আনিসুল হকসহ প্রথম আলোর পাঁচ কর্মীর মালামাল ক্রোকের আদেশ

কামরান রেজা চৌধুরী
2020.09.02
ঢাকা
200902_Property_Attachment-1000.JPG ঢাকার মহানগর মুখ্য হাকিম আদালতের সামনে পুলিশের পাহারা। ১৮ জুলাই ২০২০।
[বেনারনিউজ]

ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র নাইমুল আবরারের অবহেলাজনিত মৃত্যুর মামলায় শিশু–কিশোরদের মাসিক ম্যাগাজিন 'কিশোর আলো'র সম্পাদক আনিসুল হকসহ পাঁচজনের মালামাল ক্রোকের আদেশ দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত।

বুধবার মামলার শুনানি শেষে এই আদেশ দেন ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিম মোহাম্মদ জসিমের আদালত।

কিশোর আলো শীর্ষস্থানীয় বাংলা দৈনিক প্রথম আলো পরিবারের সঙ্গে যুক্ত একটি প্রকাশনা এবং আনিসুল হক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক।

বিবাদীপক্ষের আইনজীবী জানান, তাঁর মক্কেলরা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে আছেন। তারপরও মালামাল ক্রোকের এই আদেশ অস্বাভাবিক। যদিও বাদিপক্ষের আইনজীবী বলেন, আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাননি। তাই মালামাল ক্রোকের আদেশ এসেছে।

নাইমুল আবরার মৃত্যুর মামলায় অভিযুক্ত প্রথম আলোর সম্পাদকসহ আরও নয় আসামির বিরুদ্ধে এ বছর ১৬ জানুয়ারি চিফ মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেটের কোর্ট গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে জানিয়ে প্রথম আলোর আইনজীবী প্রশান্ত কর্মকার বুধবার বেনারকে বলেন, “এই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ১৯ জানুয়ারি উচ্চ আদালতে যাই।”

শুনানি শেষে আদালত ২০ জানুয়ারি প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানকে নিম্ন আদালতে আত্নসমর্পন করতে নির্দেশ দেয়। সে অনুযায়ী তিনি নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন বলে জানান প্রশান্ত।

তিনি বলেন, কিশোর আলো সম্পাদক আনিসুল হকসহ অভিযুক্ত পাঁচ আসামিকে মামলার চার্জ গঠনের আগ পর্যন্ত গ্রেপ্তার অথবা হয়রানি না করতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত।

“এই আদেশ অনুযায়ী ওই পাঁচজন জামিনে আছেন। তাঁরা পলাতক নন,” মন্তব্য করে প্রশান্ত বলেন, “কিন্তু আদালতে বাদীপক্ষ থেকে তাঁদেরকে পলাতক বলে দাবি করা হয়।”

“এই অবস্থায় মালামাল ক্রোকের আদেশের কোনো কারণ নেই,” বলেন ওই আইনজীবী।

তিনি জানান, “আমি বলেছি, কোভিডের কারণে তাঁরা আদালতে আসেননি। চার্জ গঠনের তারিখ ঠিক হলে আমি তাঁদের সাথে যোগাযোগ করে আদালতে হাজির করব। কিন্তু আদালত তা গ্রহণ করেননি,” বলেন প্রশান্ত কর্মকার।

বৃহস্পতিবার অভিযুক্তদের জামিনের জন্য আবেদন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “আশা করি তাঁদের মালামাল ক্রোকের আদেশ প্রত্যাহার হবে।”

তবে ওই পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার অথবা হয়রানি না করতে উচ্চ আদালত নির্দেশ দিলেও “তাঁরা জামিনে ছিলেন না,” বলে বেনারের কাছে দাবি করেন বাদীপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক।

তিনি বলেন, “নিম্ন আদালতের ওই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বহাল আছে। তাঁরা আজ আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। সেকারণে আদালত তাঁদের মালামাল ক্রোকের নির্দেশ দেয়।”

যাঁদের মালামাল ক্রোকের আদেশ দেয়া হয়েছে তাঁরা হলেন; কিশোর আলো সম্পাদক ও সাহিত্যিক আনিসুল হক, প্রথম আলোর হেড অব ইভেন্ট অ্যান্ড অ্যাকটিভেশন কবির বকুল, নির্বাহী শুভাশীষ প্রামাণিক, নির্বাহী শাহপরাণ তুষার, কিশোর আলোর জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক মহিতুল আলম।

গত বছরের ১ নভেম্বর ঢাকার রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে কিশোরদের ম্যাগাজিন কিশোর আলোর বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে অংশ নেয় ওই কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র নাইমুল আবরার। অনুষ্ঠান চলাকালে মঞ্চের পেছনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আবরার। অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি বিদ্যুৎ-সংযোগ দেয়, সেই তারে বিদ্যুৎ​স্পৃষ্ট হয়েছিল আবরার।

এই ঘটনার বিচার চেয়ে ৬ নভেম্বর মোহাম্মপুর থানায় মামলা দায়ের করেন আবরারের বাবা মজিবুর রহমান। দণ্ডবিধির ৩০৪ (ক) ধারা অনুসারে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদকসহ মোট ১০ জনের বিরুদ্ধে।

আদালত ওইদিন নালিশি মামলাটি আমলে নিয়ে মোহাম্মদপুর থানাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। প্রতিবেদন পেয়ে ১৬ নভেম্বর প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ও কিশোর আলো সম্পাদক আনিসুল হকসহ ১০ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।

আদালতে অভিযোগ প্রমাণিত হলে, আসামিদের সর্বোচ্চ পাঁচ বছর জেল অথবা জরিমানা অথবা উভয় সাজা হতে পারে।

“প্রথম আলোর সাংবাদিক ও কর্মীদের মালামাল ক্রোকের যে আদেশ এসেছে এমনটি সচরাচর দেখা যায় না,” মন্তব্য করে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদিন বেনারকে বলেন, “আইন অনুযায়ী, উচ্চ আদালতের কোনো আদেশ থাকলে নিম্ন আদালত সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারে না।”

তবে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী চার্জ গঠনের সময় সকল আসামির আদালতে উপস্থিত থাকা জরুরি বলে বেনারকে জানান নিম্ন আদালতের আইনজীবী জীবানানন্দ জয়ন্ত।

তিনি বলেন, “এখন আসামিদের উচিত যে আদালত মালামাল ক্রোকের আদেশ দিয়েছে সেই আদালতে জামিন আবেদন করা। আদালত আসামিদের উপস্থিতি দেখলে মালামাল ক্রোকের এই আদেশের আর কার্যকারিতা থাকার কথা নয়।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।