয়েছে ২০ হাজার ২৫৫ জনের।
এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৩৯ জন, নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ হাজার ২৭১ জন।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৯ কোটি ৬৩ লাখ ৪৬ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন ৩৯ লাখ ৯৯ হাজারের বেশি।