বাংলাদেশে করোনা টিকার পরীক্ষা করছে না চীনা কোম্পানি সিনোভ্যাক
2020.11.13
ঢাকা

চীনা কোম্পানি সিনোভ্যাক বাংলাদেশে করোনাভাইরাস টিকার তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল করতে চায় না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তাঁর মতে, ট্রায়াল পরিচালনার জন্য সিনোভ্যাকের দাবি অনুযায়ী টাকা না দেয়ায় হয়তো তারা বাংলাদেশে ট্রায়াল করবে না।
ব্রিটিশ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার কাছ থেকে তিন কোটি করোনাভাইরাস টিকা কেনার জন্য বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মা ও ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়ার মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই সিনোভ্যাকের চলে যাবার সংবাদ দিলেন মন্ত্রী জাহিদ মালেক।
“করোনাভাইরাস টিকার তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল পরিচালনার জন্য আইসিডিডিআর,বি-র সাথে সিনোভ্যাকের চুক্তি রয়েছে। সিনোভ্যাক ট্রায়াল করতে চায় কি না তা জানতে আমরা আন্তর্জাতিক উদরাময় কেন্দ্রের (আইসিডিডিআরবি) সঙ্গে কথা বলেছি। এর কর্মকর্তারা আমাদের জানিয়েছেন যে সিনোভ্যাক চলে যেতে চায়,” বলেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আমরা তাদের বলেছি যে, এটা তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়। যদি তারা ট্রায়াল করতে চায় সেক্ষেত্রে তাদের সকল খরচ বহন করতে হবে। ট্রায়ালের জন্য আমরা কোনো টাকা দিতে পারব না। বিশ্বের কোনো দেশ টিকার ট্রায়াল পরিচালনার জন্য কোনো কোম্পানিকে টাকা দেয়নি।”
মন্ত্রী বলেন, “সম্ভবত তারা ট্রায়ালের জন্য যে টাকা দাবি করেছিল, তা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর জন্য তারা চলে যেতে চায়।”
এ বিষয়ে সিনোভ্যাক ও ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
আইসিডিডিআর,বি এর গণমাধ্যমে ব্যবস্থাপক একেএম তারিফুল ইসলাম খান শুক্রবার বেনারকে বলেন, সিনোভ্যাকের করোনাভাইরাস টিকার ট্রায়ালের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত অগ্রগতি নেই। তবে, সিনোভ্যাক চলে যাচ্ছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাব দিতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল মান্নান শুক্রবার বেনারকে বলেন, “করোনাভাইরাসের তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল পরিচালনার জন্য সিনোভ্যাকের টাকার দাবি আমরা প্রত্যাখান করেছি। এখন যদি তারা ট্রায়াল করতে চায় তাহলে তাদের আবার আমাদেরকে জানাতে হবে।”
সিনোভ্যাকই প্রথম কোম্পানি যারা বাংলাদেশে করোনাভাইরাস টিকার তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালের জন্য সরকারের অনুমতি চায় গত এপ্রিল মাসে। টিকাগুলোর প্রথম দুটি ট্রায়াল পরিচালিত হয় চীনে।
আইসিডিডিআর,বি-এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে তাদের মাধ্যমে বাংলাদেশে তৃতীয় ও শেষ ধাপের ট্রায়ালের অনুমতি চায় চীনা কোম্পানিটি।
গত ১৮ জুলাই টিকাটি পরীক্ষার নীতিগত অনুমতি দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল।
গত ২৭ আগস্ট সিনোভ্যাককে করোনাভাইরাস টিকার তৃতীয় ও শেষ ধাপের ট্রায়ালের অনুমতি দেয় সরকার।
সরকার অনুমতি দেয়ার পর ট্রায়াল পরিচালনার জন্য সরকারের কাছে প্রায় ত্রিশ কোটি টাকা টাকা চায় সিনোভ্যাক। অর্থ দাবির বিষয়ে সিনোভ্যাক জানায়, প্রতিষ্ঠানটির অর্থ সংকট ও বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হওয়ায় এই অর্থ চেয়েছে তারা।
তবে গত অক্টোবরে সেই দাবি নাকচ করে দেয় সরকার।
সিনোভ্যাকের পক্ষে বাংলাদেশে চার হাজার ২০০ স্বাস্থ্যকর্মীর ওপর ১৮ মাসব্যাপী এই ট্রায়াল পরিচালনার কথা ছিল।
জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন বেনারকে বলেন, “আমাদের সরকারি ও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী যে কোম্পানি ট্রায়াল পরিচালনা করবে, খরচ তাদের বহন করতে হবে। কোম্পানি সরকারের কাছে টাকা দাবি করতে পারে না। সিনোভ্যাকের টাকার দাবি করাটা সঠিক হয়নি।”
তিনি বলেন, “ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের টিকার ট্রায়াল পরিচালনা করছে সিনোভ্যাক। কিন্তু আমার জানা মতে, কোনো দেশই তাদের টাকা দিচ্ছে না।”
মুস্তাক আহমেদ বলেন, “সিনোভ্যাকের চলে যাওয়া ভালো খবর নয়। এখন করোনাভাইরাস টিকার জন্য আমাদের অন্য কোম্পানির কাছে যেতে হবে।”
গত বছর ডিসেম্বরে চীনের উহান নগরীতে করোনাভাইরাস ধরা পড়লেও ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হয়। ১৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে প্রথম রোগীর মৃত্যু ঘটে বলে নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
জুন-জুলাই মাসে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে। বর্তমানে করোনাভাইরাস সংক্রমণ কমতির দিকে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
তবে আগামী শীত মৌসুমে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে সরকার। ঘরের বাইরে সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন চার লাখ ২৮ হাজার ৯৬৫ জন, মৃত্যু হয়েছে ছয় হাজার ১৫৯ জনের।
এদিকে শরণার্থী শিবিরগুলোতে এ পর্যন্ত ৩৫১ জন রোহিঙ্গা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে বেনারকে জানান কক্সবাজার অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা।
তিনি জানান, এ পর্যন্ত ১০ জন শরণার্থী মারা গেছেন করোনাভাইরাসে।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ কোটি ৩১ লাখ ৬৬ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন ১৩ লাখ ১২ হাজারের বেশি।