করোনা টিকা পরীক্ষার জন্য চীনা কোম্পানিকে টাকা দেবে না সরকার
2020.10.13
ঢাকা

করোনাভাইরাস টিকার চূড়ান্ত ধাপের পরীক্ষার জন্য চীনা কোম্পানি সিনোভ্যাককে কোনো টাকা দেয়া হবে না বলে মঙ্গলবার বেনারকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
এর ফলে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস টিকা পরীক্ষার বিষয়টি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।
চীনা কোম্পানি সিনোভ্যাকই প্রথম যারা বাংলাদেশে করোনাভাইরাস টিকার তৃতীয় ও চূড়ান্ত ধাপের পরীক্ষার জন্য সরকারের অনুমতি চায়। আগস্টের শেষ দিকে অনুমতি দেয়ার পর অর্থ সঙ্কটের কথা জানিয়ে সরকারের কাছে টাকা চায় তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিনোভ্যাককে টিকা পরীক্ষার জন্য টাকা দেয়া হলে একটি খারাপ দৃষ্টান্ত তৈরি হতো। অন্যান্য কোম্পানিও বাংলাদেশের কাছে ট্রায়ালের জন্য টাকা চাইত।
“আমরা নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে ট্রায়ালের জন্য সিনোভ্যাককে টাকা দেবো না,” জানিয়ে মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, “বিশ্বের অন্যান্য স্থানে সিনোভ্যাক ট্রায়াল করছে, সেসব দেশের কোনোটিই তাদের টাকা দিচ্ছে না। আমরা দেবো কেন?”
তিনি বলেন, “তারা যখন ট্রায়ালের অনুমতি চায় তখন টাকার কথা জানায়নি। তা ছাড়া সিনোভ্যাক একটি বেসরকারি কোম্পানি। চুক্তি ছাড়া সরকার কীভাবে একটি বেসরকারি কোম্পানিকে টাকা দেবে? আমরা আমাদের সিদ্ধান্তটি তাদের জানিয়ে দিয়েছি।”
টাকা ছাড়া সিনোভ্যাক বাংলাদেশে টিকার পরীক্ষা চালাবে কি না সে বিষয়ে তারা এখনো সরকারকে কিছ জানায়নি বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমরা তাদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।”
সরকারের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে মন্তব্যের জন্য বেনারের পক্ষ থেকে ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসে অনুরোধ করা হলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
এদিকে “সরকার সিনোভ্যাককে টাকা না দিয়ে দুদিক থেকে ভালো কাজ করেছে,” বলে মন্তব্য করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম।
তিনি বেনারকে বলেন, “প্রথমত, সিনোভ্যাককে টাকা দেয়া হলে একটি খারাপ নজির স্থাপিত হতো। ভবিষ্যতে অন্যান্য কোম্পানিও ট্রায়ালের জন্য বাংলাদেশের কাছ থেকে টাকা আদায় করবে।”
“আরেকটি দিক হলো, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের টিকার ট্রায়াল করছে সিনোভ্যাক। তারা কেউই টাকা দিচ্ছে না। বাংলাদেশ টাকা দিলে বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো বাংলাদেশের ওপর নাখোশ হতো। কারণ চীনারা বাংলাদেশের উদাহরণ অন্যান্য দেশের কাছে উল্লেখ করতো,” বলেন অধ্যাপক নজরুল।
তবে তাঁর মতে, “চীনারা আগ্রহী ছিল। সমস্যা যেখানেই হোক না কেন আমরা একটি সুযোগ হারালাম।”
চীনে আগের দুটি ট্রায়াল পরিচালনার পর বাংলাদেশে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার জন্য গত এপ্রিল মাসে সরকারের কাছে অনুমতি চায় সিনোভ্যাক। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) মাধ্যমে এই পরীক্ষার অনুমতি চায় চীনা কোম্পানিটি।
ট্রায়াল পরিচালনা করতে আইসিডিডিআর,বি–এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয় সিনোভ্যাক।
গত ১৮ জুলাই টিকাটি পরীক্ষার নীতিগত অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল। এর পর ২৭ আগস্ট টিকা পরীক্ষার অনুমতি দেয় সরকার।
তবে পরীক্ষা শুরুর আগে নিজেদের অর্থ সঙ্কট ও সরকারের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হওয়ার কথা বলে বাংলাদেশের কাছে প্রায় ত্রিশ কোটি টাকা চায় সিনোভ্যাক।
সিনোভ্যাকের পক্ষে বাংলাদেশে চার হাজার ২০০ স্বাস্থ্যকর্মীর ওপর ১৮ মাস ব্যাপী এই ট্রায়াল পরিচালনার কথা সিনোভ্যাকের।
চীনে গত বছর ডিসেম্বরে করোনাভাইরাস ধরা পড়লেও বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। এর দশ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে প্রথমবারের মতো এই রোগে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
জুন-জুলাই মাসে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যু কমতির দিকে। তবে আগামী শীত মৌসুমে এর সংক্রমণ আবার বাড়তে পারে বলে জনসাধারণকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
করোনাভাইরাসে সম্প্রতি অ্যাটির্নি জেনারেল মাহবুবে আলম মারা গেছেন। এর আগে অন্তত ২০ জন মন্ত্রী, সাংসদ, সচিব ও বিশিষ্ট নাগরিক করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
বর্তমানে পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুল মান্নান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন বলে বেনারকে জানান তাঁর সহকারি একান্ত সচিব মাসুম বিল্লাহ। ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল হকও করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তিন লাখ ৮১ হাজার ২৭৫ জন, মৃত্যু হয়েছে পাঁচ হাজার ৫৭৭ জনের।
এখন পর্যন্ত কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলোতে মোট ২৭৬ জন রোহিঙ্গা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও এই রোগে আট জন মারা গেছেন বলে বেনারকে জানান অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা।
যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তিন কোটি ৭৯ লাখ ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন ১০ লাখ ৮৩ হাজারের বেশি।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের জীবনরহস্য উন্মোচন করা গেলেও কোনো প্রতিষ্ঠান টিকা উৎপাদনের গবেষণায় নেই।