সময়, নম্বর এবং বিষয় কমিয়ে নভেম্বরে এসএসসি, ডিসেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষা

কামরান রেজা চৌধুরী
2021.07.15
ঢাকা
সময়, নম্বর এবং বিষয় কমিয়ে নভেম্বরে এসএসসি, ডিসেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ছবি। ঢাকা, এপ্রিল ০১, ২০১২
বেনার নিউজ

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি উন্নতির দিকে গেলে স্বাস্থ্যবিধি​ মেনে সময়, নম্বর ও বিষয় কমিয়ে এ বছর নভেম্বর মাসে এসএসসি এবং ডিসেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

বৃহস্পতিবার এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও জানান, তবে আগের মতো দীর্ঘ তিন ঘন্টা ধরে প্রত্যেক বিষয়ে পরীক্ষা হবে না। দেড় ঘন্টায় পরীক্ষা নেওয়া হবে।

সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিভাগভিত্তিকি তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে (যেমন, বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান) পরীক্ষা হবে, প্রত্যেক বিষয়ে নম্বর থাকবে ৫০। প্রাপ্ত নম্বরকে ১০০ নম্বরের মধ্যে বিবেচনা করে ফলাফল নির্ধারণ করা হবে।

এই দুটি​ গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় প্রায় ২৮ লাখ ছাত্রছাত্রী অংশ নেওয়ার কথা। তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হলেও এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বাকি বিষয়গুলোর সিলেবাস শেষ করতে অনলাইনে এই মাস থেকেই সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অ্যাসাইনমেন্ট দেবে। শিক্ষার্থীরা সেই অ্যাসাইনমেন্ট সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জমা দেবে।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি খারাপ হলে অ্যাসাইনমেন্ট এবং পূর্ববর্তী বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারিত হবে বলে জানান মন্ত্রী।

দীর্ঘ ১৬ মাস পর প্রথমবারের মতো সরকারের এমন ঘোষণায় কিছুটা হলেও আশান্বিত হয়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। কারণ তাঁরা মনে করেন অনলাইনে লেখাপড়া হয় না।

সে কারণে স্বল্প পরিসরে হলেও শারিরীকভাবে উপস্থিত হয়ে পরীক্ষা নেয়া হবে।

গত বছর ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ার ​পর ১৭ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটিতে রয়েছে। এখনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার।

গত বছর এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না হওয়ায় সরকার আগের দুটি পাবলিক পরীক্ষার ভিত্তিতে ফল ঘোষণা করে। এমন সিদ্ধান্তের ফলে সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার।

চলমান দীর্ঘ ছুটির ফলে দেশের প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিলেও বাংলাদেশে তা সম্ভব হয়নি।

সরকারের এমন সিদ্ধান্তের বিপরীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ ও ইউনেস্কো।

এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিলে শিক্ষার্থীরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। তিনি জানান, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতি না হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব নাও হতে পারে।

ঢাকার মণিপুরী স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র তৈয়ব মো. রিদওয়ান বেনারকে বলেন, “সরকার পরীক্ষা নেয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটি একটি ভালো সিদ্ধান্ত বলে আমি মনে করি। কারণ পরীক্ষা ছাড়া পাশ ভালো নয়।”

তিনি বলেন, “গত ১৬ মাস কোনও লেখাপড়া হয়নি। অনেকেই ঝরে পড়েছে। অনেকেই অনলাইনসহ বিভিন্ন আসক্তিতে পড়ে গেছে। অনেকেই অনলাইনে পড়া বাদ দিয়ে গেম খেলে। সুতরাং, অনলাইনে শিক্ষা খুব ভালো বলা যাবে না।”

রিদওয়ান বলেন, “অনলাইনে শিক্ষা ব্যয় বহুল। অনেকেরই এই পদ্ধতিটি কাজে লাগানোর সামর্থ্য নেই। সুতরাং, যাদের সামর্থ্য নেই তাঁরা তো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”

সিভিল অ্যাভিয়েশন স্কুলের দশম শ্রেণীর বাণিজ্য বিভাগের ছাত্রী সামিয়া ইসলাম অর্থি বেনারকে বলেন, “আমাদের এসএসসি পরীক্ষা গত ফেব্রুয়ারিতে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরীক্ষা দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে আমরা আমাদের মতো প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। আমরা আজকে জানলাম নভেম্বরে পরীক্ষা নেয়া হবে। আসলে আমরা পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছি।”

তিনি বলেন, “করোনাভাইরাস পরিস্থিতি খারাপ হলে পরীক্ষার ফলাফল নির্ধারণ করতে আমাদের দেয়া অ্যাসাইনমেন্ট খাতা কাজে লাগবে। আমাদের যে অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হবে তার উত্তর অনেকেই গাইড বই দেখে লিখবে। যারা কষ্ট করে লেখাপড়া করবে তারা তো আর তাদের মতো হুবহু লিখতে পারবে না। ফলে যারা লেখাপড়া করবে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।”

ফারাত ফাহমিন এর পিতা নাইম রহমান বেনারকে বলেন, সত্য কথা হলো অনেক নামিদামী স্কুলেও শ্রেণিকক্ষে ভালো লেখাপড়া হয় না। তবে পরীক্ষা নেয়া হবে এমন সিদ্ধান্ত জানানোর মাধ্যমে সরকার বলে দিয়েছে যে, অটোপাশ হবে না। সুতরাং, নিজ দায়িত্বে তাদের লেখাপড়া করতে হবে।”

নাইম রহমান বলেন, “তবে সব কিছুর পরও সেই প্রবাদের মতো—নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো।”

শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বেনারকে বলেন, “গত ফেব্রুয়ারিতে যখন সংক্রমণ কম ছিলো, তখন সরকার এসএসসি পরীক্ষা নিতে পারত। তবে সরকার চেয়েছিল সংক্রমণ আরও কমলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে এবং পরীক্ষা নেবে। তবে মার্চ থেকেই সংক্রমণ পুনরায় বাড়তে থাকে।”

তিনি বলেন, “গত ১৬ মাসে আমাদের লাখ লাখ শিক্ষার্থীর অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। অনেক ছাত্রছাত্রী লেখাপড়ায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। তবে সীমিত পরিসরে হলেও পরীক্ষা নেয়া হবে এমন সিদ্ধান্তে অনেকেই লেখাপড়ার টেবিলে ফিরে আসবে।”

অধ্যাপক ফজলুল হক বলেন, “তবে, আসলে সরকারকে দোষারোপ করে লাভ নেই। এখানে কারও কিছু করার নেই। মহামারীর কাছে সবাই অসহায়। আমরা সবাই বুঝতে পারছি অনলাইন ভালো নয়। কিন্তু কেউ এর বিকল্প বলতে পারছে না।”

তিনি বলেন, “যদি নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে সংক্রমণ বেড়ে যায় তখন সমস্যা আরও বাড়বে। শিক্ষার্থীদের হতাশা বাড়বে। আমরা আশা রাখি যেন সেই সময় সংক্রমণ কমে আসে। সরকার পরীক্ষা নিতে পারে।”

দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার মাদিলাহাট কলেজের মনোবিজ্ঞানের প্রভাষক সৈয়দ তহিদুল আলম বেনারকে বলেন, “আসলে সরকারের কিছু করার নেই। গত বছর অটোপাশের কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছে সরকার। তাই সরকার শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দিল যে, অটোপাশ নয়।

“যে কোনও প্রকারে হোক একটি পরীক্ষা হবে এবং সেজন্য পড়তে হবে। তিনটি বিষয়ের ওপর পরীক্ষা নিয়ে প্রকৃত মেধা যাচাই সম্ভব নয়, এটা সত্য কিন্তু এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের একটি নিয়মের মধ্যে আনা কিছুটা হলেও সম্ভব হবে,” ​যোগ করেন তহিদুল আলম।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।