জাপানের উপহারের টিকায় অপেক্ষমান বাংলাদেশিরা পাবে দ্বিতীয় ডোজ

কামরান রেজা চৌধুরী
2021.07.23
ঢাকা
জাপানের উপহারের টিকায় অপেক্ষমান বাংলাদেশিরা পাবে দ্বিতীয় ডোজ
ফোকাস বাংলা।

করোনাভাইরাস মহামারী ঠেকাতে সরকার টিকা নেয়ার বয়স কমিয়ে ১৮ বছর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে শুক্রবার বেনারকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বর্তমানে টিকা নেয়ার সর্বনিম্ন বয়স ৩০ বছর।

টিকা সংগ্রহে অনিশ্চয়তা কেটে যাওয়া এবং করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

শনিবার জাপান থেকে উপহার হিসেবে প্রায় তিন লাখ ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম চালান বাংলাদেশে আসছে বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, এই সপ্তাহের মধ্যে টিকার বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্সের আওতায় জাপানের দেওয়া ২ লাখ ৪৫ হাজার ২০০ ডোজ টিকা ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আসবে। এটা দিয়ে দ্বিতীয় ডোজের জন্য অপেক্ষমান ১৫ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া যাবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “এই মহামারি ঠেকাতে টিকার কোনও বিকল্প নেই। সে কারণে আমরা টিকা নেয়ার বয়স ১৮ বছরে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দুই-এক দিনের মধ্যে আমরা এ ব্যাপারে আদেশ জারি করবো।”

মন্ত্রী বলেন, “প্রথমে ফ্রন্টলাইনার তথা ডাক্তার, নার্স, পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। এরপর ক্রমান্বয়ে অন্যদের টিকা দেয়া হবে।”

“বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, কোনও দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৮০ ভাগ মানুষকে টিকা দেয়া গেলে বাকিদের হার্ড ইমিউনিটি এমনিতেই হয়ে যায়। সেই হিসাবে আমরা ১৪ কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি,” জানান মন্ত্রী।

ভারত থেকে পাঠানো অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড টিকা দিয়ে ২৭ জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস টিকা কার্যক্রম শুরু করে সরকার। তবে টিকার অভাবে সেই টিকা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস. এম. আলমগীর বেনারকে বলেন, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজের টিকা নিয়ে যাঁরা দ্বিতীয় ডোজের জন্য অপেক্ষা করছেন, তাঁদের আমরা জাপান থেকে আসা টিকা দিয়ে দ্বিতীয় ডোজ দিতে পারব।”

বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, জুলাই মাসের শেষে অথবা আগস্টে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেয়া হলে কার্যকারিতার কোন সমস্যা হবে না।

ড. আলমগীর বলেন, ২৭ জানুয়ারি থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ৫৮ লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন। ৮ এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪৩ লাখ মানুষ দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছেন। অর্থাৎ প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ মানুষ দ্বিতীয় ডোজের জন্য অপেক্ষা করছেন।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষক সুজাউল খান বেনারকে বলেন, “আমি অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার প্রথম ডোজ গ্রহন করেছি। সংশয়ে ছিলাম দ্বিতীয় ডোজ টিকা মিলবে কিনা। কারণ আমরা তো ভারত থেকে টিকা পাচ্ছি না।”

তিনি বলেন, “তবে, জাপান থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা আসছে, এটি সুখবর। এই টিকা দিয়ে আমার মতো যাঁরা দ্বিতীয় ডোজের জন্য অপেক্ষা করছেন তাঁরা টিকা নিয়ে কোর্স পূর্ণ করতে পারবেন।”

গত ২৫ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়া প্রায় বন্ধ রয়েছে। এর কারণ, জুন মাসের মধ্যে তিন কোটি টিকা প্রদানে চুক্তি করার পর বাংলাদেশে টিকা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট।

জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে মাত্র ৭০ লাখ টিকা সরবরাহ করেছে সেরাম ইন্সটিটিউট। এ ছাড়া ৩১ লাখ টিকা উপহার হিসাবে পাঠায় ভারত সরকার। এরপর এখন পর্যন্ত কোনও টিকা সরবরাহ করেনি সেরাম ইন্সটিটিউট।

এই প্রেক্ষাপটে ভারতের বিকল্প হিসাবে চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সিনোফার্মের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করে সরকার।

জাহিদ মালেক জানান, সেই চুক্তির আওতায় আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বাংলাদেশকে তিন কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করবে সিনোফার্ম।

ইতোমধ্যে সিনোফার্মের টিকা দিয়ে বাংলাদেশে আবার টিকা কার্যক্রম চলছে।

এ ছাড়া, কোভ্যাক্স উদ্যোগের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক লাখের কিছু বেশি ফাইজার-বায়ো-এনটেক টিকা এবং মডার্নার ২৫ লাখ টিকা বাংলাদেশে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাওয়া টিকা মূলত ঢাকা শহরে দেয়া হচ্ছে এবং সিনোফার্মের টিকা ঢাকার বাইরে ব্যবহার করা হচ্ছে।

টিকা কার্যক্রম চলমান থাকার মধ্যেই এ বছর মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। সেই ধারা এখনও চলছে।

ফেব্রুয়ারি মাসে যেখানে শনাক্তের হার ছিল শতকরা তিন ভাগের কম সেই হার শুক্রবার পর্যন্ত ছিল ৩১ শতাংশের বেশি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শুক্রবারের বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ছয় হাজার ৩৬৪ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১৬৬ জন।

এই নিয়ে গত বছর ৮ মার্চ থেকে বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ মানুষ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন এবং প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ১৮ হাজার ৮৫১ জন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক প্রধান ড. নজরুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “ঈদের পরে করোনাভাইরাস সংক্রমণ আরও বৃদ্ধি পাবে। টিকা কার্যক্রম এবং কঠোর লকডাউন ছাড়া এই সংক্রমণ কমবে না।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।