প্রায় পাঁচ কোটি মানুষের করোনার টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করল বাংলাদেশ

জেসমিন পাপড়ি
2020.11.25
ঢাকা
201125_BD_Covid_vaccine_1000.jpg ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক রোগীর করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার জন্য তথ্য পুরণ করছেন একজন স্বাস্থ্যকর্মী। ২৩ নভেম্বর ২০২০।
[বেনারনিউজ]

নতুন প্রায় সাত কোটি টিকাসহ এখন পর্যন্ত দেশের প্রায় পাঁচ কোটি মানুষের জন্য করোনাভাইরাসের টিকা নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ।

আগামী বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক টিকা সরবরাহকারী সংস্থা গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইমুনাইজেশন (গ্যাভি) এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ছয় কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা পাবে বলে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

এর আগে আরো তিন কোটি টিকার জন্য ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সাথে চুক্তি হয়েছে বাংলাদেশের।

প্রতি ব্যক্তির জন্য দুই ডোজ হিসেবে এই নয় কোটি ৮০ লাখ টিকা নিতে পারবেন দেশের চার কোটি ৯০ লাখ মানুষ।

“সব মিলিয়ে দেশের ২৯ শতাংশের বেশি মানুষ টিকার আওতায় আসছে। প্রয়োজনে এই সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে,” বুধবার বেনারকে বলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মা, শিশু ও কৈশোর স্বাস্থ্য কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. শামসুল হক।

সরকারি হিসেবে, দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি ৫০ লাখ।

গ্যাভি–কোভেক্স ফ্যাসিলিটি বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের টিকা সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক উদ্যোগ বলে বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ সম্মেলনে জানান ডা. শামসুল হক।

তিনি বলেন, গ্যাভির টিকার প্রতিটি ডোজের দাম পড়বে ১ দশমিক ৬২ থেকে ২ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৩৮ থেকে ১৭০ টাকার সমান।

“প্রতিজন দুই ডোজ করে এই ভ্যাকসিন পাবেন,” বলেন ডা. শামসুল হক।

গ্যাভি’র সাথে যুক্ত যে ৯২টি দেশ এই টিকার সুযোগ পাচ্ছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি জানিয়ে তিনি বলেন, টিকাটি আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

“যে দেশ আগে জাতীয় ভ্যাকসিন বিতরণ পরিকল্পনা জমা দেবে, তারাই আগে গ্যাভির টিকা পাবে। গ্যাভির পরিকল্পনা জমা নেওয়ার প্রথম দিনেই আমরা যাতে পরিকল্পনা জমা দিতে পারি সে লক্ষ্যে কাজ চলছে,” জানান ডা. শামসুল হক।

গত ৪ জুন অনুষ্ঠিত গ্লোবাল ভ্যাকসিন সামিটে ‘কোভ্যাক্স’ ফ্যাসিলিটির মাধ্যমে পৃথিবীর সবাই যেন সমানভাবে টিকা পায় সে সিদ্ধান্ত হয়।

এর আগে নভেম্বরের শুরুতে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি করোনা ভাইরাসের তিন কোটি টিকা কিনতে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনিস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মার সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করে বাংলাদেশ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পাবার পর ডোজপ্রতি ৫ ডলার (৪২৫ টাকা) দামের সিরামের এই টিকা বাংলাদেশে আসবে। সেই টিকাটিও প্রতিজনকে দুটি করে নিতে হবে।

এর বাইরে করোনাভাইরাস টিকার জন্য জন্য চীনের সিনোভ্যাক ও রাশিয়ার স্পুৎনিকের সাথেও বাংলাদেশ যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে বলে জানান ডা. শামসুল হক।

চীনের সিনোভ্যাক বায়োটেক দ্বারা উদ্ভাবিত করোনভাইরাসের একটি টিকার চূড়ান্ত পর্যায়ের পরীক্ষা বাংলাদেশে করার কথা থাকলেও সেটি চূড়ান্ত রূপ নেয়নি। এই পরীক্ষার জন্য সিনোভ্যাক সহ-অর্থায়নের অনুরোধ করলে গত অক্টোবরে বাংলাদেশ তাতে অসম্মতি জানায়।

সরকারের সাথে করা চুক্তি অনুযায়ী, পরীক্ষার সমস্ত ব্যয় বহন করার পাশাপাশি বাংলাদেশকে বিনামূল্যে এক লাখ ১০ হাজার টিকা দেওয়ার কথা ছিল সিনোভ্যাকের।

শেষ পর্যন্ত সিনোভ্যাক তাঁদের টিকার পরীক্ষা বাংলাদেশে করবে কি না; এমন এক প্রশ্নের জবাবে “সে বিষয়ে আমি জানি না” মন্তব্য করে ডা. শামসুল হক বেনারকে বলেন, “তবে তাদের টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমতি পেলে আমরা যাতে সংগ্রহ করতে পারি, তাদের সাথে আমাদের সেই যোগোযোগ রয়েছে।”

সুষ্ঠু বিতরণ নিশ্চিতের দাবি

সরকারের পক্ষ থেকে করোনাভাইরাস টিকা সংগহের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে টিকার সুষ্ঠু বিতরণ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

করোনাভাইরাসের টিকাগুলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী বিতরণ করা বাংলাদেশের জন্য ‘বড়ো চ্যালেঞ্জ’ বলে মন্তব্য করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. এম এইচ চৌধুরী লেলিন।

“কারণ বাংলাদেশে যারা নানা ধরনের ক্ষমতা-কাঠামোর সাথে যুক্ত, তারা সবকিছু দ্রুত দখল করে নিতে চায়,” বেনারকে বলেন ডা. লেলিন।

তিনি বলেন, “টিকা জীবন-মৃত্যুর মতো ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত। আমরা আশা করব, এখানে ক্ষমতার প্রভাব দেখানোর ঘটনা না ঘটুক।”

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রসচিব আক্রান্ত

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ও পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে বলে বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায় পরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়।

তাঁরা দুজনই ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সম্মেলনে যোগদানের জন্য নাইজার সফরের প্রস্তুতি হিসেবে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করালে এই ফলাফল আসে বলে জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

এতে বলা হয়, তাঁরা দুজনেই চিকিৎসকদের পরামর্শে নাইজার সফর বাতিল করে নিজ নিজ বাসায় সঙ্গনিরোধে রয়েছেন এবং সুস্থ আছেন।

এদিকে বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরো দুই হাজার ১৫৬ জনের করোনা আক্রান্ত ও এই রোগে ৩৯ জনের মৃত্যুর সংবাদ জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন চার লাখ ৫৪ হাজার ১৪৬ জন, মৃত্যু হয়েছে ছয় হাজার ৪৮৭ জনের।

বুধবার পর্যন্ত কক্সবাজারে মোট ৩৫৩ জন রোহিঙ্গা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে বেনারকে জানান শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের প্রধান স্বাস্থ্য সমন্বয়কারী ডা. আবু তোহা এম আর এইচ ভূঁইয়া।

এই রোগে এখন পর্যন্ত নয় জন শরণার্থী মারা গেছেন বলেও জানান তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ছয় কোটি এক লাখ ৫৫ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন ১৪ লাখ ১৬ হাজারের বেশি।

প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন কক্সবাজার থেকে আবদুর রহমান।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।