মাস্ক না পরে বাইরে গেলে শাস্তি, টিকা ছাড়া কর্মস্থলে যেতে পারবেন না কেউ
2021.08.03
ঢাকা

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মাস্ক পরে বাইরে না গেলে শাস্তি পেতে হবে, টিকা ছাড়া ১৮ বছর বয়সের বেশি কেউ বাইরে গেলে পড়তে হবে শাস্তির মুখে। প্রয়োজনে এ বিষয়ে অধ্যাদেশ জারি করার কথা বলেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
মঙ্গলবার করোনাভাইরাসের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান বৈঠকের সভাপতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
এদিকে দেশে চলমান লকডাউন আরো পাঁচ দিন বাড়িয়ে ১০ আগস্ট পর্যন্ত করার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে জানিয়ে দুই মন্ত্রী বলেন, ১১ আগস্ট থেকে সবকিছু খোলার আগে আগামী এক সপ্তাহ ব্যাপকভিত্তিক টিকা দান কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
“সবাইকে মাস্ক পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ,” জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, যারা মাস্ক পরবেন না তাঁদের যাতে পুলিশ জরিমানা করতে পারে সেজন্য “অধ্যাদেশ লাগবে। আলোচনা হয়েছে, আমরা সেদিকেও যাব।”
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী বলেন, “আগামী ১১ আগস্ট থেকে দোকানপাট ও অফিস-আদালত খুলে দেওয়া হবে, সীমিত পরিসরে চলবে গণপরিবহনও। তবে এর আগেই সব কর্মজীবী মানুষকে করোনার টিকা গ্রহণ করতে হবে।”
টিকা সম্পর্কে মোজাম্মেল হক বলেন, “স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আগামী এক সপ্তাহে এক কোটির বেশি মানুষকে টিকা দেবে। প্রত্যেক ওয়ার্ডে ন্যূনতম দুটি করে কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে। ফলে আশা করছি কষ্ট করে ভ্যাকসিন নেওয়ার পেছনে দৌড়াতে হবে না।”
“ভ্যাকসিন না দিয়ে কেউ কোনো কর্মস্থলে আসতে পারবেন না,” জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, “১৮ বছরের ঊর্ধ্বে যারা, তারা টিকা না নিয়ে চললে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। আইন না করলেও অধ্যাদেশ জারি করে হলেও শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হবে।”
সরকারের হাতে এখন প্রায় সোয়া কোটি টিকা আছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “এই মাসে আরও প্রায় এক কোটি টিকা আসবে। আর চীনের সঙ্গে মিলে স্থানীয়ভাবেও টিকা উৎপাদনের কাজ এগিয়ে চলছে।”
‘সংক্রমণ ঠেকানোয় কাজে আসছে না লকডাউন’
এদিকে “যথাযথভাবে কার্যকর” করতে না পারায় চলমান লকডাউন “সংক্রমণ ঠেকাতে কোনো কাজে আসছে না,” বলে বেনারের কাছে মন্তব্য করেন কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি হলো- ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। যারা করোনায় আক্রান্ত হবে তাদের আইসোলেশনে নেওয়া, প্রয়োজনে চিকিৎসা করানো, সংশ্লিষ্ট পরিবারকে কোয়ারেন্টিনে রাখা।”
“ঘরের বাইরে সকলকে মাস্ক পরতে বাধ্য করতে হবে। মাস্ক পরার বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচার জরুরি, জানিয়ে তিনি বলেন, “সরকারের দেওয়া বিধি নিষেধগুলো প্রচারের সিস্টেম অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ। মানুষ জানতেই পারে না কী কী নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
টিকা না নিয়ে বাইরে বের গেলে শাস্তি হতে পারে সরকারের এমন উদ্যোগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এই অল্প সময়ে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বের সকলের টিকা নেওয়া সম্ভব হবে না। এত টিকা আমাদের মজুদও নেই। এমন সিদ্ধান্তে যেতে আরো অনেক বেশি টিকা লাগবে।”
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ঈদের পর ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে লক ডাউন বা কঠোর বিধি নিষেধের ঘোষণা দেয় সরকার। তবে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে ১ আগস্ট থেকে রপ্তানিমুখী সব শিল্প ও কলকারখানা চলমান বিধিনিষেধের আওতাবহির্ভূত করার আদেশ দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এরপরেই লক ডাউনের মধ্যে গ্রামের বাড়ি থেকে দুর্ভোগ নিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন কলকারখানার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় শ্রমিকেরা। বাধ্য হয়ে গত রোববার দুপুর পর্যন্ত গণপরিবহন চালুর অনুমোদন দেয় সরকার। আর গতকাল সোমবার ভোর পর্যন্ত বাড়ানো হয় লঞ্চের সময়।
দেশে করোনা সংক্রমণের পর থেকেই দফায় দফায় লক ডাউন ও বিধি নিষেধের পাশাপাশি ঘরের বাইরে সকলকে মাস্ক পরার অনুরোধ জানিয়ে আসছে সরকার। মাস্ক ছাড়া সরকারি সেবা দেওয়ার নীতিও চালু হয়। তারপরেও মাস্ক পরার বিষয়ে উদাসীনতা লক্ষ্য করা যায়।
এ বছরের মার্চ থেকে আবারও করোনার সংক্রমণ ভয়াবহ হতে থাকলে গত ২১ জুলাই মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মেডিকেল শিক্ষা বিভাগ। দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আদেশ অমান্যকারীদের জরিমানাও করা হয়।
কম ঝুঁকিপূর্ণদের হোটেলে চিকিৎসা
সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে হাসপাতালগুলোর আসন পূর্ণ হয়ে আসার প্রেক্ষাপটে সরকার করোনা আক্রান্ত কম ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের হোটেলে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার কথা ভাবছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
তিনি বলেন, “হাসপাতালে ৯০ শতাংশ সিট ভর্তি হয়ে গেছে, রোগী আছে সিট ফাঁকা নেই। আইসিইউ অলরেডি ৯৫ শতাংশ অকুপাইড।”
বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ফিল্ড হাসপাতাল তৈরির কাজ চলমান রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সেখানে শিগগির পাঁচশ থেকে ছয়শ বেড রেডি করতে পারব। পরে তা এক হাজার বেডে উত্তীর্ণ হবে।”
“করোনা আক্রান্ত কম ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের জন্য আমরা আলাদা হোটেল ভাড়া করার চিন্তা করছি। যে হোটেলের মধ্যে ওষুধপত্রসহ ডাক্তার, নার্স থাকবেন। কিছু অক্সিজেনের ব্যবস্থাও রাখা হবে,” বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত বছর ৮ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১২ লাখ ৯৬ হাজার ০৯৭ জন, মৃত্যু হয়েছে ২১ হাজার ৩৯৭ জনের।