ভারতে প্রস্তুত অক্সফোর্ডের করোনাভাইরাস টিকা আনতে বাংলাদেশের চুক্তি

কামরান রেজা চৌধুরী
2020.11.05
ঢাকা
201105_Corona_Vaccine-India-1000.JPG ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য এক রোগীর নমুনা সংগ্রহ করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। ৪ মে ২০২০।
[বেনারনিউজ]

ভারত থেকে করোনাভাইরাসের তিন কোটি ডোজ টিকা সংগ্রহের জন্য আগাম চুক্তি করেছে সরকার। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের উপস্থিতিতে ত্রিপক্ষীয় ওই চুক্তি সাক্ষর হয়।

করোনাভাইরাস টিকার সরবরাহের ব্যাপারে এটিই সরকারের সাথে প্রথম কোনো প্রতিষ্ঠানের চুক্তি স্বাক্ষর।

চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনিকার সাথে যৌথভাবে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের প্রস্তুত করা করোনাভাইরাস টিকা বাংলাদেশে বাজারজাত করবে দেশীয় ওষুধ কোম্পানি বেক্সিমকো। প্রতি ডোজের খরচ পড়বে পাঁচ ডলার (৪২৫ টাকা)।

সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেন, “ভ্যাকসিনটি নিরাপদ হবে মানবদেহের জন্য। এই ভ্যাকসিন ব্রিটেনে ট্রায়াল হয়েছে। অন্যান্য বিভিন্ন দেশেও ট্রায়াল হয়েছে এবং খুবই নিরাপদ প্রমাণিত হয়েছে।”

“এই ভ্যাকসিনটি আমরা তাড়াতাড়ি পাব। তিন কোটি ডোজ আমরা দেড় কোটি মানুষকে দিতে পারব, মানে প্রত্যেক ব্যাক্তির জন্য দুটি করে ডোজ লাগবে ২৮ দিন গ্যাপ দিয়ে। প্রতি মাসে তারা আমাদের ৫০ লাখ ডোজ দেওয়ার বিষয়টি আশ্বস্ত করেছে,” বেনারকে বলেন মন্ত্রী।

চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ যারা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামনের সারিতে আছেন, টিকা দেবার ক্ষেত্রে তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “পর্যায়ক্রমে দেশের সবাইকে টিকার আওতায় আনার ব্যবস্থা করা হবে।”

তবে টিকাটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদন করার পরই ভারত থেকে বাংলাদেশের আনা হবে জানিয়ে জাহিদ মালেক বেনারকে বলেন, করোনাভাইরাস টিকা পেতে বিশ্বের অন্যান্য টিকা উৎপাদনকারী কোম্পানির সাথেও যোগাযোগ করছে বাংলাদেশ।

বেক্সিমকো ফার্মার পক্ষে চিফ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজা, সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার পক্ষে অতিরিক্ত পরিচালক সন্দীপ মলয় এবং বাংলাদেশের পক্ষে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মোস্তফা কামাল সমঝোতা স্মারকে নিজ নিজ পক্ষে সই করেন।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই করোনাভাইরাস টিকা এখন পরীক্ষামূলক প্রয়োগের শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন সেই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। ডিসেম্বর নাগাদ চূড়ান্ত ফলাফল জানা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কবে নাগাদ টিকাটি আসবে সেটি সুনির্দিষ্ট করে বলা না গেলেও বলা হচ্ছে আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে এই টিকা বাজারে আসবে।

করোনাভাইরাসের টিকা পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের আগাম চুক্তিকে “আশাব্যঞ্জক” হিসেবে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “সবাই যেন টিকা পায় সে ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে। কারণ সবার পক্ষে দশ ডলার দিয়ে টিকা কেনা সম্ভব হবে না।”

চীনা টিকার ট্রায়াল অনিশ্চিত

বাংলাদেশে এখনও কোনো করোনাভাইরাসের টিকার পরীক্ষা করা হয়নি। এ বছর ‍মার্চের দিকে করোনাভাইরাসের তৃতীয় ও শেষ ধাপের ট্রায়াল পরিচালনা করতে বাংলাদেশ সরকারের কাছে আবেদন করে চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাক। এ ব্যাপারে ঢাকাস্থ আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইসিডিডিআর,বি) সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করে তারা।

গত ১৮ জুলাই টিকাটি পরীক্ষার নীতিগত অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল। এর পর ২৭ আগস্ট টিকা পরীক্ষার অনুমতি দেয় সরকার।

তবে পরীক্ষা শুরুর আগে নিজেদের অর্থ সংকট ও সরকারের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হওয়ার কথা বলে বাংলাদেশের কাছে প্রায় ত্রিশ কোটি টাকা চায় সিনোভ্যাক।

অক্টোবরের মাঝামাঝি সরকারের পক্ষ থেকে এই অর্থ দিতে অস্বীকার করায় এখন পর্যন্ত সেই ট্রায়াল শুরু করেনি সিনোভ্যাক।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র তারিফুল ইসলাম খান বেনারকে বলেন, সিনোভ্যাকের ট্রায়াল শুরুর কোনো তারিখ এখনও নির্ধারিত হয়নি। এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে চাননি তিনি।

এদিকে ছাড়া বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদনে কাজ করে যাচ্ছে। তারা এখনও প্রথম পর্যায়ের ট্রায়াল শুরু করেনি। ইতোমধ্যে করোনাভাইরাস টিকা সরবরাহের জন্য নেপালের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে গ্লোব বায়োটেক।

চীনে গত বছর ডিসেম্বরে করোনাভাইরাস ধরা পড়লেও বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। এর দশ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে প্রথমবারের মতো এই রোগে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

সংক্রমণ ঠেকাতে ২৫ মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত দফায় দফায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। জুন-জুলাই মাসে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। এরপর থেকে আন্ত্রান্ত ও মৃত্যুর হার কমে আসতে থাকে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন চার লাখ ১৬ হাজার ছয় জন, মৃত্যু হয়েছে ছয় হাজার ২১ জনের।

বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় এক হাজার ৮৪২ রোগী করোনাভাইরাসে নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন।

এর আগের ৫৬ দিন করোনাভাইরাস সংক্রমণ কমতির দিকে ছিল। বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো আগের দিনের চেয়ে বেশি সংক্রমণ ধরা পড়ল। বুধবার সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ছিল এক হাজার ৫১৭ জন।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় দফা সংক্রমণের আশঙ্কা করছে সরকার। এই ঢেউ মোকাবিলার করতে ঘরের বাইরে সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরার সরকারি আদেশ দেয়া হয়েছে।

জারি করা হয়েছে ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’। তবে জনগণের মধ্যে মাস্ক ব্যবহারের প্রবণতা এখন পর্যন্ত বেশ কম।

যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন চার কোটি ৮৪ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন ১২ লাখ ২৯ হাজারের বেশি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।