মাস্ক না পরলে মঙ্গলবার থেকে সরকারি সেবা মিলবে না
2020.10.26
ঢাকা

আসছে শীত মৌসুমে করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ মোকাবেলার জন্য সরকার ঘোষিত ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে মঙ্গলবার থেকে। ফলে সকল সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্ত্বশাসিত, আধাস্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে যেকোনো ধরনের সেবা নিতে গেলে মাস্ক পরেই যেতে হবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শেখ রফিকুল ইসলাম সোমবার বেনারকে বলেন, “কেবিনেটের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, কোনো সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মাস্ক ব্যবহার না করা ব্যক্তিদের সেবা প্রদান করবে না। ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ এটিই কেবিনেটের সিদ্ধান্ত।”
তিনি বলেন, “আমরা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এই সিদ্ধান্ত সকল মন্ত্রণালয়, জেলা ও প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দিয়েছি, মঙ্গলবার থেকে তা কার্যকর হবে।”
এর আগে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, জনগণকে মাস্ক পরতে বাধ্য করতে প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
আর গত রোববার মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সাংবাদকিদের জানান, যে কোনো সেবা পেতে চাইলে মাস্ক পরতে হবে মর্মে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গড়ে প্রতিদিন তিন হাজারের বেশি আক্রান্ত ও অন্তত ৪০ জনের মৃত্যুসহ গত জুন-জুলাইতে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ছিল সবচেয়ে বেশি, যা অক্টোবরে নেমে এসেছে প্রায় অর্ধেকে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নভেম্বরের শেষ দিকে শীত পড়ার সাথে সাথে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ বাড়তে পারে। তাই মাস্ক পরলে এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখলে করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবেলা সহজ হবে।
রফিকুল ইসলাম বলেন, “অন্যান্য দেশের সাথে তুলনা করলে, আমরা বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ কম রাখতে পেরেছি। করোনাভাইরাস সংক্রমণ বর্তমানে কমতির দিকে। কিন্তু সরকার মনে করছে নভেম্বর থেকে শীতের মধ্যে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ শুরু হতে পারে।”
তিনি বলেন, “প্রতিদিন সরকারি, বেসরকারিসহ বিভিন্ন কার্যালয় ও প্রতিষ্ঠানে সেবার জন্য ভিড় করেন অসংখ্যা মানুষ। তাঁদের অনেকেই মাস্ক পরেন না। এর ফলে তাঁরা অন্যদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলছেন। কাজেই, যদি আমরা সেবাপ্রার্থীদের মাস্ক পরতে বাধ্য করাতে পারি তাহলে করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলা সহজ হবে।”
‘মাস্ক ছাড়া সেবা নয়: একটি ভালো ভালো সিদ্ধান্ত’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “অন্যান্য দেশে যেমন দেখা যাচ্ছে, আসছে শীতে আমাদের দেশেও করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হতে পারে। সেকারণে আমাদের প্রস্তুত হতে হবে।”
তিনি বলেন, “শীতকালে বৃষ্টিপাত থাকবে না। তাই বায়ুমান খারাপ হবে। কাজেই আমরা করোনাভাইরাসের আরেকদফা সংক্রমণ দেখতে পারি।”
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, “করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে মাস্ক পরা এবং শারীরিক দূরত্ব রক্ষা করা অপরিহার্য।”
নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ শাখার প্রধান ও যুগ্মসচিব এসএম আসাদুজ্জামান বেনারকে বলেন, “সরকারের ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ সিদ্ধান্ত আমরা জেনেছি। মঙ্গলবার থেকে মাস্ক পরিধান না করা সেবাপ্রার্থীদের আমরা ভোটার পরিচয়পত্র ও এর নাম সংশোধন সেবা দেবো না।”
“মাস্ক ছাড়া কোনো সেবা নয়” একটি ভালো সিদ্ধান্ত বলে বেনারকে জানান কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, “যদি আমরা এই সিদ্ধান্ত তৃণমূল পর্যায়ে কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে আরো ভালোভাবে করোনাভাইরাস মোকাবিলা করতে পারব।”
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মতিঝিলের এস. আর ট্রেডিংয়ে কর্মরত কর্মকর্তা অলোক সরকার বেনারকে বলেন, “করোনাভাইরাসের ব্যাপারে মানুষের ভয় কেটে গেছে। অধিকাংশ মানুষ মনে করে করোনাভাইরাস দুর্বল হয়ে গেছে। তাই সবাই মাস্ক না পরে ফ্রি-স্টাইলে চলছে।”
তিনি বলেন, “আসলে করোনাভাইরাস চলে যায়নি অথবা দুর্বলও হয়নি। আসছে শীতের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যু দুই-ই বাড়তে পারে। তাই আমি সরকারের মাস্ক না পরলে সেবা নয়—এমন সিদ্ধান্ত সমর্থন করি।”
সংক্রমণ ৪ লাখ ছাড়িয়েছে
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে ৮ মার্চ। এ রোগে বাংলাদেশে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৮ মার্চ।
সংক্রমণ মোকাবেলায় ২৫ মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। তবে, অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে ৩১ মে থেকে অফিস–আদালত খুলে দেওয়া হয়। এরপর থেকে ধীরে ধীরে মাস্ক ব্যবহার কমে এসেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন চার লাখ ২৫১ জন, মৃত্যু হয়েছে পাঁচ হাজার ৮১৮ জনের।
এদিকে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলোতে এ পর্যন্ত ৩১০ জন রোহিঙ্গা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে সোমবার বেনারকে জানান অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও পূনর্বাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা।
তিনি জানান, এ পর্যন্ত নয়জন শরণার্থী মারা গেছেন করোনাভাইরাসে।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন চার কোটি ৩৩ লাখ ৭৪ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন ১১ লাখ ৫৭ হাজারের বেশি।