সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাসপাতালে অভিযান, সাড়ে সাত লাখ টাকা জরিমানা

প্রাপ্তি রহমান
2020.08.10
ঢাকা
200810_hospital_drive_1000.jpg অনুমোদন না থাকা গাজীপুর সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ ওধুধ ও সার্জিক্যাল সামগ্রী জব্দ করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ১০ আগস্ট ২০২০।
[বেনারনিউজ]

হাসপাতাল চলার জন্য যে সনদ লাগে, সেটিই ছিল না। তারপরও গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে কোভিড-১৯ চিকিৎসার অনুমোদন দিয়েছিল সরকার।

হাসপাতালটির মালিক সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমান সাংসদ মহিউদ্দীন খান আলমগীর। সোমবার সরকার গঠিত টাস্কফোর্স কমিটি ও র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত হাসপাতালটিকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা জরিমানা করেছে।

“হাসপাতালের লাইসেন্স নেই। অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনীয় উপকরণের মেয়াদ চলে গেছে। রক্তপরিসঞ্চালনের নিয়মনীতি মানা হয় না,” র‌্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বেনারকে বলেন।

যৌথ অভিযানের এই দলে আরও ছিলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (হাসপাতাল) উম্মে সালমা তানজিয়া ও গাজীপুর র‌্যাব-১ ক্যাম্পের কমান্ডার আবদুল্লাহ আল মামুন।

আগামি ২৩ জুলাই এর মধ্যে সনদ নবায়ন না করলে এটি বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, চিকিৎসায় ব্যবহৃত বেশিরভাগ সরঞ্জামের মেয়াদ ২০১৪ সালে শেষ হয়ে গেছে। আরও কিছু সরঞ্জামের মেয়াদ শেষ হয় ২০১৭ সালে।

হাসপাতালটিতে চিকিৎসার ন্যূন্যতম পরিবেশ না থাকলেও সেখানে একশ শয্যার কোভিড ইউনিট খোলা হয়েছিল। তবে রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযানের পর করোনা চিকিৎসা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

“হয়ত আগে এখানে রোগী ভর্তি করা হতো, তবে এখন আর হচ্ছে না,” সারোয়ার আলম বেনারকে বলেন।

করোনাভাইরাস পরীক্ষায় জালিয়াতি, সরকারের সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ করে রোগীর কাছ থেকে টাকা আদায়সহ নানা অনিয়মের অভিযোগে গত মাসের ৬ জুলাই উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায় র‌্যাব। ওই একই সময়ে জাল সনদ দেওয়ার জন্য জেকেজির চেয়ারম্যান সাবরিনা আরিফ চৌধুরী, প্রধান নির্বাহী আরিফুল হক চৌধুরীসহ পাঁচজন গ্রেপ্তার হন।

এ ছাড়া নানা অভিযোগে অভিযান চালানো হয় শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ওই সব হাসপাতালের লাইসেন্স থাকলেও মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছিল। কিন্তু সিটি হাসপাতাল গত ছয় বছর চলছিল অনুমোদন ছাড়াই।

৫০০ শয্যার হাসপাতালটিতে টাস্কফোর্সের অভিযানের সময় সোমবার তিনজন রোগী ভর্তি ছিলেন। তবে হাসপাতালের আউটডোরে কয়েকজন রোগী ছিলেন।

টাস্কফোর্স জানতে পারে, হাসপাতালে নার্স আছেন ১৫ জন, ৫০০ শয্যার হাসপাতালে থাকার কথা ৩০০ নার্স। এ ছাড়া নিয়মিত ও অনিয়মিত মিলিয়ে ৪০ জন চিকিৎসক আছেন, অথচ এমন একটি হাসপাতালে থাকার কথা ১৫০জন চিকিৎসক।

অভিযানের সময় হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিফায়েত উল্লাহ শরীফ। রিফায়েত উল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, “২৩ আগস্ট পর্যন্ত লাইসেন্স নেওয়ার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আমরা এই সময়ের মধ্যে শর্ত পূরণ করার চেষ্টা করব।”

অসন্তুষ্ট হাসপাতাল মালিকরা

বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মালিকরা এই ধরনের অভিযানের কারণে বিরক্ত।

বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ) এর সভাপতি মবিন খান বেনারকে বলেন, মহামারির সময় এ ধরনের অভিযান বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মালিকদের হতাশ করছে।

তিনি বলেন, “সরকার পঞ্চাশ শয্যার বেশি যেকোনো হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা বাধ্যতামূলক করেছে। সে কারণে সব হাসপাতালই চিকিৎসা শুরু করেছে। এখন র‌্যাব-পুলিশ অভিযান করছে, আর বলছে এটা নেই, ওটা নেই।”

মবিন খান বলেন, সরকার বেসরকারি হাসপাতালগুলোর লাইসেন্স নবায়নের জন্য ২৩ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে। এর মধ্যে অভিযান চালানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই।

“সারা দেশে ১৭ হাজার ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে। সবার লাইসেন্স দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। টাকা জমা দিয়েও সময় মতো অনেকেই অনুমোদন পায় না, এটাও বিবেচনা করা দরকার,” বলেন মবিন খান।

তবে, যাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত না মেনে রোগী দেখছেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে অ্যাসোসিয়েশনের কোনো আপত্তি নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, রিজেন্ট ও সাহাবউদ্দীন হাসপাতাল এবং জেকেজিতে অভিযানের পর বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলো অভিযানের বিপক্ষে অবস্থান নেয়।

এর মধ্যে গত ৫ আগস্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চিঠি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। বলা হয়, হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করার আগে তাঁদের অবহিত করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটা সমঝোতা হয়েছে, যে এই ধরনের ব্যবস্থা নিতে গেলে তা যৌথভাবে করা হবে।

করোনায় আক্রান্ত দুই লাখ ৬০ হাজারের বেশি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দুই লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ জন। আর মৃত্যু হয়েছে তিন হাজার ৪৩৮ জনের।

এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠেছেন এক লাখ ৫০ হাজার ৪৩৭ জন।

যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন মোট এক কোটি ৯৯ লাখ ৪৭ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন সাত লাখ ৩২ হাজারের বেশি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।