নিউ ইয়র্কে দুই বাংলাদেশি হত্যাকারীর যাবজ্জীবন
2018.06.07
ঢাকা

প্রায় দু বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে দিনের বেলা প্রকাশ্যে দুই বাংলাদেশি খুনের মামলায় অস্কার মোরেল নামে এক ব্যক্তির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট দুপুরে নিউ ইয়র্কের ওজন পার্ক এলাকায় বাংলাদেশি ইমাম আলাউদ্দিন আখঞ্জি (৫৫) ও তাঁর সহযোগী তারা উদ্দিনকে (৬৪) গুলি করে হত্যা করে অস্কার মোরেল (৩৭)।
অস্কার মোরেল এর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ওই জোড়া খুনের দায়ে বুধবার নিউ ইয়র্কের কুইন্স কাউন্টি কোর্টের বিচারক গ্রেগরি ল্যাসাক যাবজ্জীবনের এই রায় দেন বলে এক বিবৃতিতে জানান কুইন্স ডিসট্রিক্ট অ্যাটর্নি রিচার্ড ব্রাউন।
রায়ে বিচারক ঘটনাটিকে ‘ঠাণ্ডা মাথার হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে উল্লেখ করেন বলেও জানান ব্রাউন।
ঘটনার দিন স্থানীয় আল ফোরকান জামে মসজিদের ইমাম আলাউদ্দিন আখঞ্জি ও তাঁর সহযোগী তারা উদ্দিন জোহরের নামাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন।
দুপুর দুইটার কিছু আগে তাঁরা ওজন পার্কের ৮০ নম্বর স্ট্রিট ও লিবার্টি অ্যাভিনিউয়ের কাছে পৌঁছালে আকস্মিকভাবে স্প্যানিশ বংশোদ্ভূত অস্কার মোরেল তাঁদের ওপর পেছন দিক থেকে গুলি চালায়।
ঘটনার পর আহত দুজনকে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তারা তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনাস্থল ও আশপাশের সিটিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে পুলিশ ব্রুকলিন থেকে অস্কারকে গ্রেপ্তার এবং তার বাসা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করে।
“সমস্ত প্রমাণ যাচাই করে বিচারক অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। আজ কোর্ট তাঁকে আইন মোতাবেক সর্বোচ্চ সাজা দিয়েছে- কোনো ধরনের প্যারোলের সুবিধা ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড,” বিবৃতিতে বলেন ব্রাউন।
তিনি বলেন, “ব্রুকলিনের একজন বাসিন্দা হয়ে কাপুরুষের মতো এই কাজ শুধু দুজন সম্মানীত মানুষের জীবন কেড়ে নেয়নি, বরং আমাদের মুসলিম সম্প্রদায়ের মনে গভীর ক্ষত তৈরি করেছে।”
গত মার্চে কুইন্স সুপ্রিম কোর্টে তিন সপ্তাহের শুনানি শেষে জোড়া খুনের জন্য অস্কারকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় বলে বিবৃতিতে জানান ব্রাউন।
তবে অস্কার কেন খুন করল তার কারণ কিংবা উদ্দেশ্য অপরিস্কার রয়ে গেছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি।
এদিকে ইমাম ও তাঁর সহযোগী হত্যা মামলার রায়কে স্বাগত জানিয়েছে মুসলিমদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশনস (কাইর)।
এক বিবৃতিতে এই জোড়া খুনকে যুক্তরাষ্ট্রের “দেশজোড়া মুসলিম বিরোধী বিদ্বেষজনিত অপরাধ” হিসেবে উল্লেখ করেন কাইর এর নিউ ইয়র্ক কার্যালয়ের লিগ্যাল ডিরেক্টর ফক্স চ্যান।
তিনি বলেন, “দুঃখজনকভাবে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা খুব পরিষ্কার: প্রার্থনা শেষে বাড়ি ফেরার পথে নিউ ইয়র্ক নগরের কেন্দ্রে দুইজন মুসলিম প্রতিবেশীর ওপর দিনে দুপুরে গুলি করা হয়েছে।”
“আজ আদালত দেখিয়েছে যে আমাদের মুসলিম প্রতিবেশীরা আইন দ্বারা সম্পূর্ণ সুরক্ষিত। এটা প্রমাণিত হয়েছে যে তাঁদের ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটলে দুষ্কৃতকারীরা আইনের হাত থেকে রেহাই পাবে না,” বলেন ফক্স চ্যান।
নিহত আলাউদ্দিন আখঞ্জির বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ ও তারা উদ্দিনের বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ বলে হত্যাকাণ্ডের পর গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন স্থানীয় বাংলাদেশি প্রবাসীরা। তাঁরা উভয়েই দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা ছিলেন।