করোনাভাইরাস: দেশে টিকা উৎপাদনে চীনের সঙ্গে চুক্তি সই

জেসমিন পাপড়ি
2021.08.16
ঢাকা
করোনাভাইরাস: দেশে টিকা উৎপাদনে চীনের সঙ্গে চুক্তি সই করোনাভাইরাস টিকার জন্য ঢাকার মুগদা হাসপাতালের সামনে লোকজনের ভিড়। টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশনের পর মোবাইলে এসএমএস না পাওয়া পর্যন্ত টিকাকেন্দ্রে না আসার পরামর্শ দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মাইকিং। ১৬ আগস্ট ২০২১।
[ফোকাস বাংলা]

করোনাভাইরাস ঠেকাতে প্রথমবারের মতো টিকা উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় যুক্ত হলো বাংলাদেশ। এ উদ্দেশ্যে সোমবার ঢাকায় এক ত্রি-পক্ষীয় সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। 

বাংলাদেশের ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস চীনের সিনোফার্মের তৈরি টিকা যৌথভাবে দেশে উৎপাদন করবে, যদিও টিকার দাম ও উৎপাদনের সুনির্দিষ্ট সময় ঘোষণা করা হয়নি।

এই উদ্দেশ্যে ইনসেপ্টার সাথে চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দুটি প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল বায়োটেক গ্রুপ অব কোম্পানিজ ও চায়না সিনোফার্ম ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশনের চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

“চুক্তির আওতায় চীন থেকে বাল্ক টিকা এনে ইনসেপ্টা বাংলাদেশে ভায়ালে ভরা এবং লেবেলিংয়ের কাজ করবে। সরকার সেই টিকা ইনসেপ্টার কাছ থেকে কিনে নেবে,” অনুষ্ঠান শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের জানান।

সব ঠিক থাকলে মাস তিনেকের মধ্যে ইনসেপ্টা দেশে টিকা উৎপাদনের কাজ শুরু করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। 

তবে টিকা উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশে ও চীনের দিক থেকে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা শেষ করা সাপেক্ষে “তিন মাসের আগেও দেশে টিকা উৎপাদন হতে পারে, আবার বেশি সময়ও লাগতে পারে,” বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। 

বাংলাদেশের অন্তত ১৩ কোটি লোককে টিকা দিতে ২৬ কোটি টিকা প্রয়োজন হবে। জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “এই বিপুল পরিমাণ টিকা দেশে নিয়ে আসতে অনেক সময় প্রয়োজন। তবে দেশেই এখন যৌথ উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়ার ফলে সবার জন্য টিকার ব্যবস্থা করা সহজ হবে।” 

টিকা উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়ে “কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সক্ষমতার দিক থেকে বাংলাদেশ আরো এক ধাপ এগিয়ে গেলো,” বলে মনে করেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন।

“আমরা যদি প্রযুক্তিগত সহায়তা বা কাঁচামাল পাই, তাহলে প্রয়োজন মতো টিকা বাড়াতে পারব। উৎপাদন শুরু হলে দেশে জনগণের বড়ো অংশকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব হবে,” বেনারকে বলেন ড. মুশতাক। 

inner.jpg
ঢাকায় করোনার টিকা উৎপাদনের বিষয়ে ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে স্বাক্ষরের পর চুক্তিপত্র দেখাচ্ছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন (মাঝখানে), চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং (বামে) ও ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুল মুক্তাদির (ডানে)। ১৬ আগস্ট ২০২১। [বেনারনিউজ]

দাম নির্ধারণ হয়নি

দেশে তৈরি হবার পর সিনোফার্মের করোনা টিকার মূল্য কত পড়বে জানতে চাইলে দাম এখনও নির্ধারণ হয়নি জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “যখন উৎপাদনে যাবে তখন আলোচনা করে দাম নির্ধারণ করা হবে। তবে বাইরে থেকে টিকা আনতে যে টাকা লাগে, তার চেয়ে অবশ্যই খরচ কম পড়বে।” 

“আর দেশে উৎপাদন হলে তাড়াতাড়ি ও ঠিক সময়ে টিকা পাওয়া যাবে,” বলেন জাহিদ মালেক।

সরকার ইনসেপ্টার মাধ্যমে কত টিকা কিনবে, তা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “যতটুকু আমাদের প্রয়োজন, ততটুকু আমরা অর্ডার দেবো। তারা সেটা বানিয়ে ফেলবে।”

প্রতি মাসে ইনসেপ্টার চার কোটি ডোজ পর্যন্ত টিকর তৈরির সক্ষমতা রয়েছে বলে জানান তিনি। 

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, ঢাকায় চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং এবং ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুল মুক্তাদির চুক্তিতে সই করেন। 

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। বেইজিং থেকে চীনের পররাষ্ট্রবিষয়ক এশিয়ান অ্যাফেয়ার্স বিভাগের কনসাল জি রং, সিনোফার্মের চেয়ারম্যান লিউ জিং–উন চুক্তি সাক্ষর অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন। 

গণটিকা কার্যক্রম বন্ধ

সপ্তাহব্যাপী করোনার গণটিকা কার্যক্রম শেষ হওয়ার পরে নতুন করে কর্মসূচি  শুরু হওয়ার কথা ছিল ১৬ আগস্ট থেকে। কিন্তু পর্যাপ্ত টিকা হাতে না আসায় আপাতত আর এই কার্যক্রম শুরু করা হবে না বলে রোববার সাংবাদিকদের জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

তিনি জানান, যথেষ্ট পরিমাণ টিকা হাতে এলে আবার গণটিকা কার্যক্রম শুরু হবে।

গত ৭ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে ছয় দিনের গণটিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করে সরকার।

এই কর্মসূচি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, “এর মাধ্যমে প্রমাণ হলো ভ্যাকসিন দেওয়ার সক্ষমতা আমাদের আছে। একদিনে ৩৪ লাখ ভ্যাকসিন আমরা দিয়েছি। একটা ট্রায়ালও হয়ে গেছে। এখন ভ্যাকসিন প্রাপ্যতা সাপেক্ষে আমাদের আগামী দিনের কার্যক্রম চলবে।”

কত টিকা পাওয়া যাচ্ছে তার ওপর ভিত্তি করে শহরে এবং গ্রামে টিকা কার্যক্রম ডিজাইন করা হবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। 

তিন কোটির বেশি টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ

এ পর্যন্ত তিন কোটি নয় লাখ ৪৩ হাজার ৭২০ ডোজ করোনার টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ভারত থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্র্যাজেনেকার টিকা এসেছে এক কোটি দুই লাখ ডোজ।

কোভ্যাক্সের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র থেকে মডার্নার ৫৫ লাখ এবং ফাইজারের এক লাখ ৬২০ ডোজ টিকা এসেছে। এছাড়া জাপান থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার আরো ১৬ লাখ ৪৩ হাজার ডোজ টিকা পায় বাংলাদেশ।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, প্রথম ডোজে এক কোটি ৫৪ লাখ ও দ্বিতীয় ডোজে ৫৪ লাখসহ মোট দুই কোটি ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। বর্তমানে হাতে রয়েছে আরো এক কোটি ডোজ। 

আগামী ২০-২২ আগস্টের মধ্যে আরও ৫০ লাখ ডোজ সিনোফার্মের টিকা আসবে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, “কোভ্যাক্সসহ বিভিন্ন দেশ যেমন, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে টিকাপ্রাপ্তির ব্যাপারে চুক্তি হয়েছে। সম্প্রতি চীনের সঙ্গে ছয় কোটি ডোজ টিকার চুক্তি হয়েছে। ফলে আমরা এখন থেকে টিকা পেতেই থাকব।”

গত এক দিনে করোনাভাইরাসে আরও ১৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর ৬ হাজার ৯৫৯ জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়েছে বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ নিয়ে দেশে করোনায় আক্রান্ত হলেন ১৪ লাখ ২৫ হাজার ৮৬১ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৪ হাজার ৩৪৯ জনের।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।