করোনাভাইরাস: মাস্ক পরা বাধ্যমূলক, প্রয়োজনে ভ্রাম্যমান আদালত

জেসমিন পাপড়ি
2020.10.19
ঢাকা
201019_Mask_Compusory_1000.jpg গত জুলাই মাস থেকে ঘরের বাইরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার পরেও সবাইকে এ নির্দেশনা মানতে দেখা যায় না। ছবিটি ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে তোলা। ১৯ অক্টোবর ২০২০।
[নিউজরুম ফটো]

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় দফা বিস্তার প্রতিরোধে ঘরের বাইরে সবার মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে সরকার।

সকলের মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে সচেতনামূলক পদক্ষেপের পাশাপাশি প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইন প্রয়োগ করতে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সোমবার শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “ইউরোপ ও আমেরিকায় আবারও করোনাভাইরাসে প্রাদুর্ভাব ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে বিশেষভাবে নজর দিতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, সবাই যেন মাস্ক পরেন।”

“কারণ, অনেকের মধ্যে এ বিষয়ে নমনীয়তা দেখা যাচ্ছে। তাই এটা যেন বাস্তবায়ন করা হয়,” বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

গত বছর ডিসেম্বরে প্রথম চীনে করোনাভাইরাস ধরা পড়লেও বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। এর দশ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে প্রথমবারের মতো এই রোগে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত জুন-জুলাই মাসে বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হলেও বর্তমানে দৈনিক গড় আক্রান্তের সংখ্যা এর অর্ধেকেরও কম।

একইভাবে ওই সময় করোনাভাইরাসে গড়ে দৈনিক ৪০ জনের বেশি মারা গেলেও বর্তমান দৈনিক মৃত্যু হার নেমে এসেছে এর অর্ধেকের নিচে।

তবে আগামী শীত মৌসুমে এর সংক্রমণ আবার বাড়তে পারে বলে গত মাসেই জনসাধারণকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এদিকে আসন্ন শীতে করোনার প্রকোপ কমাতে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করায় সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন চিকিৎসা বিশ্লেষকেরা। তবে এই উদ্যোগ আরো আগে নেওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন তাঁরা।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. এম এইচ চৌধুরী লেলিন বেনারকে বলেন, “আরো ভালো হতো যদি এই ঘোষণা দুই-তিন মাস আগে আসতো। কারণ, পৃথিবীর অন্যান্য দেশ যেখানে সেকেন্ড ওয়েভ (দ্বিতীয় দফা বিস্তার) মোকাবেলা করছে, সেখানে আমরা প্রথম ওয়েভই নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি।”

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কিছুটা কমে আসলেও প্রতিবেশি ভারতে প্রচুর সংখ্যক মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এই ধারা যেকোনো মুহূর্তে ভারত থেকে বাংলাদেশে চলে আসতে পারে। এই অবস্থায় মাস্ক ব্যবহার করা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অত্যন্ত প্রয়োজন,” বলেন তিনি।

এর আগে গত জুলাই মাসের শেষ দিকে ঘরের বাইরে সকল স্থানে সবার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে সরকার। তবে এখনও বহু মানুষ ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহার করেন না।

প্রয়োজনে আইন প্রয়োগ

সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “পাবলিক প্লেসে কোনোভাবেই মাস্ক ছাড়া যাওয়া যাবে না। মসজিদ, জনসমাগম স্থল, বা সামনে দুর্গাপূজা আসছে, সেসব জায়গায় কোনোভাবেই কেউ যেন মাস্ক ছাড়া না যান, তা নিশ্চিত করা হবে।”

“আমরা সবাই যদি মাস্ক ব্যবহার করি, তাহলে অটোমেটিক আমাদের সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা কমে আসবে। এজন্য মন্ত্রিসভার নির্দেশনা হচ্ছে, সবাই যেন মাস্ক ব্যবহার করি,” বলেন তিনি।

রোববার কমিশনার সম্মেলনেও এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “কমিশনারদের মোবাইল কোর্ট ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে হলে আইনও প্রয়োগ করবে, অসুবিধা নেই।”

“ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে বলা হয়েছে যেন ইমামদের মাধ্যমে প্রতিদিন জোহর ও মাগরিবের নামাজের পরে মাইক বা জামায়াতের সময় বিষয়টি (মাস্ক ব্যবহার) বলে দেওয়া হয়। বাজার, মার্কেট বা গণজমায়েতের স্থানগুলোতে যেখানে হয়, সেসব জায়গায় যেন একটা স্লোগানের মতো থাকে- অনুগ্রহ করে মাস্ক ছাড়া কেউ প্রবেশ করবেন না,” বলেন তিনি।

আক্রান্ত তিন লাখ ৯০ হাজারের বেশি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তিন লাখ ৯০ হাজার ২০৬ জন, মৃত্যু হয়েছে পাঁচ হাজার ৬৮১ জনের।

এখন পর্যন্ত কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলোতে মোট ২৮৫ জন রোহিঙ্গা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও এই রোগে নয় জন মারা গেছেন বলে বেনারকে জানিয়েছেন কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের স্বাস্থ্য সমন্বয়ক ডাঃ আবু তোহা এম আর এইচ ভূঁইয়া।

যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন চার কোটি এক লাখ ৫৫ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন ১১ লাখ ১৫ হাজারের বেশি।

জনস হপকিন্স এর তালিকা অনুযায়ী, বিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে বাংলাদেশ সপ্তদশ স্থানে আর মৃতের সংখ্যায় রয়েছে ৩১তম অবস্থানে।

হারালো একটি শিক্ষাবর্ষ

করোনাভাইরাসের কারণে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গত ১৭ মার্চ থেকে শুরু চলমান ছুটি আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

বাতিল করা হয়েছে এ বছরে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট এবং উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) বা সমমানের মতো পাবলিক পরীক্ষাগুলো।

জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট ও মাধ্যমিক পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করেই এইচএসসি পরীক্ষার মূল্যায়ন হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ডিসেম্বরের মধ্যে ফল চূড়ান্ত হবে। কভিড-১৯ মহামারির মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা কীভাবে হবে সেটা নিয়েও আলাপ-আলোচনা চলছে।

সাত মাস পরে খুলেছে সিনেমা হল

বাধ্যতামূলকভাবে সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানা ও অর্ধেক আসনে দর্শক বসার শর্তে দীর্ঘ সাতমাস পর গত শুক্রবার থেকে দেশের সব সিনেমা হল খোলার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। তবে দুর্গা পুজাকে কেন্দ্র করে চলচ্চিত্রকর্মীদের দাবির মুখে বেশকিছু হল খুললেও সব হল এখনি খুলছে না।

জানা গেছে, ঢাকাসহ সারা দেশে মাত্র ৬৬ সিনেমা হল খুলেছে। এসব সিনেমা হলের মধ্যে ৪০টিতে নতুন ও ২৬টিতে পুরনো ছবি মুক্তি পেয়েছে।

মধুমিতা সিনেমা হলের স্বত্ত্বাধিকারী ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বেনারকে বলেন, “সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনো করোনার আতঙ্ক যায়নি। এ কারণে বেশকিছু সিনেমা হল খুললেও দর্শকদের দেখা নেই।”

“এদিকে হল খুললেই আমাদের স্টাফদের বেতন দিতে হবে। তাই পরিস্থিতি ঠিক হওয়া না পর্যন্ত আমরা হল না খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি,” বলেন তিনি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।