তিনটি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত পাঁচ
2018.04.17
ঢাকা

বাংলাদেশে একই দিনে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও পুলিশের সাথে তিনটি আলাদা কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মঙ্গলবার হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন পাঁচ ব্যক্তি। এর মধ্যে একজন আগে থেকেই ছিলেন পুলিশ হেফাজতে।
“আমরা সব সময়ই এ ব্যাপারে নিন্দা জানিয়ে আসছি। একটা রাষ্ট্রে প্রতিদিন এত বন্দুকযুদ্ধ হতে পারে না। আমরা কোনো যুদ্ধ বা জরুরি অবস্থায় নেই,” উদ্বেগ প্রকাশ করে বেনারকে বলেন মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা আরও বলেন, “এ বিষয়টা নিয়ে আমরা আগেও প্রশ্ন তুলেছি, এখনো তুলছি। আশা করি এই ধরনের চর্চা শিগগিরই বন্ধ হবে।”
ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) আবু সাঈদ আল মামুন বেনারকে বলেন “মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে উপজেলার কেলিয়া এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে র্যাবের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তিন ডাকাত নিহত হয়েছে।”
“নিহত ব্যক্তিদের নাম–পরিচয় জানা যায়নি। তাদের বয়স ৩৫ থেকে ৪০ বছর। ঘটনাস্থল থেকে পিস্তল-চাপাতিসহ বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে,” যোগ করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
এর আগে ভোররাতে পৃথক ‘বন্দুকযুদ্ধে' রাজবাড়ী সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়নে ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় দুজন নিহত হন।
রাজবাড়ী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তা কামাল ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে বলেন, “সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়নের জৌকুড়া ফেরিঘাট এলাকায় তাঁদের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সাইদুল (৩২) নামের এক চরমপন্থী নেতা নিহত হয়েছেন।”
নিহত সাইদুল পাবনা জেলা সদরের আটঘাটিয়া গ্রামের তেনুর ছেলে।
“এই 'বন্দুকযুদ্ধ' চলাকালে আহত হয়েছেন রাজবাড়ী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাকিব খান, জেলা গোয়েন্দা শাখার পুলিশ পরিদর্শক জিয়ারুল ইসলাম ও পুলিশ কনস্টেবল পঙ্কজ মণ্ডল,” উল্লেখ করেন তিনি।
একই সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় বাইপাস রেলগেট এলাকায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন খোকন সূত্রধর (৩০) নামের এক যুবক।
এ ঘটনায় আখাউড়া থানা-পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) নুরুল ইসলাম, কামাল হোসেন ও কনস্টেবল শামীম আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশের দাবি, খোকন তাঁর সহযোগীদের গুলিতে মারা গেছেন। তিনি জেলার বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল গ্রামের রমেশ সূত্রধরের ছেলে।
আখাউড়া থানার ওসি মোশাররফ হোসেন তরফদার সাংবাদিকদের বলেন, “সোমবার দুপুরে একটি বেসরকারি কোম্পানির প্রতিনিধিকে ছুরিকাঘাত করে সাড়ে ১৮ লাখ টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় জনতা খোকনকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করে।”
“পরে তার দেওয়া তথ্যমতে মঙ্গলবার ভোর রাতে তাকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে গেলে বাইপাস রেলগেট এলাকায় তার সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি নিক্ষেপ করে,” বলেন তিনি।
মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বেনারকে বলেন, “রাষ্ট্রীয় হেফাজতে থাকা কেউ কী করে আবার এমন কিছু করতে পারে যাতে বন্দুকযুদ্ধের প্রয়োজন হতে পারে।”
এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মাকসুদুল ইসলাম লিখন (৩০) নামের এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ভোর পৌনে ৫টায় ফতুল্লার পাগলা নিশ্চিন্তপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুর কাদের গণমাধ্যমকে জানান, “পাগলার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে পাঁচ-ছয় জনের একদল সন্ত্রাসী। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়ে।”
এর আগে গত পয়লা এপ্রিল কক্সবাজারের চকরিয়ায় চার বছরের শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় আসামি রহিম উদ্দিন (২০) র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে বলে দাবি করে র্যাব।
তার কিছুদিন আগে গত ২১ ফেব্রুয়ারি চকরিয়ায় আরেক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আনোয়ার হোসেন ওরফে আনু মিয়া (৫৯) নামে আরেক শিশু ধর্ষণ মামলার এক আসামি নিহত হয়েছে।
সুলতানা কামাল বলেন, “এটাকে আমি শাস্তি বলতে রাজি নই। এসব তেমন ব্যাপার না। এগুলো বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, যা অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত।”
“আমাদের সংবিধান অনুযায়ী কোনো অপরাধীর সাথে এমন আচরণ করার সুযোগ রাষ্ট্রের নেই,” যোগ করেন তিনি।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর বাংলাদেশে এ জাতীয় ‘ক্রসফায়ার, বন্দুকযুদ্ধ ও গুলিবিনিময়ে’ নিহত হন ১২৬ জন।